সিডনিতে 'নো ল্যান্ডস ম্যান'

নো ল্যান্ডস ম্যান ছবির শুটিংয়ের ফাঁকে মিশেল মেগান, মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, নওয়াজু্দ্দিন সিদ্দিকী ও নুসরাত ইমরোজ তিশা।  ছবি: প্রথম আলো
নো ল্যান্ডস ম্যান ছবির শুটিংয়ের ফাঁকে মিশেল মেগান, মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, নওয়াজু্দ্দিন সিদ্দিকী ও নুসরাত ইমরোজ তিশা। ছবি: প্রথম আলো

কদিন হলো ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন সিডনি। সব রেকর্ড ভেঙে গত পরশু পর্যন্ত ছিল সর্বোচ্চ দাবদাহ। কিন্তু গতকাল হঠাৎ করেই বদলে যায় পরিবেশ। ঝলমলে রোদের সঙ্গে বইতে শুরু করে মিষ্টি বাতাস। তাপমাত্রা নেমে আসে প্রায় অর্ধেকে, ২২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অস্ট্রেলিয়ার সিডনির পূর্বাঞ্চলের কুইন্স পার্কে চলছিল নো ল্যান্ডস ম্যান ছবির শুটিং। বাংলাদেশের পরিচালক মোস্তফা সরয়ার ফারুকী ও বলিউডের অভিনেতা নওয়াজুদ্দিন সিদ্দিকীরা প্রাকৃতিক এই পরিবেশটাকে কাজে লাগাতে ভুল করেননি।

নির্ঝঞ্ঝাট কাজ করতে ভালোবাসেন ফারুকী। তাই কোথায়, কখন শুটিং, সেটা কেউ জানতে পারে না। গতকাল পড়ন্ত বিকেলে শুটিংয়ের ফাঁকে অভিনেতা, পরিচালক ও প্রযোজকেরা কিছুটা সময় দেন প্রথম আলোকে। নওয়াজ প্রথমেই বলে নেন, ‘সিম্পল টেকনিক সে ম্যা উতার গ্যাইয়ি’। তারপর বললেন, ‘ইংরেজি ভাষার ছবিতে প্রথম লিড রোল। প্রথমে ভয়ে ছিলাম, এ চরিত্র করতে পারব? কিন্তু পরিচালক সহজ টেকনিক বলে দিলেন।’

নিজের নতুন এই পরিচালক সম্পর্কে বলতে গিয়ে নওয়াজুদ্দিন বললেন, ‘ফারুকী অভিনেতাকে বাস্তবের মুখোমুখি দাঁড় করান। প্রথম প্রথম আমি একটু বেশি অভিনয় করতেই তিনি থামিয়ে দিয়েছিলেন। পরে বুঝতে পেরেছি, বাস্তবতার পুরো নির্যাসটুকু পেতে হলে সেটা জরুরি ছিল। সামান্য ইম্প্রোভাইস করে লোকেশনের সঙ্গে দৃশ্যকে কীভাবে একীভূত করতে হয়, সেটা ফারুকী জানেন। এ জন্যই প্রতিটি লোকেশনকে মনে হয়েছে, আমাদের অভিনয়ের জন্যই প্রাকৃতিকভাবে তৈরি করা সেট।’

বোঝা যাচ্ছিল, ইতিমধ্যে ফারুকীর ভক্ত হয়ে গেছেন নওয়াজুদ্দিন। অনেক পরিচালকের সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা তাঁর। বলেই ফেললেন, ফারুকী তাঁদের মধ্যে অন্যতম সেরা পরিচালক। তিনি বলেন, ‘তাঁকে আমি যতই দেখছি, ততই মুগ্ধ হচ্ছি। একজন পরিচালকের সবচেয়ে বড় গুণ হচ্ছে অভিনেতার কাছ থেকে সেরা অভিনয় বের করে নেওয়া। ফারুকী সেটা দারুণভাবে করেন।’

ফারুকী কী বললেন তাঁর অভিনেতাকে নিয়ে? ‘এবার নওয়াজুদ্দিনকে নিউইয়র্কে প্রথম যেদিন দেখি, সেদিন আমি তাঁর অভিনয়ের প্রস্তুতি নিয়ে খুব কনফিউজড হয়ে যাই। তিনি ঘুরছেন-ফিরছেন, খাচ্ছেন। মনেই হয়নি অভিনয় নিয়ে তাঁর কোন প্রস্তুতির ব্যাপার আছে। কিন্তু যেই না আমি ক্যামেরা চালু করলাম, দেখলাম তাঁর নিখুঁত উপস্থাপন।’ নওয়াজের চরিত্রটি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এ ছবিতে নওয়াজুদ্দিনের চরিত্রের অনেকগুলো স্তর। কখনো সে ভালো মানুষ, কখনো চূড়ান্ত খারাপ। আবার কখনো কমপ্লিকেটেড। কখন কী করছে, কনফিউজড। বিমানবন্দরের একটি টয়লেটে ছবির প্রথম দৃশ্যেই আমার মনে হয়েছিল, আমি আমার অভিনেতাকে পেয়ে গেছি।’

ছবিটি নির্মিত হচ্ছে ইংরেজি ভাষায়। ছবির অন্যতম প্রযোজক অভিনেত্রী নুসরাত ইমরোজ তিশা বলেন, ‘এই ছবি যদি সাফল্য পায়, তাহলে ভবিষ্যতে আবারও ছবি প্রযোজনা করব। এখানে সবাই অনেক পরিশ্রম করেছেন। আশা করি ছবিটি দর্শকদের ভালো লাগবে।’

নো ল্যান্ডস ম্যান ছবির চিত্রনাট্য নিয়ে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন পরিচালক। এখনকার সময়ের জন্য এই চিত্রনাট্য ভীষণ প্রাসঙ্গিক, তেমনটিই দাবি করেছেন অভিনেতা নওয়াজুদ্দিন। কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয়ের পাশাপাশি প্রযোজক হিসেবেও তিনি ছবিটির সঙ্গে যুক্ত। এতে আরও অভিনয় করছেন অস্ট্রেলিয়ার অভিনয়শিল্পী মিশেল মেগান।