ফজলুল হক স্মৃতি পুরস্কার পেলেন সুচন্দা

জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান শুক্রবার ফজলুল হক স্মৃতি পুরস্কার পদক তুলে দেন বিশিষ্ট অভিনেত্রী কোহিনূর আক্তার সুচন্দার হাতে। ছবি: চ্যানেল আইয়ের সৌজন্যে
জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান শুক্রবার ফজলুল হক স্মৃতি পুরস্কার পদক তুলে দেন বিশিষ্ট অভিনেত্রী কোহিনূর আক্তার সুচন্দার হাতে। ছবি: চ্যানেল আইয়ের সৌজন্যে

কিছু মানুষের যেন জন্মই হয় স্বপ্ন দেখার জন্য। দেশকালের বাস্তবতায় সময়ের চেয়ে তাঁরা এগিয়ে থাকেন। ফজলুল হক ছিলেন তেমনই এক অগ্রগামী স্বাপ্নিক মানুষ। স্বপ্ন শুধু নিজেই দেখতেন না, দেখাতেন অপরকেও। চলচ্চিত্রবিষয়ক পত্রিকা ‘সিনেমা’র সম্পাদক এবং প্রথম শিশু চলচ্চিত্র ‘প্রেসিডেন্ট’ এর পরিচালক ফজলুল হককে এভাবেই মূল্যায়ন করলেন বিশিষ্টজনেরা।

বাংলা চলচ্চিত্রে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে এ বছর নির্মাতা হিসেবে ফজলুল হক স্মৃতি পুরস্কার পেলেন কোহিনূর আক্তার সুচন্দা এবং সাংবাদিক রাফি হোসেন। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় রাজধানীর একটি পাঁচতারা হোটেলে আয়োজিত জমজমাট এক আয়োজনের মধ্য দিয়ে গুণী এ দুজন মানুষের হাতে এ পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়।

পুরস্কার দেওয়ার আগে বাংলা চলচ্চিত্র সাংবাদিকতার অগ্রদূত প্রয়াত ফজলুল হকের বর্ণাঢ্য কর্মজীবন নিয়ে শহীদুল আলমের নির্মাণে ৩০ মিনিটের একটি প্রামাণ্যচিত্র দেখানো হয়। সেখানে চলচ্চিত্রসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিত্বরা ফজলুল হকের বর্ণিল কর্মজীবন নিয়ে স্মৃতিচারণা করেন। এরপর ফজলুল স্মৃতি পুরস্কারপ্রাপ্ত প্রয়াত ব্যক্তিদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।

ফজলুল হক স্মৃতি পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে অতিথিদের সঙ্গে পুরস্কৃতরা। ছবি: সংগৃহীত
ফজলুল হক স্মৃতি পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে অতিথিদের সঙ্গে পুরস্কৃতরা। ছবি: সংগৃহীত

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। এ ছাড়া উপস্থিত ছিলেন ইমপ্রেস টেলিফিল্ম ও চ্যানেল আইয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদুর রেজা সাগর, চলচ্চিত্র পরিচালক সালাউদ্দীন জাকী, অভিনেত্রী সুজাতা, কেকা ফেরদৌসী, বাচসাসের সাবেক সভাপতি আবদুর রহমান, বাংলাদেশ পরিচালক সমিতির সভাপতি মুশফিকুর রহমান, লেখক আমীরুল ইসলাম, আল মনসুর, ওমর সানী, মৌসুমী, প্রযোজক ও পরিবেশক সমিতির সভাপতি খোরশেদ আলম, অরুণ চৌধুরীসহ টিভি ও গণমাধ্যমের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা।

নির্মাতা হিসেবে পুরস্কার গ্রহণের পর কোহিনূর আক্তার সুচন্দা বলেন, ‘ফজলুল হক সাহেব রক্ষণশীল, কুসংস্কারে ভরা জাতিকে চলচ্চিত্রের মাধ্যমে জাগিয়ে ছিলেন। তিনি ছিলেন ইতিহাস সৃষ্টি করা ব্যক্তিত্ব। তাঁকে স্যালুট জানাই। ওই মানুষটিকে স্মরণ করে আমাকে সম্মাননা জানানোর জন্য আমি কৃতজ্ঞ।’

চলচ্চিত্র সাংবাদিকতায় পুরস্কার লাভের পর রাফি হোসেন বলেন, ‘ফজলুল হক প্রয়াত হলেও এই স্মৃতি পুরস্কার তাকে বাঁচিয়ে রেখেছে। তাঁর যোগ্য উত্তরসূরি ফরিদুর রেজা সাগরকে ধন্যবাদ। তাঁর কাছে কোনো আবদার নিয়ে গেলে তিনি কখনোই না করেননি। এ পুরস্কার পেয়ে আমি ভীষণভাবে সম্মানিত বোধ করছি। চলচ্চিত্র পরিবারের পক্ষ থেকে প্রযোজক নেতা খোরশেদ আলম প্রয়াত ফজলুল হক স্মৃতি পুরস্কার প্রদানের সঙ্গে জড়িত সবার কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

চলচ্চিত্র সাংবাদিকতায় বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে সাংবাদিক রাফি হোসেন পেয়েছেন ফজলুল হক স্মৃতি পুরস্কার । ছবি: চ্যানেল আইয়ের সৌজন্যে।
চলচ্চিত্র সাংবাদিকতায় বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে সাংবাদিক রাফি হোসেন পেয়েছেন ফজলুল হক স্মৃতি পুরস্কার । ছবি: চ্যানেল আইয়ের সৌজন্যে।

ফজলুল হক স্মৃতি পুরস্কারের সঙ্গে জড়িত তাঁরই কন্যা কেকা ফেরদৌসী জানান, আগামী বছর থেকে নতুন কমিটি করে নতুন আয়োজনে ফজলুল হকের পরবর্তী প্রজন্ম ফরিদুর রেজা সাগরের সন্তানেরা এই পুরস্কার দেবেন।

২০১৯ সালে ফজলুল হক স্মৃতি সম্মাননা প্রাপ্ত ‘হাজার বছর ধরে’ খ্যাত নির্মাতা সুচন্দা ও চলচ্চিত্র সাংবাদিক রাফি হোসেনকে উত্তরীয়, ক্রেস্ট ও পুরস্কারের অর্থমূল্য তুলে দেন মঞ্চে চার অতিথি ইমেরেটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, সালাউদ্দীন জাকী, সুজাতা ও কেকা ফেরদৌসী।

বাংলাদেশের চলচ্চিত্র সাংবাদিকতার পথিকৃৎ ও প্রথম চলচ্চিত্রবিষয়ক পত্রিকা ‘সিনেমা’র সম্পাদক এবং বাংলাদেশের প্রথম শিশুতোষ চলচ্চিত্র ‘প্রেসিডেন্ট’ এর পরিচালক প্রয়াত ফজলুল হক স্মরণে ২০০৪ সাল থেকে এ ‘পদক’ প্রদান করা হচ্ছে। প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক রাবেয়া খাতুন এই পদক প্রবর্তন করেছেন। ফজলুল হক স্মৃতি কমিটি প্রতিবছরই দুজন ব্যক্তিত্বকে এ পুরস্কার দিয়ে আসছে।
ফজলুল হক ১৯৩০ সালে ২৬ মে বগুড়ার এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক রাবেয়া খাতুন তাঁর সহধর্মিণী। জ্যেষ্ঠ পুত্র ফরিদুর রেজা সাগর বিশিষ্ট শিশুসাহিত্যিক, টিভি ব্যক্তিত্ব এবং চ্যানেল আইয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। ছোট ছেলে ফরহাদুর রেজা বাংলাদেশ টেলিভিশনের একসময়ের জনপ্রিয় উপস্থাপক ও বর্তমানে অস্ট্রেলিয়াপ্রবাসী স্থপতি। বড় মেয়ে কেকা ফেরদৌসী বিশিষ্ট রন্ধনবিদ ও ছোট মেয়ে ফারহানা মাহমুদ।

ফজলুল হক ১৯৯০ সালের ২৬ অক্টোবর মৃত্যুবরণ করেন।