সব কাজ শেষ করে গিয়েছিলেন পৃথ্বী

এবিসি রেডিও এফএম ৮৯.৬–এ পৃথ্বীরাজ। ছবি: ইনস্টাগ্রাম
এবিসি রেডিও এফএম ৮৯.৬–এ পৃথ্বীরাজ। ছবি: ইনস্টাগ্রাম

সেদিন ১৫ ডিসেম্বর। রাতে এবিসি রেডিও ৮৯.২–এর অফিসের নিচে চা খেতে গিয়ে বারবার মনে হচ্ছিল এখনই হয়তো দেখা হবে পৃথ্বীরাজের সঙ্গে। তিনি ছিলেন এবিসি রেডিওর শব্দ ও প্রযোজনা বিভাগের প্রধান। প্রায় রাতেই কাজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে এক কাপ চা খাওয়ার ফাঁকে পৃথ্বীরাজ তাঁর নতুন নতুন কাজের কথা বলে যেতেন। মাস সাতেক আগে এভাবেই চায়ের কাপ হাতে নিয়ে দিয়েছিলেন বিয়ের খবরটা। কিন্তু ১৫ ডিসেম্বর পৃথ্বীরাজের সঙ্গে দেখা হলো না। দেখা হবে না আর কখনোই। 

১৫ ডিসেম্বর রাতে তাঁর নিজের গড়া জিলাপী স্টুডিও থেকে অচেতন অবস্থায় পাওয়া যায় পৃথ্বীরাজকে। হাসপাতালে নেওয়া হলে ভোর সাড়ে ৪টায় চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন তরুণ এই সংগীতশিল্পীকে। মাত্র ৩৩ বছর বয়সে হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান তিনি। 

পৃথ্বীরাজ যেমন মেধাবী সংগীতশিল্পী ও সংগীত পরিচালক ছিলেন, ততটাই ছিলেন মেধাবী প্রযোজক। তাঁর শূন্যতার ছাপ এখনো এবিসি রেডিওর প্রত্যেক কর্মী আর প্রতিটি কাজের সঙ্গে জুড়ে আছে। এবিসি রেডিওর কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, পৃথ্বীর জিনিসপত্রগুলো এখনো তাঁর বসার জায়গায় সেভাবেই রয়ে গেছে। সবার মুখে মুখে এখনো পৃথ্বীর এই কাজ–সেই কাজ নিয়ে কথা। কত যে পরিকল্পনা ডায়েরির পাতায় পাতায় লেখা, সেই ফিরিস্তি দিতে দিতে চোখ গড়িয়ে অশ্রু ঝরা শুরু হয়ে গেল এবিসি রেডিওর জনপ্রিয় আরজে শারমীনের। পৃথ্বীর কাজের নাকি কোনো খুঁত ধরা যেত না। একের পর এক নিত্যনতুন পরিকল্পনা আর কাজ দিয়ে সবাইকে ব্যস্ত করে রাখতেন তিনি। অনুষ্ঠানের আবহসংগীত থেকে শুরু করে, ভিডিও কনটেন্ট বানানো, সেগুলোর সাবটাইটেল লেখা, নতুন গানের সুরারোপ—কী করতেন না পৃথ্বী। এত কাজের ফাঁকেও ভুলতেন না সহকর্মীদের চমকে দিতে। জন্মদিন বা বিশেষ দিনে গান লিখে, তাতে সুর বসিয়ে বানিয়ে ফেলতেন নতুন কিছু। এমন উপহার আর দেবে না কেউ, এ কথা ভাবতেই কথাগুলো জড়িয়ে আসে কথাবন্ধু শারমীনের। তিনি বলেন, ‘পৃথ্বী একজন গুণী–মেধাবী ছেলে। এমন কিছু ছিল না, যেটা সে করতে পারত না। যেদিন সে চলে গেল, কথা ছিল সেদিন আমাদের একসঙ্গে প্যানেলে বসে নতুন একটা কাজ করার। কত কাজ করার কথা ছিল আমাদের। কত বড় বড় স্বপ্ন ছিল।’ সর্বশেষ এবিসি রেডিওর নিবেদন ‘বীরাঙ্গনার গল্প’–এ কাজ করেছেন পৃথ্বী। কাজটা শেষ করে এর ইংরেজি সাবটাইটেল লেখার কথা ছিল ১৫ ডিসেম্বর। কিন্তু কোনো এক তাড়ায় পৃথ্বী নাকি সেই কাজ ১৪ ডিসেম্বরেই সেরে ফেলেছিলেন। ভেজা চোখ নিয়েই গাজী শারমীন আহমেদ বললেন, ‘কিসের তাড়া ছিল ওর তখন বুঝিনি। কিন্তু ও ওর হাতের কাজ সেরেই অফিস থেকে বেরিয়েছিল।’