'ফরাসি সিনেমা এতিম হয়ে গেল'

৭৯ বছর বয়সে ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মারা গেলেন আনা কারিনা। ছবি: ইনস্টাগ্রাম
৭৯ বছর বয়সে ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মারা গেলেন আনা কারিনা। ছবি: ইনস্টাগ্রাম

জনপ্রিয় ফরাসি অভিনেত্রী আনা কারিনা গতকাল শনিবার চলে গেলেন না–ফেরার দেশে। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৯ বছর। তাঁর প্রথম জীবনসঙ্গী ও প্রখ্যাত পরিচালক জঁ লুক গদার পরিচালিত ‘আ উইম্যান ইজ আ উইম্যান’ ও ‘পিয়েরো ল ফু’ ছবি দুটির জন্য তিনি সবচেয়ে জনপ্রিয় ছিলেন। দ্য গার্ডিয়ান ও বিবিসি তাঁর মৃত্যুর সংবাদ জানিয়েছে।

আনা কারিনা দীর্ঘদিন ধরে ক্যানসারের সঙ্গে লড়াই করছিলেন। প্যারিসের একটি হাসপাতালে মৃত্যুর সময় তাঁর চতুর্থ জীবনসঙ্গী, মার্কিন চলচ্চিত্র পরিচালক ড্যানিশ বেরি তাঁর পাশে ছিলেন। যদিও ১৯৮২ সালে বিয়ের পর, এক যুগের দাম্পত্য জীবন শেষ হয় ১৯৯৪ সালে। আনা কারিনার এজেন্ট লরেন্ট বালান্দ্রাস এএফপিকে তাঁর মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেন।

ফ্রান্সের সংস্কৃতিমন্ত্রী ফ্রাঙ্ক রিস্টার একটি টুইটবার্তায় লেখেন, ‘আজ ফরাসি চলচ্চিত্র (ইন্ডাস্ট্রি) এতিম হয়ে গেল। এক মহান অভিনেত্রীকে হারাল ফরাসি সিনেমা।’

আনা কারিনার প্রথম জীবনসঙ্গী জঁ লুক গদার। ছবি: ইনস্টাগ্রাম
আনা কারিনার প্রথম জীবনসঙ্গী জঁ লুক গদার। ছবি: ইনস্টাগ্রাম

আনা কারিনার জন্ম ১৯৪০ সালের ২২ সেপ্টেম্বর, ডেনমার্কের সলবার্গে। ছোটবেলা মোটেই ভালো কাটেনি আনা কারিনার। নিজের ছোটবেলাকে তিনি বর্ণনা করেছেন এভাবে, ‘একটু ভালোবাসা পাওয়ার জন্য আমি মুখিয়ে থাকতাম।’ ডেনমার্কে ক্যাবারে ড্যান্সার হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করেন। মাত্র ১৭ বছর বয়সে তিনি মডেল হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে ফ্রান্সের প্যারিসে আসেন। প্যারিসের প্রথম দিনগুলোয় রাস্তায়ও থেকেছেন আনা কারিনা।

‘আ উইম্যান ইজ আ উইম্যান’ আনা কারিনার সবচেয়ে জনপ্রিয় ছবি। ছবি: ইনস্টাগ্রাম
‘আ উইম্যান ইজ আ উইম্যান’ আনা কারিনার সবচেয়ে জনপ্রিয় ছবি। ছবি: ইনস্টাগ্রাম

তারপর একদিন এক রেস্তোরাঁয় বিজ্ঞাপন এজেন্সির এক নারীর চোখে পড়েন আনা কারিনা। বিজ্ঞাপন দেখেই জঁ লুক গদার পাকা জহুরির মতো চিনে নেন আনাকে। পরবর্তী সময়ে ১৯৬১ সালে গদার বিয়ে করেন ২১ বছর বয়সী আনা কারিনাকে। সেই বিয়ে টিকে ছিল মাত্র চার বছর। ‘আ ইউম্যান ইজ আ উইম্যান’ ছবির জন্য ১৯৬১ সালে আনা কারিনা বার্লিন চলচ্চিত্র উৎসবে সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার জিতে নেন।

২০১৮ সালে এএফপিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে গদারের সঙ্গে নিজের দাম্পত্য জীবন সম্পর্কে আনা বলেন, ‘আমরা দুজন দুজনকে প্রচণ্ড ভালোবেসেছি। কিন্তু একসঙ্গে থাকা কঠিন হয়ে উঠছিল। ও হয়তো বল, আমি একটা সিগারেট নিয়ে আসি? এই বলে বের হল। তারপর ফিরে এল তিন সপ্তাহ পর।’

প্যারিসের রাস্তায় আনা কারিনা। ছবি: ইনস্টাগ্রাম
প্যারিসের রাস্তায় আনা কারিনা। ছবি: ইনস্টাগ্রাম

গদার তাঁর প্রথম ছবি ‘ব্রিদলেস’–এর জন্য প্রথমে আনা কারিনাকেই ভেবেছিলেন। চিত্রনাট্যে একটা নগ্ন দৃশ্য ছিল। সে জন্য এই ছবির প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছিলেন আনা। পরে সেই চরিত্রে অভিনয় করে দারুণ জনপ্রিয়তা পান জঁ ডরোথি সিবার্গ।

আনা কারিনা পরবর্তী সময়ে চলচ্চিত্র পরিচালক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। এমনকি গায়িকা হিসেবেও সুনাম কুড়িয়েছিলেন আনা কারিনা।