জাদুঘরে লোকগান, শিল্পকলায় সাধুসঙ্গ

‘পূর্ণিমা তিথির মাসিক সাধুসঙ্গ’র নবম আসরে বাউলশিল্পীদের পরিবেশনা। ছবি: প্রথম আলো
‘পূর্ণিমা তিথির মাসিক সাধুসঙ্গ’র নবম আসরে বাউলশিল্পীদের পরিবেশনা। ছবি: প্রথম আলো

শীতের এই মৌসুমে লোক ও লালনের গানের আসর জমেছিল জাতীয় জাদুঘর ও শিল্পকলা একাডেমিতে। গতকাল বুধবার রাতে জাতীয় জাদুঘরে লোকগানের সুরে মাতালেন শিল্পী কালীপদ শীল। শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয় সাধুসঙ্গ। এখানে মিলেছে লালনের বাণী।

বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর ও সোয়ান গ্রুপ যৌথভাবে জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে শিল্পী কালীপদ শীলের একক সংগীতসন্ধ্যার আয়োজন করে। ‘মেঠো সুরে মাটির ঘ্রাণ’ শীর্ষক শিরোনামে সংগীতসন্ধ্যায় স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের সচিব মো. আবদুল মজিদ। বিশেষ অতিথি ছিলেন লেখক ও কণ্ঠশিল্পী মাসুদ আহমেদ, বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের সাবেক মহাপরিচালক ও বিশিষ্ট জীবনানন্দ গবেষক ফয়জুল লতিফ চৌধুরী এবং সোয়ান গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. খবীর উদ্দিন খান। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক মো. রিয়াজ আহম্মদ। সংগীতায়োজনের শুরুতে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করেন আমন্ত্রিত অতিথিরা।

আলোচনা শেষে ‘দয়া করে এসো দয়াল’ গানটির মধ্য দিয়ে শুরু করেন শিল্পী কালীপদ শীল। তিনি একে একে শোনালেন ‘আমার পোষা পাখি গিয়াছে উড়ি’, ‘উজান গাঙ্গের নাইয়া’, ‘আমি রব না রব না গৃহে’, ‘মিলন হবে কত দিনে’, ‘টাকডুম টাকডুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল’, ‘গ্রামের নওজোয়ান হিন্দু-মুসলমান’, ‘উজান দেশের মাঝি ভাই ধন’, ‘চিরদিন পুষলাম এক অচিন পাখি’ গানের মতো জনপ্রিয় সব গান।

জাতীয় জাদুঘরে লোকগানের সুরে মাতালেন শিল্পী কালীপদ শীল। ছবি: প্রথম আলো
জাতীয় জাদুঘরে লোকগানের সুরে মাতালেন শিল্পী কালীপদ শীল। ছবি: প্রথম আলো

ছোটবেলা থেকেই কালীপদ শীলের লোকসংগীতের প্রতি বিশেষ আকর্ষণ ছিল। বিশেষ করে পল্লিগীতির সম্রাট আবদুল আলীমের সুরের মূর্ছনায় প্রভাবিত হয়ে সংগীতসাধনায় মনোনিবেশ করেন। ১৯৮৩ সালে তৎকালীন ঢাকা জাদুঘরে চাকরিজীবন শুরু করেন। তবে চাকরির পাশাপাশি তালিম নেন ওস্তাদ সাধন চন্দ্র বর্মণ, ওস্তাদ মো. ফরিদ হক ও ওস্তাদ আবদুর রাজ্জাকের মতো গুণী শিল্পীদের কাছে।

সাধুগুরুদের সংগীত পরিবেশনায় শিল্পকলা প্রাঙ্গণ মুখর হয়ে ওঠে। ছবি: প্রথম আলো
সাধুগুরুদের সংগীত পরিবেশনায় শিল্পকলা প্রাঙ্গণ মুখর হয়ে ওঠে। ছবি: প্রথম আলো

শিল্পকলায় ‘পূর্ণিমা তিথির সাধুসঙ্গ’

সাধক ফকির লালনের ভাববাণী ও জীবনদর্শন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে কাজ করছে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি। এ বছরের শুরু থেকে প্রতি পূর্ণিমা তিথিতে নিয়মিত ‘সাধু মেলা’র আয়োজন করা হয়। শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গণের বটতলায় গতকাল বিকেলে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির নিয়মিত আয়োজন ‘পূর্ণিমা তিথির মাসিক সাধুসঙ্গ’র নবম আসর অনুষ্ঠিত হয়েছে। আসর আয়োজনে আলোচনা, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি বাউল দলের ভাববাণী পরিবেশন, সন্ধ্যায় নির্ধারিত বাউলশিল্পীদের পরিবেশনা এবং রাতে সাধুগুরুদের সংগীত পরিবেশনায় শিল্পকলা প্রাঙ্গণ মুখর হয়ে ওঠে। অনেকটা রাত পর্যন্ত চলে আসর। সাধু মেলায় উপস্থিত দর্শক-শ্রোতারা লালনের গান এবং ভাবতত্ত্বে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন।

ছোটবেলা থেকেই কালীপদ শীলের লোকসংগীতের প্রতি বিশেষ আকর্ষণ ছিল। ছবি: প্রথম আলো
ছোটবেলা থেকেই কালীপদ শীলের লোকসংগীতের প্রতি বিশেষ আকর্ষণ ছিল। ছবি: প্রথম আলো