স্মৃতিজাগানিয়া মাইলসের কনসার্টে আপ্লুত দর্শক
সেই ১৯৭৯ সালে যাত্রা শুরু। শুরু থেকেই মাইলসের কনসার্ট মানেই তারুণ্যের উন্মাদনা। দেশের অনন্য এই গানের দল চার দশকেও যে সমান জনপ্রিয়, তা আরও একবার প্রমাণিত হলো। গতকাল মঙ্গলবার রাতে ঢাকার বসুন্ধরা আন্তর্জাতিক কনভেনশন সেন্টারের বসুন্ধরা রাজদর্শন হলে মাইলসের ৪০ বছর পূর্তি উদ্যাপনের সমাপনী অনুষ্ঠানে মাইলসের গানে গানে মেতে ওঠেন নানা বয়সের ভক্তরা। একের পর এক পুরোনো জনপ্রিয় গান ভক্তদের স্মৃতিকাতর করে, আপ্লুত হন তাঁরা।
জমকালো এ অনুষ্ঠান দুটি পর্বে বিভক্ত ছিল। অনুষ্ঠান শুরু হয় সন্ধ্যা ৭টায়। প্রথম পর্বে হলভর্তি দর্শকের সামনে দেশের পাঁচটি ব্যান্ড দল মাইলসের গান গেয়ে তাদের ট্রিবিউট করে। প্রথমেই গান শুরু করে ব্যান্ডদল ভাইকিংস। তারা মাইলসকে ট্রিবিউট করে গেয়ে শোনায় মাইলসের ‘শান্তি চাই’ গানটি। প্রথম গানেই উপস্থিত দর্শকদের করতালিতে মুখর পুরো হল। একে একে ওয়ারফেজ ‘শেষ ঠিকানা’, সোলস ‘গুঞ্জন শুনি’, দলছুট ‘যাদু’, ফিডব্যাক ‘ভালোবাসো যারে’ গানগুলো পরিবেশন করে। মাইলসের বিভিন্ন অ্যালবামের গানের গীতিকারেরা মাইলসকে নিয়ে স্মৃতিচারণা করেন। গীতিকারেরা শোনান মাইলসের গান লেখা ও তৈরির পেছনের কথা। কীভাবে গানগুলো তাঁরা তৈরি করেছিলেন। ফাঁকে ভক্তরাও মাইলসের গানের সঙ্গে তাদের জীবনের সম্পৃক্ততা নিয়ে কথা বলেন।
মাইলসের ‘পলাশীর প্রান্তর’ গানসহ অনেক জনপ্রিয় গানের গীতিকার লতিফুল ইসলাম শিবলী শুভ কামনা জানিয়ে বলেন, ‘একটা ব্যান্ডের ৪০ বছর পার করা সোজা কথা নয়। মাইলস সেটা পেরেছে। আমি নিজেও মাইলসের ভক্ত। অতীতের মতো ভবিষ্যতেও মাইলস বাংলা ব্যান্ড সংগীতকে বিশ্বে ছড়িয়ে দেবে।’
দ্বিতীয় পর্ব শুরু হওয়ার আগে মাইলসের ৪০ বছরের যাত্রার ওপর একটি প্রামাণ্যচিত্র দেখানো হয়। এরপরই সঞ্চালক আজরা মাহমুদ মাইলস ব্যান্ডকে মঞ্চে ডাকেন। মঞ্চে উঠেই দলের অন্যতম সদস্য হামিন আহমেদ বলে ওঠেন ‘ইটজ মাইলস টাইম’। শাফিন আহমেদ বলেন, ‘আজ আপনাদের সঙ্গে অনেকক্ষণ সময় কাটাব।’ শুধু এটুকুই। তারপর শুরু হয় গান। শাফিন আহমেদ শুরু করেন ‘পাহাড়ি মেয়ে’। এরপর হামিন আহমেদ কণ্ঠে তোলেন ‘সুপ্ত বাসনা’। টানা মাইলসের পরিবেশনা চলতে থাকে। একে একে ‘প্রিয়তমা’, ‘কী জাদু’, ‘চাঁদতারা’—গানগুলো পরিবেশন করেন তাঁরা। এরপর মঞ্চে ওঠেন তিনজন মাইলসভক্ত। যারা মাইলসের ‘নীলা’ গানের কনটেস্টে সেরা বিজয়ী হয়েছেন। মাইলসের সঙ্গে মঞ্চে নীলা গানটি গেয়ে শোনান তাঁরা। দর্শক অনুরোধের পর গানটি আবার গেয়ে শোনান হামিন। এরপর একাধিক গানের কোলাজ গেয়ে শোনান। চাঁদতারা, পিয়াসি মনসহ বহু জনপ্রিয় গান।
মাইলসের চার দশকের এই উদ্যাপন শুরু হয় গত ২১ জুন। প্রথমে যুক্তরাষ্ট্রের পথে রওনা করে গানের দল মাইলস। উদ্দেশ্য—দলটির ৪০ বছর উদ্যাপনের কনসার্টে অংশ নেওয়া। একে একে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ায় ২৭টি কনসার্ট করেন তাঁরা। দেশে দেশে গান শুনিয়ে মুগ্ধতা ছড়িয়ে শ্রোতাদের ভালোবাসা নিয়ে মাইলস নভেম্বরে দেশে ফিরে। দলটির গিটারিস্ট ও ভোকাল হামিন আহমেদ বলেন, একটি দল ৪০ বছর জনপ্রিয়তা নিয়ে টিকে থাকা কম কথা নয়। তাই ৪০ বছর উদ্যাপনের এই উৎসবকে স্মরণীয় করে রাখতে চেয়েছেন তাঁরা। তাই উদ্যাপনের শুরুটা করেছেন দেশের বাইরে গিয়ে।
হামিন বলেন, ‘দেশের সীমানা পেরিয়ে বিভিন্ন দেশে মাইলসের অগণিত ভক্ত আছেন। ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশের পূর্ণাঙ্গ কোনো ব্যান্ড হিসেবে মাইলস প্রথম যুক্তরাষ্ট্রে সফর করে। তখন থেকেই ২০১২ সাল পর্যন্ত দুই বছর পরপর দেশের বাইরে আমরা নিয়মিত শো করেছি। সেই কারণে দেশের বাইরে আমাদের বিশাল এক ভক্তমহল আছে। ৪০ বছর উদ্যাপনের শুরুটা তাঁদের ভাগাভাগি করতে চেয়েছি। অভূতপূর্ব সাড়া পেয়েছি।’
১৯৭৯ সালে ফরিদ রসিদের হাত ধরে মাইলসের পথচলা শুরু হয়। শুরুতে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের গান গাইতো মাইলস। তাদের সঙ্গে একরকম পেশাদার ব্যান্ড হিসেবেই চুক্তি করেছিল হোটেলটি। সপ্তাহে পাঁচ দিন তাঁরা সেখানে গান করতেন। মাইলসের সদস্য এখন পাঁচজন—শাফিন আহমেদ, হামিন আহমেদ, মানাম আহমেদ, সৈয়দ জিয়াউর রহমান তূর্য ও ইকবাল আসিফ জুয়েল। তাদের মধ্যে শাফিন, হামিন, মানাম শুরু থেকেই দলের সঙ্গে আছেন।
চার দশকে মাইলস ১১টি অ্যালবাম বের করেছে। ২০১২ সালে প্রতিচ্ছবি ডিলাক্স সবশেষ অ্যালবাম। এরপর আর নতুন অ্যালবাম আসেনি।