জাদুকরি চার দিন, আশ্চর্য...রঙিন...

তাইওয়ানের লেই ডান্স িথয়েটারের পরিবেশনা
তাইওয়ানের লেই ডান্স িথয়েটারের পরিবেশনা

ভোর হলেই বাগান থেকে বড় বড় সুপারি অটোরিকশায় চেপে চলে যায় কক্সবাজারের সোনাপাড়া বাজারে। আর জার্মানির টমাস বুঙ্গার, ভারতের ঊর্মিমালা সরকার, তাইওয়ানের শিয়ু–চিন ইয়ু, কানাডার সাশার জারিফেরা চলে যেতেন সাগরের তীরে; যেখানে পালা করে এসে আছড়ে পড়ে ঢেউ, নেচে যায় পাগলা হাওয়ার দল। দেশ-বিদেশ থেকে আসা তরুণ প্রাণ দলবেঁধে সেখানে দাঁড়িয়ে যায় যোগব্যায়ামে।

রেওয়াজ পারফরমার্স স্কুলের কত্থক পরিবেশনা
রেওয়াজ পারফরমার্স স্কুলের কত্থক পরিবেশনা

২২ থেকে ২৫ নভেম্বর পর্যন্ত ‘ওশান ডান্স ফেস্টিভ্যাল–২০১৯’–এর জাদুকরি চারটি দিনে ইনানীর হোটেল রয়েল টিউলিপ ও অর্কিড ব্লু হয়ে মারমেইড ইকো রিসোর্টে জড়ো হতেন দেশ–বিদেশের শিল্পীরা। সকাল থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত যোগ দিতেন আনন্দযজ্ঞে। এই উৎসব জানিয়ে দিয়েছে, নাচ কেবল একটি পারফর্মিং আর্ট নয়।’ শরীর ও মস্তিষ্কের সর্বোচ্চ চর্চার ক্ষেত্র। এখানে সোহিনী চক্রবর্তী দেখিয়েছেন ডান্স মুভমেন্ট থেরাপির প্রয়োজনীয়তা, সাবিহা ভাসেল দেখিয়েছেন ডান্স থেরাপি কীভাবে বয়স্কদের নিঃসঙ্গতা দূর করে তাঁদের সুস্থ রাখতে পারে, মঞ্জুলিকা তারা তরুণ নৃত্যশিল্পীদের শিখিয়েছেন নাচ নিয়ে লেখালেখির কৌশল। অভিজ্ঞতা বিনিময় করেছেন তাইওয়ানের ইউনি ওয়াং, ঊর্মিমালা সরকার, লুবনা মারিয়াম প্রমুখ। সমুদ্রের পাড়ে এ উৎসবের অভিজ্ঞতা কয়েকটি দিনের জন্য কতগুলো মানুষকে নিয়ে গিয়েছিল অন্য এক জীবনে। কেমন সেই অন্য জীবনের অভিজ্ঞতা? নরওয়ের শিক্ষক টোন পারনিল অস্টার্ন এককথায় বলেছিলেন, ‘ইটস অ্যামেইজিং’।

ভারতের পরম্পরার ভরতনাট্টম পরিবেশনা
ভারতের পরম্পরার ভরতনাট্টম পরিবেশনা

এ উৎসবের সবচেয়ে আনন্দের জায়গাটি ছিল একঝাঁক তরুণ হৃদয়ের সম্মিলন। কেউ গবেষক, কেউ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কোরিওগ্রাফার, নৃত্যশিল্পী, কেউ আবার কেবলই স্বেচ্ছাসেবী। কারও কারও পরিচয় গুগলে খুঁজতে গিয়ে চমকে উঠতে হয়। যেমন গরম্যান বা সাশার জারিফ। কেউ কেউ মহড়া, দলকে সংগঠিত করার পাশাপাশি উৎসবকে সফল করার জন্য শিল্পী ও শ্রমিক উভয় ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন। সেই দলে ছিলেন বাংলাদেশের আনন্দিতা খান ও আবু নাঈমের মতো একঝাঁক তরুণ।

‘মানুষ’ প্রযোজনায় আরিফুল ও  মারিয়া ফারিহ
‘মানুষ’ প্রযোজনায় আরিফুল ও মারিয়া ফারিহ

ঘেটুনৃত্য থেকে শুরু করে সমসাময়িক, পাহাড়ি, শাস্ত্রীয়, লোকনৃত্য, গম্ভীরা, নৃত্যনাট্য তো ছিলই এমনকি তৃতীয় লিঙ্গের প্রতিনিধিদের পরিবেশনাও ছিল এ উৎসবে। কেবল ব্যবহারিক নাচের বাইরে এ নিয়ে পড়ালেখা ও একে বাস্তব জীবনে কাজে লাগানোর নানা সম্ভাবনা ও প্রয়োজন নিয়ে যে আলোচনা এখানে হয়েছে, সেগুলোকে একটি আয়োজনে একত্র করা এক দুঃসাধ্য কাজ। উৎসবে প্রশংসা কুড়ানো পরিবেশনাগুলোর মধ্যে রয়েছে তাইওয়ানের লেই ডান্স থিয়েটারের ‘ইমপ্রেশন অব আওয়ার হোমটাউন’, সোমাটিক থিয়েটার কোম্পানির ‘নট অ্যালোন’, ভারতের রাজদ্বীপ ব্যানার্জি ও তাঁর দলের ভরতনাট্যম, সুমেধা ভট্টাচার্যের একক ‘টাচ দ্য সাউন্ড’, বাংলাদেশের ইয়াসির আরাফাতের ‘ডেমোক্রেসি’, আরিফুর ইসলামের ‘মানুষ’, অলকা দাস প্রান্তির ‘কত্থক টু ওড়িশি’, তাহনুন আহমেদীর ‘আজান’, আবু নাঈম ডান্স কোম্পানির প্রযোজনা ‘ইন সার্চ অব রিয়েলিটি’, নৃত্যযোগ, সাজু আহমেদ, মুনমুন আহমেদের কত্থক, সামিনা হোসেন প্রেমার পরিচালনায় ভাবনা নৃত্যদলের রাইবেশে পরিবেশনা ও সাধনার ‘আয় আমাদের অঙ্গনে’ এবং সাশার জারিফের কোরিওল্যাবে বাংলাদেশ, ভারত ও হংকংয়ের শিল্পীদের প্রযোজনা ‘চাঁদ: রিফ্লেকশন অব উইশ’।

অলকা দাসের পরিবেশনা
অলকা দাসের পরিবেশনা