অদ্বিতীয় অদিতির নতুন সূচনা

অদিতি মহসিন।  ছবি: প্রথম আলো
অদিতি মহসিন। ছবি: প্রথম আলো

সব শিল্পীই তো সংগ্রাম করে শিখরে পৌঁছানোর গল্প বলেন। অদিতির গল্প কিছুটা ব্যতিক্রম। তিনি পেয়েছেন ‘না চাহিলে যারে পাওয়া যায়’-এর মতো জীবন। না চাইতেই পেয়েছেন সব, যা বেশির ভাগ শিল্পীর জন্য বিরল। এই দিক থেকে অদিতি মহসিনকে বলা চলে অদ্বিতীয়।

শিল্পী অদিতি মহসিনের সংগীতজীবনের দুই দশক উদ্যাপিত হতে যাচ্ছে। শুক্রবার সন্ধ্যা ছয়টায় কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে ‘অরুণ আলোর অঞ্জলি’ নামের এ আয়োজন করেছেন তাঁর অনুরাগী ও ভালোবাসার মানুষেরা। উচ্চকিত এ আয়োজন নিয়ে অনুচ্চ স্বরে শিল্পী বলছিলেন, ২০ বছর একজন শিল্পীর জন্য কিছুই না। হয়তো এরপর থেকেই হতে পারে অন্য রকম সূচনা।
তাঁকে নিয়ে সংগীতজ্ঞ ওয়াহিদুল হক লিখেছিলেন, ‘প্রাণ ঢেলে গাওয়া যাকে বলে, সেই তাঁর গানের প্রাণ।’ শান্তিনিকেতন থেকে পড়া শেষে ১৯৯৯ সালে দেশে ফেরেন অদিতি। তারপর রবীন্দ্রনাথকে ধারণ করে প্রাণ ঢেলে গেয়েছেন। গতকাল মঙ্গলবার ধানমন্ডিতে নিজের বাড়িতে বসে তিনি বলছিলেন, রবীন্দ্রনাথের গানে একটা স্পিরিচুয়ালিটি আছে, সাধনার ব্যাপার আছে। এটা নিছক বিনোদনের বিষয় নয়। বাণী-সুর মিলিয়ে একে স্পর্শ করতে না পারলে সেটা পূর্ণ হয় না।

মা হোসনে আরা খানের জোরাজুরিতে গান শিখেছেন। আইসিসিআরের বৃত্তি পাওয়ার পর বাবা নূর মহসিন খান বিশ্বভারতীতে যেতে অনুপ্রাণিত করেছেন। সেখানকার পরিবেশ অদিতির সংগীতজীবন ও ব্যক্তিজীবনকে প্রভাবিত করেছে। সে প্রসঙ্গে জানতে চাইলে অদিতি বলেন, ‘বড় বড় মানুষদের সেখানে দেখতাম সাদামাটা জীবন যাপন করছেন। আমার সংগীতগুরু কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে শুরু করে নীলিমা সেন, মঞ্জু বন্দ্যোপাধ্যায়, অরূপ রতন বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো মানুষদের সান্নিধ্য ও শিক্ষার প্রভাব আমার জীবনজুড়ে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পেলেন দেশিকোত্তম সম্মাননা। সমাবর্তনের সেই অনুষ্ঠানে একক কণ্ঠে অদিতি গাইলেন, ‘কত অজানারে জানাইলে তুমি’। গানটি দেখাল দূরদর্শন ও বাংলাদেশ টেলিভিশন। পরের মাসে দেশে ফিরে ওয়াহিদুল হকের আহ্বানে শিক্ষকতা শুরু করলেন ছায়ানটে। পরের বছর বেঙ্গল ফাউন্ডেশন রেকর্ড করল তাঁর জীবনের প্রথম অ্যালবাম আমার মন চেয়ে রয়, প্রকাশিত হলো ২০০৩-এ। টেলিভিশনে পরীক্ষা দিয়ে পেলেন তালিকাভুক্তি। সব হলো সহজে। কিন্তু সমাজবাস্তবতা সামলে একটি মেয়ের এগিয়ে যাওয়া, গানের চর্চা চালিয়ে নেওয়াটা সহজ ছিল না। তিনি মনে করেন, আরেকটু চর্চা, মানুষের কাছে যাওয়ার আরেকটু চেষ্টা করতে পারলে ভালো হতো।

দুই বাংলা থেকে সমান উৎসাহ পেয়েছেন তিনি। অদিতি বলেন, ‘ওয়াহিদ ভাই, কাইয়ুম কাকাদের অনুপ্রেরণা পেয়েছি। শিল্পী শফিউদ্দিন আহমেদের জন্মদিনে গান করেছিলাম। শয্যাশায়ী মানুষটি বিছানা থেকে উঠে বসে বলছিলেন, তোমার গান পছন্দ করি, সব সিডি সংগ্রহে আছে। প্রথম আলাপে সাবিনা আপা (ইয়াসমীন) বলেছিলেন, আমি তোমার গান শুনি, পছন্দ করি।’