কিছু স্মরণীয় 'যুদ্ধ-সিনেমা'

>
চলচ্চিত্রের দুনিয়ায় ‘যুদ্ধ–সিনেমা’ বা ‘ওয়ার মুভি’ নামে আছে আলাদা একটি ঘরানা। এই ঘরানার ছবিগুলোয় উঠে আসে একটি ভূখণ্ডের ইতিহাস, যুদ্ধের ভয়াবহতা, বিজয়ের কথা, কিছু ঐতিহাসিক চরিত্র আর হৃদয়ে দাগ কেটে থাকার মতো গল্প। আমরা এ সময়ের তিনজন শিল্পী—অভিনেতা আরিফিন শুভ, অভিনেত্রী অপর্ণা ঘোষ ও নাবিলার কাছে জানতে চেয়েছিলাম তাঁদের দেখা সেরা কিছু যুদ্ধ- সিনেমার কথা। আমাদের জানিয়েছেন তাঁদের পছন্দের তালিকা। ছবিগুলো না দেখা থাকলে দেখে নিতে পারেন। আর যাঁরা দেখেছেন, বিজয়ের মাসে আরেকবার দেখে ঝালাই করে নিতে পারেন।
ফাগুন হাওয়ায়
ফাগুন হাওয়ায়

ফাগুন হাওয়ায়’ দেখে অভিভূত হয়েছি

আরিফিন শুভ

আরিফিন শুভ
আরিফিন শুভ

ফাগুন হাওয়ায় ছবিতে যেভাবে দেখানো হয়েছে আমাদের ভাষা আন্দোলনের সংগ্রামকে, তা মনে দাগ কেটে থাকার মতো। মুক্তিসংগ্রাম নিয়ে চলচ্চিত্র হলে সেটায় যে যুদ্ধ থাকতে হবে, এমন কথা নেই। ফাগুন হাওয়ায় একটা স্বাধীন দেশ, রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলাকে পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা নির্মাতা যেভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন, আমি তা দেখে অভিভূত হয়েছি। এ সময়ে দেখা আমার খুব পছন্দের ছবিগুলোর একটা এটি। এ ধরনের কাজ দেখলে আশাবাদী হয়ে উঠি। 

ওয়ার মুভি বা যুদ্ধভিত্তিক সিনেমার মধ্যে শিন্ডলার্স লিস্ট সিনেমাটা আমার খুব প্রিয়। এই ছবির গল্প, শিল্পীদের অভিনয় আর এর একেকটা দৃশ্য চোখে-মনে লেগে থাকার মতো। আমাদের সিনেমা এখনো হয়তো সেই উচ্চতা স্পর্শ করতে পারেনি। কিন্তু আমাদের দেশে, আমাদের মুক্তিসংগ্রামের ইতিহাসে যে চরিত্রগুলো রয়েছে, যে অধ্যায় রয়েছে, সেগুলো চিত্রায়ণ শুরু হলে আমাদের সিনেমাও কোনো অংশে পিছিয়ে থাকবে না।

আমি মঞ্চে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের চরিত্রে অভিনয়ের এক বিরল সুযোগ পেয়েছিলাম। সে সময় এই চরিত্রের প্রস্তুতি নিতে গিয়ে দেখেছি, আমাদের ইতিহাসের অনেক গুরুত্বপূর্ণ অংশই এখনো অপ্রকাশিত। ঐতিহাসিকভাবে তাৎপর্যপূর্ণ বঙ্গবন্ধুর এত মহামূল্যবান বক্তৃতা, এত সাক্ষাৎকার রয়েছে, যা শুনলে চোখের সামনে ভেসে ওঠে অতীত। আমাদের এখনো সেই দিকগুলো ছুঁয়ে যাওয়া বাকি। ব্যক্তিগতভাবে আমার মনে হয়, যুদ্ধ নয়, আমাদের মুক্তিসংগ্রামের চলচ্চিত্রে এই অনুপ্রেরণার গল্পগুলোও উঠে আসা উচিত, উঠে আসা উচিত অগ্রনায়কদের জীবনের নানা অধ্যায়।

দ্য ব্রিজ অন দ্য রিভার কাওয়াই
দ্য ব্রিজ অন দ্য রিভার কাওয়াই

সবচেয়ে প্রিয় ‘দ্য ব্রিজ অন দ্য রিভার কাওয়াই

অপর্ণা ঘোষ

অপর্ণা ঘোষ
অপর্ণা ঘোষ

অভিনেত্রী অপর্ণা ঘোষ মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক নাটক ও সিনেমা দুটোতেই অভিনয় করেছেন। তাঁর অভিনীত মেঘমল্লার, ভুবন মাঝি ছবিগুলোয় নানাভাবে উঠে এসেছে যুদ্ধদিনের সংগ্রাম, ত্যাগ আর দেশের প্রতি ভালোবাসার কথা। অপর্ণা জানালেন, এ ধরনের চরিত্রে অভিনয়ের জন্য তিনি যতটা সাহায্য ইতিহাস ও সেই সময়ে যুদ্ধক্ষেত্রে থাকা সংগ্রামী মানুষগুলোর কাছ থেকে নিয়েছেন, ততটাই রেফারেন্স তিনি নিয়েছেন বিভিন্ন দেশের ‘ওয়ার মুভি’ থেকে। সেই ছবির চরিত্রগুলোর বিপর্যস্ততা, অসহায়ত্ব আর হার না–মানার সাহস তাঁকে প্রস্তুত হতে সাহায্য করেছে। এমনই একটি সিনেমার কথা বলতে গিয়ে অপর্ণা বললেন টম হ্যাংকস অভিনীত স্টিভেন স্পিলবার্গের সেভিং প্রাইভেট রায়ান ছবিটির কথা। বাংলাদেশের সিনেমায় অবশ্য এখনো এত বড় পরিসরে এমন সম্মুখ সমরের দৃশ্যায়ন দেখা যায়নি। তবে এই ছবি অপর্ণার মনে খুব প্রভাব ফেলেছিল।

তবে ‘যুদ্ধ–সিনেমা’ বা দেশাত্মবোধক সিনেমার কথা উঠতে একটি ছবির নাম বলার সময় অপর্ণা রোমাঞ্চিত হয়ে উঠলেন। সেই ছবিটি হলো ডেভিড লিন পরিচালিত ১৯৫৭ সালের ছবি দ্য ব্রিজ অন দ্য রিভার কাওয়াই। কালজয়ী এই মার্কিন যুদ্ধ–সিনেমা ১৯৫২ সালে পিয়ের বুলের রচিত ফরাসি উপন্যাস অবলম্বনে তৈরি। এতে উঠে এসেছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় বন্দি শিবিরে আটকে থাকা ব্রিটিশ বন্দীদের দিয়ে কাওয়াই নদীর ওপর একটি রেলসেতু বানানোর গল্প। অপর্ণার পছন্দের এই ছবিটি কিন্তু আমেরিকান ফিল্ম ইনস্টিটিউটের বিবেচনায় সর্বকালের সেরা মার্কিন চলচ্চিত্রের তকমা পাওয়া। অন্যদিকে ব্রিটিশ ফিল্ম ইনস্টিটিউটও এই ছবিকে গত শতকের শ্রেষ্ঠ ছবির তালিকার ১১তম স্থান দিয়েছে। 

গেরিলা
গেরিলা

প্রিয় ছবি ‘গেরিলা’

নাবিলা

নাবিলা
নাবিলা

অভিনেত্রী নাবিলা উত্তর দিলেন এক কথায়। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে নাসির উদ্দীন ইউসুফ বাচ্চুর গেরিলা ছবিটি এই অভিনেত্রী ও উপস্থাপকের সবচেয়ে প্রিয় ছবির একটি। যুদ্ধ–সিনেমার কথা বলতে গিয়ে নাবিলা এই ছবির নামই বলেন সবার আগে। সৈয়দ শামসুল হকের নিষিদ্ধ লোবান উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত এই ছবি ২০১১ সালে মুক্তি পায়। ছবিতে প্রশংসিত হয় জয়া আহসানের শক্তিশালী অভিনয়। তা ছাড়া আরও নানা দিক থেকেই ছবিটি হয়ে ওঠে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে নির্মিত স্মরণীয় ছবিগুলোর একটি। ওই গেরিলা অর্জন করে ১০টি শাখায় জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। নাবিলাও তাই গেরিলার আর কোনো বিকল্প বললেন না। তাঁর ভাষায়, জয়া আহসানসহ ছবির প্রতিটি চরিত্রই এই ছবির গল্প ও প্রেক্ষাপটের সঙ্গে ন্যায় করেছেন বলেই ছবিটি এতটা স্পর্শ করতে পেরেছে দর্শকদের।
গ্রন্থনা: আদর রহমান