দেশকে সম্মান এনে দেবেন নৃত্যশিল্পীরা

রেওয়াজ পারফরমার্স স্কুলের শিল্পীদের সঙ্গে কত্থক পরিবেশন করছেন মুনমুন আহমেদ। ছবি: প্রথম আলো
রেওয়াজ পারফরমার্স স্কুলের শিল্পীদের সঙ্গে কত্থক পরিবেশন করছেন মুনমুন আহমেদ। ছবি: প্রথম আলো

নাচ নিয়ে অনেক কাজ হয়েছে এ বছর। ইতিবাচক সেসব কাজ বিশ্বসভায় বাংলাদেশকে দেবে বিশেষ মর্যাদা। দেশকে সম্মান এনে দেবেন নৃত্যশিল্পীরা। তখন হয়তো সুধী সমাজ বলবে, নটরাজ মুখ তুলে চেয়েছেন। নয়তো দারিদ্র্য, অসহায়ত্ব, অপুষ্টি, সাংস্কৃতিক অবক্ষয়ের মধ্য দিয়ে তরুণেরা কীভাবে শিল্পী হয়ে উঠছেন?

আকর্ষণীয় এই শিল্পমাধ্যমে স্বতঃস্ফূর্ত হয়ে উঠছেন বাংলাদেশের শিল্পীরা। ভরতনাট্যম, কত্থক, ওডিশি ও মণিপুরি নাচে তৈরি হয়েছেন একঝাঁক দক্ষ পারফরমার। নাচ নিয়ে পড়তে রবীন্দ্রভারতী, বিশ্বভারতী, বেঙ্গালুরু বিশ্ববিদ্যালয়সহ পৃথিবীর নানা জায়গায় ছুটছেন তরুণেরা। ফিরে এসে নিজ নিজ ক্ষেত্রে রাখছেন মেধার স্বাক্ষর। চলতি বছর শেখার সেই প্রবণতায় যুক্ত হয়েছে নতুন মাত্রা। দেশ-বিদেশে বহু কর্মশালায় অংশ নিয়েছেন বাংলাদেশের তরুণেরা। সেসবের মধ্যে উল্লেখযোগ্য বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ কোরিওগ্রাফার ও নৃত্যশিল্পী আকরাম খান কোম্পানিতে ঢাকার মো. হানিফের সুযোগ পাওয়া। ইতালির সামার ইনটেনসিভ প্রোগ্রামে অংশ নেন হানিফ। ওই কোম্পানির পরিচালনায় বাংলাদেশের তরুণেরা নাচ করবেন বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ উদ্যাপনের সাংস্কৃতিক আয়োজনে। এ বছর গ্যেটে ইনস্টিটিউটের সহায়তায় সমসাময়িক নাচের প্রশিক্ষণ নিয়েছেন একঝাঁক তরুণ। জার্মান শিল্পী টমাস বুঙ্গারের হাত ধরে তাঁরা করেছেন বেশ কিছু নতুন প্রযোজনা। সেগুলো প্রশংসাও কুড়িয়েছে। কানাডীয় গবেষক ও নৃত্যশিল্পী সাশার জারিফের প্রশিক্ষণে ‘চাঁদ: দ্য রিফ্লেকশন অব আ উইশ’ প্রযোজনাটিও কর্মশালার ফল।

বেশ কিছু নৃত্যনাট্য নির্মিত হয়েছে এ বছর। ভিয়েতনাম দূতাবাসের আহ্বানে দেশটির নেতা হো চি মিনের জীবনী নিয়ে পূজা সেনগুপ্তর দল তুরঙ্গমী ড্যান্স থিয়েটার মঞ্চে আনে হো চি মিন। ওয়ার্দা রিহাবের ধৃতি নর্তনালয় করেছে সম্পূর্ণা ও মায়ার খেলা নামের নতুন দুই নৃত্যনাট্য। বছরের সফল ও সেরা উদ্যোগটি ছিল আন্তর্জাতিক নৃত্য উৎসব ‘ওশান ড্যান্স ফেস্টিভ্যাল’। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে এতে যোগ দেন ৮১ জন নৃত্যশিল্পী, গবেষক ও কোরিওগ্রাফার। সমসাময়িক নাচের নতুন সব পরিবেশনা, ধারণার পাশাপাশি ছিল সেমিনার। এ প্রসঙ্গে উৎসবের প্রধান কিউরেটর লুবনা মারিয়াম বলেন, ‘সাংস্কৃতিক পর্যটনকে উৎসাহিত করার মাধ্যমে আমরা নতুন কিছু করতে চেয়েছি। দশকের পর দশক অনুকরণ করা পুরোনো নাচের বদলে নতুন কিছু করার সেই প্রত্যয় সফল হয়েছে।’

শিল্পী সামিনা হোসেন প্রেমা বলেন, ‘দীর্ঘদিন নৃত্যশিল্পীরা নিজের একার কাজ নিয়ে ব্যস্ত থেকেছেন। কিন্তু এই উৎসবের কারণে তাঁদের ভেতরে ঐক্য ও নান্দনিক প্রতিযোগিতার সৃষ্টি হয়েছে। অন্যের চেয়ে ভালো করতে বদ্ধপরিকর ছিলেন সবাই। তাঁরা সংগঠিত হয়ে কাজ করা শিখেছেন।’ অন্যদিকে নাচের ডিগ্রি নেওয়া, বাইরে পড়তে যাওয়া, ফিরে এসে চর্চা করা, স্কুল করার সাহসও বেড়েছে আমাদের তরুণদের।’

অন্যদিকে শিল্পী শর্মিলা বন্দ্যোপাধ্যায় মনে করেন, ‘আমাদের নাচ আন্তর্জাতিক মানে পৌঁছালেও তরুণদের মানসিকতায় পরিবর্তন আসছে না। তিনি বলেন, ‘তাঁদের পরিশ্রমের ঘাটতি আছে। দৈনিক অনুশীলন না করলে শেখা বিষয়গুলোয় পারদর্শিতা আসবে না।’

ঢালিউডে নাচের অবস্থা শোচনীয়। দুর্বোধ্য অপ্রাসঙ্গিক অঙ্গভঙ্গিকে এখানে নাচ হিসেবে চালিয়ে নেওয়া হচ্ছে। কোনো কোনো ছবিতে ভারতের কলকাতার কোরিওগ্রাফারদের সহায়তায় খানিকটা দৃষ্টিসহনীয় করার চেষ্টা করছেন পরিচালকেরা। শিল্পী শিবলী মহম্মদ এ প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘দেশে বড় শিল্পী ও গুরু থাকলেও চলচ্চিত্রে তাঁদের অবদান রাখার সুযোগ নেই। এটা দুঃখজনক।’

তবে ইতিমধ্যে বলিউডে কাজ শুরু করেছেন বাংলাদেশের তরুণ মোফাসসাল আল আলিফ। সাধনার বৃত্তি নিয়ে সেখানে শিখতে গিয়ে জায়গা করে নিয়েছেন তিনি।