বাড়িতে রানী অফিসে অভিনেত্রী

যশ রাজ স্টুডিওতে দেখা হতেই একগাল হেসে ঝরঝরে বাংলায় রানী জিজ্ঞেস করলেন, ‘কেমন আছ, সোনা?’ তিনি এমনই। তাঁর উপস্থিতি মানে একমুঠো তাজা হাওয়া। আর সামনে বাঙালি দেখলে তো কথাই নেই। নিজের আবেগ ধরে রাখতে পারেন না বলিউডের এই বাঙালি ললনা।

সেদিন বেশ ফুরফুরে মেজাজে ছিলেন রানী। চোখ ঢাকা ছিল একটু বড় ফ্রেমের রোদচশমায়। তবে এই আড্ডার শুরুতেই শর্ত ছিল ব্যক্তিগত আর মেয়ে আদিরাকে নিয়ে কোনো প্রশ্ন নয়। ১৩ ডিসেম্বর মুক্তি পেতে চলেছে রানী মুখার্জি অভিনীত ছবি মর্দানি টু। এ উপলক্ষেই এই আড্ডার আয়োজন। ২০১৪ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত মর্দানি ছবির সিকুয়েল এটি। মর্দানি টু ছবিতে ধর্ষণের মতো বিষয়কে তুলে ধরা হয়েছে। কয়েক দিন আগেই হায়দরাবাদে প্রিয়াঙ্কা রেড্ডি নামের এক তরুণীকে ধর্ষণ করে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়। এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডে পুরো ভারত এখন মর্মাহত। তাই আলাপচারিতার শুরুতেই উঠে এল হায়দরাবাদের নির্যাতনের শিকার সেই মেয়েটির কথা। রানী অত্যন্ত ক্ষেভের সঙ্গে বলেন, ‘আমার মনে হয় এখন উপযুক্ত সময়। আমাদের মেয়েদের নিজেদের রক্ষা করতে জানতে হবে। কারও ওপর ভরসা করে থাকা যাবে না। মর্দানি টু ছবিতে আমরা দেখিয়েছি অপরাধী যেকোনো বয়সেরই হতে পারে। কার মনে কী চলছে, তা আমাদের জানা নেই। আগে বলিউডের সিনেমায় ভিলেনের এক ভয়ানক রূপ থাকত। কিন্তু এখন হিরোর মতো দেখতে মানুষও ভিলেনের গর্হিত কাজ করছে।’

মর্দানি টু ছবিতে ৪১ বছর বয়সী রানী ‘শিবানী শিবাজি রাও’ রূপে ট্রেলারেই সবার মন জয় করেছেন। আগের কিস্তি থেকে এবারের ছবিতে রানী কতটা আলাদা? এর জবাবে তিনি বলেন, ‘আগের ছবিতে আমি অপরাধ বিভাগের কর্মকর্তা ছিলাম। এই ছবিতে আমার প্রোমোশন হয়েছে (সশব্দে হেসে)। আমাকে পুলিশের খাকি পোশাকে বেশি দেখা যাবে। আর খাকি পোশাকের সঙ্গে অনেক দায়িত্ব চলে আসে।’

ছোটবেলায় একবার পানিতে ডুবতে ডুবতে বেঁচে ফিরেছিলেন রানী। সেই থেকে আর পানির ধারেকাছে যাননি। তবে এবার মর্দানি টুর জন্য নিজের ভয়কে রীতিমতো জয় করেছেন। ছবিতে রানীকে দেখা যাবে পানির নিচে গিয়ে মারপিট করতে। এর জন্যই মাত্র সাত দিনের মধ্যে সাঁতার শিখেছেন। রানী বলেন, ‘পানিতে নামার পর পায়ের তলায় যতক্ষণ মাটি ছিল, ততক্ষণ আমি ঠিক ছিলাম। কিন্তু যে–ই মাটি সরে গিয়েছিল, মনে হয়েছিল আমি ডুবতে বসেছি। তবে শেষমেশ ভয়টাকে আমি কাটিয়ে উঠি।’

মাত্র সাত দিনে এত বছর পুরোনো ভয় কেটে গেল? আমরা জানতে চাই রানীর এই সাহসিকতার পেছনের কারণ। তিনি বললেন, ‘মা বলেই বোধ হয় এতটা সাহস করতে পেরেছি। মা হওয়ার পর উপলব্ধি করেছি যে আমরা মেয়েরা কতটা শক্তিশালী। সন্তান জন্ম দেওয়ার সময়ই বুঝেছি যে আমার মধ্যে কতটা শক্তি। আমরাই পারি নতুন এক প্রাণকে এই পৃথিবীতে আনতে।’

দীর্ঘদিন রানীকে কোনো রোমান্টিক ছবিতে দেখা যায়নি। আবার কবে তাঁকে রোমান্টিক ছবিতে দেখা যাবে? রানী জবাব দিলেন, ‘আপনারা পত্রপত্রিকায় লিখুন প্লিজ, যেন পরিচালকেরা আমাকে এ ধরনের ছবির প্রস্তাব দেন।’ ভারতের অন্যতম বড় প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান যশ রাজ ফিল্মসের প্রধান কর্তা যাঁর জীবনসঙ্গী, তাঁর আবার এমন আবেদন করা মানায়? রানী হেসে বলেন, ‘আমি বাড়িতে রানী। অফিসে একজন অভিনেত্রীমাত্র।’