নৃত্যে গানে স্লোগানে বিজয়ক্ষণ স্মরণ

মঞ্চের ওপর নৃত্য করছেন লাল শাড়ি পরা শিল্পীরা। ছবি: দীপু মালাকার
মঞ্চের ওপর নৃত্য করছেন লাল শাড়ি পরা শিল্পীরা। ছবি: দীপু মালাকার

লাল-সবুজ পতাকা ঠিকই, তবে এটি কাপড়ের নয়। সহস্র মানুষের। হাজারো মানুষ মিলে তৈরি করেছেন এই ‘মানবপতাকা’। মাঠজুড়ে ছিল সবুজ আর সবুজ। পুরুষদের কেউ কেউ পরেছেন রক্তলাল পাঞ্জাবি। নারীরা লাল শাড়ি। মঞ্চের ওপর নৃত্য করছেন লাল শাড়ির শিল্পীরা। বর্গাকার মঞ্চ ঘিরে গাইছেনও লাল-সবুজে পোশাকের শিল্পীরা। এটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠের চিত্র।

বিজয় দিবস উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং ছায়ানটের উদ্যোগে সোমবার বিকেলে অনুষ্ঠিত হয়েছে বিজয়ের এ উৎসব। অনুষ্ঠান শেষ হয় ১৯৭১ সালের ঐতিহাসিক ১৬ ডিসেম্বরে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আত্মসমর্পণ ও বাঙালির পূর্ণাঙ্গ বিজয়ের ক্ষণকে স্মরণ করে, ঠিক ৪টা ৩১ মিনিটে সম্মিলিত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত গাওয়ার মধ্য দিয়ে।

‘মুখে বাংলা, বুকে বাংলা, আমার সোনার বাংলা...জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়ে শুরু হয় এ অনুষ্ঠান। এরপর শুরু হয় জাতীয় সংগীত। এতে কণ্ঠ মেলায় সর্বসাধারণ। একে একে সম্মিলিত কণ্ঠে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ফিরে চল ফিরে চল মাটির টানে’, পরিবেশন করা হয় সম্মেলক কণ্ঠে। একক কণ্ঠে সেঁজুতি বড়ুয়া শোনান ‘যে তোমায় ছাড়ে ছাড়ুক’ গানটি। ‘নাই নাই ভয় হবে হবে জয়’, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ‘জাগো অনশন-বন্দি’, ‘বল্ নাহি ভয়’; সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের ‘ফুল খেলবার দিন নয় অদ্য’; আবদুল লতিফের ‘আমার দেশের মতন এমন’ সম্মেলক কণ্ঠের গানগুলোর সঙ্গে নৃত্য পরিবেশন করেন শিল্পীরা। একক কণ্ঠে বিমান চন্দ্র বিশ্বাস ‘ও আমার দেশের মাটি’, গানগুলো গেয়ে শোনান ছায়ানটের শিল্পীরা। কবি শামসুর রাহমানের ‘স্বাধীনতা তুমি’ কবিতাটি আবৃত্তি করেন ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়। ফাঁকে ফাঁকে ছিল জয় বাংলা স্লোগান। ছিল আটটি সম্মেলক গান, সঙ্গে সম্মেলক নৃত্য।

পঞ্চমবারের এ আয়োজনটি সরাসরি সম্প্রচার করেছে দীপ্ত টেলিভিশন। বিকেল পৌনে চারটায় ছায়ানটের নির্বাহী সভাপতি সারওয়ার আলীকে সঙ্গে নিয়ে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মোহাম্মদ আখতারুজ্জামান।

এ অনুষ্ঠান সম্পর্কে ছায়ানটের সাধারণ সম্পাদক লাইসা আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিজয়ের চার দশক পেরোনোর পরও পূর্ণাঙ্গ বাঙালি হয়ে বিশ্বমানবতাকে ধারণ করার মতো মানস তৈরি হয়নি অনেকেরই। আমরা বিশ্বাস করি, দেশকে-মানুষকে ভালোবাসার গান নিয়ে সবাইকে একত্র করতে পারলে জাতীয় চেতনা ও মানবতাবোধের জাগরণ ঘটবে। ছায়ানট বিশ্বাস করে, সংস্কৃতি দিয়ে আবারও বাঙালিকে এক করা সম্ভব, এক রাখা সম্ভব।’ তিনি বলেন, পাকিস্তান আমলে বাঙালির মনে আত্মপরিচয়ে বাঁচার বিশ্বাস জাগিয়ে তুলতে ১৯৬৭ সালে ছায়ানট বাংলা নববর্ষের অনুষ্ঠান শুরু করেছিল। আজ বিশ্বজুড়ে ধর্ম-বর্ণ-আদর্শনির্বিশেষে পয়লা বৈশাখ বাঙালির সবচেয়ে বড় প্রাণের উৎসব। সেই সাংস্কৃতিক জাগরণের সঙ্গে মানবিক বোধ সঞ্চারের লক্ষ্যে ‘সকলে মিলে দেশ-গান গাইবার, দেশ-কথা বলবার’ এই মিলনানুষ্ঠান শুরু হয় ২০১৫ সালে মহান বিজয় দিবসে। মহান বিজয় দিবসের দিনে ভেদাভেদ দূরে ঠেলে জাতীয় পতাকার সবুজে দেহ ও মন রাঙিয়ে সর্বান্তঃকরণে ষোলো আনা বাঙালি হয়ে ওঠার ব্রত নিতে সবাইকে আহ্বান জানায় ছায়ানট।