ইউটুর মঞ্চে রবীন্দ্রনাথ আর বেগম রোকেয়া

মুম্বাইয়ে ‘ইউটু’র ‘দ্য জশুয়া ট্রি’র কনসার্টে বেগম রোকেয়া। ছবি: ইনস্টাগ্রাম
মুম্বাইয়ে ‘ইউটু’র ‘দ্য জশুয়া ট্রি’র কনসার্টে বেগম রোকেয়া। ছবি: ইনস্টাগ্রাম

তা’র চেয়ে মা আমি হব মেঘ,
তুমি যেন হবে আমার চাঁদ
দু–হাত দিয়ে ফেল্‌ব তোমায় ঢেকে,
আকাশ হবে এই আমাদের ছাদ।

সামনে গাইছে ইউটু। পেছনে ব্যাকড্রপে ভেসে উঠল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘মাতৃবৎসল’ কবিতার বাংলা এই চরণগুলো। এভাবেই এই বিশ্বখ্যাত ব্যান্ড সম্মান জানাল বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে। এই মঞ্চে আরও সম্মান জানানো হয়েছে বাঙালি নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়াকে। বাদ যাননি ভারতীয় অভিনেত্রী ও রাজনীতিবিদ স্মৃতি ইরানি, লেখক অরুন্ধতী রায়, সাংবাদিক ও অ্যাকটিভিস্ট গৌরী লঙ্কেশ, হাঙ্গেরীয় চিত্রশিল্পী অমৃতা শের-গিল, রানা আইয়ুব, মহাকাশবিজ্ঞানী কল্পনা চাওলা, ইংরেজ লেখক ম্যারি ওলস্টোনক্রাফট, ১৬ বছর বয়সী সুইডিশ পরিবেশকর্মী গ্রিটা থুনবার্গসহ আরও অনেককে।

কনসার্টে গিয়েছিলেন হৃতিক রোশন, তাঁর সাবেক স্ত্রী সুজান খান ও সন্তানেরা। ছবি: ইনস্টাগ্রাম
কনসার্টে গিয়েছিলেন হৃতিক রোশন, তাঁর সাবেক স্ত্রী সুজান খান ও সন্তানেরা। ছবি: ইনস্টাগ্রাম

১৫ ডিসেম্বরের রাত ভারতের সংগীতজগতের জন্য একটা বড় রাত। সে রাতে আকাশ থেকে নেমে এসেছিল বিশ্বসংগীতের সবচেয়ে বড় তারকাদের কয়েকজন। ১৯৭৬ সালে আয়ারল্যান্ডের ডাবলিনে জন্ম নেওয়া বিশ্ববিখ্যাত ব্যান্ড ‘ইউটু’। ১৯৮৭ সালে ‘দ্য জশুয়া ট্রি’ অ্যালবামের মাধ্যমে এই ব্যান্ড হিরো থেকে সুপারস্টার হয়ে যায়। সেই অ্যালবামের ৩২ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত ওয়ার্ল্ড ট্যুরের অংশ হিসেবে এই ব্যান্ডের চার সদস্য প্রথমবারের মতো মাতালেন মুম্বাই। সঙ্গে ছিলেন এ আর রাহমান।

দর্শকসারিতে ছিলেন হৃতিক রোশন, তাঁর সাবেক স্ত্রী সুজান খান ও সন্তানেরা, দীপিকা পাড়ুকোন, রণবীর সিং, সোহা আলী খান, নেহা ধুপিয়া, শহীদ কাপুরের স্ত্রী মীরা রাজপুত, ডায়ানা পেন্টি, ভারতীয় ক্রিকেটের কিংবদন্তি শচীন টেন্ডুলকার ও তাঁর স্ত্রীসহ ভারতের সংগীতজগতের রথী–মহারথীরা।

৩৫ হাজার দর্শকের সামনে গাইছে ইউটু। ছবি: ইনস্টাগ্রাম
৩৫ হাজার দর্শকের সামনে গাইছে ইউটু। ছবি: ইনস্টাগ্রাম

৩৫ হাজার মানুষের সামনে গাইল ইউটু। ‘আলট্রাভায়োলেট’ গানে সম্মান জানাল বিশ্বের নারী জাগরণের অগ্রদূতদের, যাঁরা বিশ্বকে দেখিয়েছেন আলোর পথ। সেখানে প্রথমেই দেখা গেল শাড়ি পরা, মাথায় ঘোমটা টানা বেগম রোকেয়াকে।

কনসার্টে আলাদা গুরুত্ব পেয়েছে ইউটু আর এ আর রাহমান মিলে করা সিঙ্গেল ট্রাক ‘অহিংসা’। আগেই ইউটু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট দিয়ে বলেছিল, ‘অহিংসা মানবজীবনের সবচেয়ে বড় আদর্শ’। এনডিটিভিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এই ব্যান্ডের অন্যতম ভোকাল বুনো জানিয়েছিলেন, তাঁরা মার্টিন লুথার কিংয়ের আদর্শ ধারণ করেন, যিনি কিনা মহাত্মা গান্ধীর ছাত্র ছিলেন। ‘অহিংসা’ গানটি শান্তির কথা বলে। এই গান বিশ্বসংগীতকে দেওয়া ভারতীয়দের সবচেয়ে বড় উপহার। মঞ্চে ইউটু আর এ আর রাহমানের সঙ্গে গলা মিলিয়েছেন এ আর রহমানের দুই মেয়ে খাদিজা ও রহিমাও।

মঞ্চ মাতাচ্ছেন বুনো। ছবি: ইনস্টাগ্রাম
মঞ্চ মাতাচ্ছেন বুনো। ছবি: ইনস্টাগ্রাম

এই মঞ্চে আরও গাওয়া হয়েছে ‘উইথ অর উইদাউট ইউ’, ‘হোয়্যার দ্য স্ট্রিটস হ্যাভ নো নেইম’, ‘আই স্টিল হ্যাভেন’ট ফাউন্ড হোয়্যাট আ’ম লুকিং ফর’ প্রভৃতি আইকনিক গান। অবশ্য বুনোকে খুব বেশি কষ্ট করতে হয়নি। ইউটু কেবল গান ধরিয়ে দিয়েছে। বাকিটা উপস্থিত দর্শক–শ্রোতারাই সুর করে গলা মিলিয়ে গেয়েছে।