আগামীকালের 'টুমরো'

অ্যানিমেশন সিনেমা টুমরো
অ্যানিমেশন সিনেমা টুমরো

আগামীকাল শুক্রবার টিভিতে কী দেখবেন? অনেক কিছুর ভিড়ে দীপ্ত টিভিতে সন্ধ্যা সাতটায় টুমরোও দেখে ফেলতে পারেন। টুমরো একটি অ্যানিমেশন সিনেমা, পুরোদস্তুর ‘মেড ইন বাংলাদেশ’। ফলে এতটুকু হলফ করে বলতে পারি, সিনেমাটি দেখে আপনার গর্ব হবে। কপালে চিন্তার ভাঁজও পড়তে বাধ্য। কেননা টুমরোর বিষয়টি বিশ্বের বড় এক শঙ্কা। জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে বানানো এ সিনেমার উদ্বোধনী প্রদর্শনী হয়েছে ২৩ নভেম্বর। আগামীকাল মুক্তি পাবে টেলিভিশনে।  ইউটিউবে শিগগির আসছে।

টুমরোর গল্প লিখেছেন কাজী জাহিন হাসান ও কাজী জিশান হাসান। প্রযোজকও তাঁরা। চিত্রনাট্য করেছেন আহমেদ খান ও নাসিমুল হাসান। পরিচালক মোহাম্মদ শিহাব উদ্দীনের ভাষায়, ‘অ্যানিমেটর জীবনে টুমরোই আমার সবচেয়ে বড় কাজ।’

আরেকটি আন্দাজ করে ফেলি। আন্দাজটি হলো, টুমরো দেখে আপনি বিস্মিতও হবেন। তবে বিস্মিত হবেন যদি আপনি সাম্প্রতিক সময়ের আলোচিত সুইডিশ কিশোরী গ্রেটা থুনবার্গকে চেনেন। চিনলে তো হলোই। না চিনলে বলে রাখা ভালো, গ্রেটা আলোচনায় আসে ২০১৮ সালের আগস্ট মাস থেকে। ক্লাস বর্জন করে বিশ্বের নেতাদের জলবায়ু পরিবর্তনের কথা মনে করিয়ে দিতে সে অবস্থান নেয় সুইডেনের পার্লামেন্টের বাইরে। পরে পরিবেশ রক্ষার এ উদ্যোগে গ্রেটার সঙ্গে শামিল হয় বিশ্বের লাখো শিশু–কিশোর। আন্দোলনের সে আগুন ছড়িয়ে পড়ে সবখানে। গ্রেটার ‘ফ্রাইডেজ ফর ফিউচার’ আন্দোলন বিশ্বনেতাদের নড়েচড়ে বসতে বাধ্য করেছে। ওর হাতে শান্তিতে নোবেল উঠি উঠি করেও ওঠেনি। গ্রেটা প্রসঙ্গ উঠল টুমরোর কাহিনির কারণে। সিনেমাটির প্রধান চরিত্র গ্রেটার মতোই কিশোর বয়সী রাতুল। বাবার সঙ্গে থাকে সেন্ট মার্টিনস দ্বীপে। পরিবেশ নিয়ে অতটা মাথাব্যথা নেই। তবে ওর বাবা পরিবেশ নিয়ে বেজায় সচেতন। রাতুলকে জলবায়ু পরিবর্তনের ভয়াবহতা বোঝান তিনি। এক রাতে রাতুল বাতাসের বুড়োকে স্বপ্নে দেখে। বাতাসের বুড়ো রাতুলকে মেরু অঞ্চলে নিয়ে যায়। বৈশ্বিক উষ্ণতার প্রভাবে অতিকায় বরফের চাই ভেঙে পড়ে। বাংলাদেশসহ আরও অনেক দেশ তলিয়ে যেতে দেখে রাতুলের চোখ খুলে যায়। দায়িত্ব নেয় ভবিষ্যতের ভয়ংকর পৃথিবী বদলানোর। ওর চমকপ্রদ আন্দোলনে সঙ্গী হয় বিশ্বের বহু শিশু–কিশোর। ঠিক গ্রেটা থুনবার্গের আন্দোলনের মতোই!

অ্যানিমেশন সিনেমা টুমরো
অ্যানিমেশন সিনেমা টুমরো

টুমরোর চিত্রনাট্যকার আহমেদ খান বলছিলেন, ‘গ্রেটা থুনবার্গের আন্দোলন দেখে থ বনে গিয়েছিলাম।’ পরিচালক মোহাম্মদ শিহাব উদ্দীন বললেন, ‘একেই বলে মিরাকল!’ মিরাকলই তো! টুমরোর চিত্রনাট্য লেখা শুরু হয়েছিল সাড়ে তিন বছর আগে। ১৯ বারের মতো কাটছাঁট হয়েছে। তারপরও এটা নিশ্চিত, গ্রেটার আন্দোলনের আগেই চিত্রনাট্য লেখা হয়েছিল। কী করে যেন রাতুলের কাহিনি মিলে গেল বাস্তবের সঙ্গে।

টুমরোর দৈর্ঘ্য ২৫ মিনিট। পরিচালক শিহাবের অ্যানিমেটর ক্যারিয়ার ১৬ বছরের। তবে এত বড় থ্রিডি অ্যানিমেশন সিনেমা এর আগে বানাননি। ১৫ জনের দল নিয়ে দুই বছরে বানিয়েছেন টুমরো। শিহাব বলছিলেন, ‘যাঁরা কোনো দিন বান্দরবানেও যাননি, তাঁদের নিয়ে এভারেস্টে আরোহণের মতো ব্যাপার ছিল এটি। তারপরও চ্যালেঞ্জটি আমরা নিয়েছি। দুই বছরে বিশাল অভিজ্ঞতা হয়েছে। গবেষণায় কোনো ছাড় দিইনি। আশা করি, বাংলাদেশি অ্যানিমেশন সিনেমার বেলায় টুমরো একটি মাইলফলক হয়ে থাকবে। অ্যানিমেশনের কাজটি আমরা করেছি সাইকোর স্টুডিওতে। এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মুরাদ আবরার ও প্রযোজকদের ধন্যবাদ। সিনেমাটি বিশ্বের শিশু–কিশোরেরা দেখে পরিবেশ সম্পর্কে সচেতন হলেই আমরা সার্থক হব।’

পরিচালকের মতো চিত্রনাট্যকারদের কাছেও টুমরো নতুন এক অভিজ্ঞতা। তাঁদের একজন নাসিমুল হাসানের বক্তব্য, ‘টুমরো দেখে একই সঙ্গে মনে আনন্দ ও শঙ্কা তৈরি হয়। আনন্দ হয় বাংলাদেশে এ ধরনের একটি সিনেমা তৈরি হলো বলে। আর শঙ্কার কারণটি কার না জানা!’

নাসিমুলের কথার সূত্র ধরেই বলি, টুমরো দেখুন, দুই ধরনের ভবিষ্যৎ দেখতে পাবেন।