শান্তি খুঁজতে মঞ্চনাটকে অপর্ণা

অপর্ণা ঘোষ।  ছবি: প্রথম আলো
অপর্ণা ঘোষ। ছবি: প্রথম আলো

‘টেলিভিশন নাটকে অভিনয় করে একঘেয়েমিতে ভুগতে থাকলে ছুটে যাই চট্টগ্রামে। বাবার হাতে গড়া নাটকের দলে অভিনয় করে প্রাণশক্তি ফিরে পাই। শান্তি পাই। এরপর ঢাকায় ফিরে আবার নতুন উদ্যমে কাজ শুরু করি।’ কথাগুলো অভিনয়শিল্পী অপর্ণা ঘোষের।

আজ বৃহস্পতিবার থেকে চট্টগ্রামের থিয়েটার ইনস্টিটিউটে নান্দিকারের আয়োজনে শুরু হচ্ছে পাঁচ দিনব্যাপী নাট্যোৎসব। ৪৬ বছর পূর্তি উপলক্ষে এ উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। এ উৎসবে দুটি নাটকে ৭ ও ৮ ডিসেম্বর অভিনয় করবেন অপর্ণা ঘোষ। পাপ-পুণ্য ও জ্ঞানবৃক্ষের ফল নামের নাটক দুটির নির্দেশক অপর্ণার বাবা অলোক ঘোষ।

অপর্ণার স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়জীবন কেটেছে চট্টগ্রামে। স্কুলের পাট চুকে গেলেই নাটকের দল নান্দিকারের সঙ্গে যুক্ত হন। বাবার হাতে গড়া দলের মহড়া প্রায়ই নিজেদের বাসায় হতো। মগ্ন হয়ে সেসব মহড়া দেখতেন। বাবার সঙ্গে চট্টগ্রামের থিয়েটার ইনস্টিটিউটের মঞ্চেও যাওয়া-আসা করতেন। ২০০৩ সালে অপর্ণা প্রথম মঞ্চ অভিনয়ে নাম লেখান। এস এম সোলায়মানের কোর্ট মার্শাল ছিল অপর্ণা অভিনীত প্রথম নাটক। এ নাটকে অভিনয় করতে দলের সবার সঙ্গে যেতে হয় চাঁদপুর। সেখানকার শিল্পকলা একাডেমির মঞ্চে প্রথম নাটকের অভিনয় করেন। সেই নাটকের দলই এবার ৪৬ বছর পার করতে যাচ্ছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েই প্রথম সেমিস্টারে নাম লিখিয়েছিলেন ‘লাক্স–চ্যানেল আই সুপারস্টার’ প্রতিযোগিতায়। ২০০৬ সালে প্রতিযোগিতা শেষে সেরা দশে জায়গা হয় তাঁর। এরপর ঢাকা–চট্টগ্রাম যাওয়া–আসার মধ্যে ছিলেন।

অপর্ণা বলেন, ‘শুরুতে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় এসে নাটক ও বিজ্ঞাপনচিত্রের শুটিং করলেও ব্যস্ততার কারণে ২০০৯ সাল থেকে স্থায়ীভাবে ঢাকায় থাকা শুরু করি। এরপর মঞ্চের অভিনয়ে অনিয়মিত হয়ে পড়ি। তবে দলের বর্ষপূর্তি ছাড়াও নাটকের অভিনয় করতে গিয়ে ক্লান্ত হয়ে গেলে ছুটে যাই চট্টগ্রামে। সপ্তাহখানেক থেকে দলের নাটকে অভিনয় করে সুন্দর সময় কাটিয়ে ঢাকায় ফিরে আসি।’

গতকাল বুধবার দুপুরে যখন অপর্ণার সঙ্গে কথা হচ্ছিল, তখন তিনি ঢাকার অদূরে পুবাইলে তিতাস নদীর কান্না নামে নতুন একটি নাটকের শুটিংয়ে ব্যস্ত। মাহমুদ হাসান রানার এই নাটকে তাঁর সহশিল্পী সজল। নাটকের কাজ শেষে আজ সকালে নান্দিকারের আয়োজনে অংশ নিতে চট্টগ্রামের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়বেন। সদস্য হিসেবে শৈশবের সেই নাটকের দলের ৪৬ বছর পূর্তিতে অপর্ণা আনন্দিত ও গর্বিত।

অপর্ণা জানান, ঢাকায় আসার আগে নান্দিকারের হয়ে দলের পোস্টার লাগানো, লিফলেট বিতরণ, মঞ্চ তৈরির কাজসহ অনেক কিছুতে সম্পৃক্ত ছিলেন তিনি। যে নাটকের দলের কারণে আজকের অপর্ণা হয়ে উঠেছেন, সেই দলে নিয়মিত সময় দিতে না পারায় একরকম আক্ষেপও রয়েছে তাঁর।

এক যুগের বেশি সময় ধরে শতাধিক টিভি নাটকে অভিনয় করেছেন। প্রথম নাটকের নাম তবুও ভালোবাসি। নাটকের পাশাপাশি অপর্ণা চলচ্চিত্রেও কাজ করছেন। প্রথম চলচ্চিত্র মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নাম্বার। এরপর যুক্ত হন অনুদানের সিনেমা মৃত্তিকা মায়াতে। এক যুগের অভিনয়জীবনে অপর্ণা অভিনীত অন্য সিনেমাগুলো হচ্ছে ইফতেখার আহমেদ ফাহমীর টু বি কন্টিনিউড, জাহিদুর রহীম অঞ্জনের মেঘমল্লার, প্রসূন রহমানের সুতপার ঠিকানা, ফাখরুল আরেফীনের ভুবনমাঝি ও গণ্ডি। বর্তমানে কাজ করছেন মোবারক হোসেনের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া ছবিতে।