বাংলা একাডেমির সম্মানসূচক ফেলোশিপ পেলেন সাত গুণী

বাংলা একাডেমির বার্ষিক সভায় অতিথিদের সঙ্গে সম্মানসূচক ফেলোশিপ পাওয়া গুণীজন এবং পুরস্কার পাওয়া ব্যক্তি ও প্রতিনিধিরা। ছবি: বাংলা একাডেমির সৌজন্যে
বাংলা একাডেমির বার্ষিক সভায় অতিথিদের সঙ্গে সম্মানসূচক ফেলোশিপ পাওয়া গুণীজন এবং পুরস্কার পাওয়া ব্যক্তি ও প্রতিনিধিরা। ছবি: বাংলা একাডেমির সৌজন্যে

ফেলো, জীবন সদস্য, সদস্য ও আমন্ত্রিত অতিথিদের প্রাণবন্ত উপস্থিতিতে উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হলো বাঙালি জাতিসত্তার প্রতীকী প্রতিষ্ঠান বাংলা একাডেমির ৪২তম বার্ষিক সভা। আজ শনিবার অনুষ্ঠিত এ সভা থেকে বিভিন্ন অঙ্গনের সাতজন বিশিষ্ট ব্যক্তিকে প্রদান করা হয় বাংলা একাডেমির এ বছরের সম্মানসূচক ফেলোশিপ। সেই সঙ্গে কবিতা, শিশুসাহিত্য, বিজ্ঞানসাহিত্য ও কথাসাহিত্যে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ পাঁচ লেখককে দেওয়া হয় একাডেমি পরিচালিত পাঁচটি পুরস্কার। এ ছাড়া সভা থেকে ২০১৮-১৯ সালের একাডেমির বার্ষিক প্রতিবেদন এবং ২০১৮-১৯ সালের বাজেট উপস্থাপন করা হয়।

সারা দেশের প্রায় দুই হাজার কবি, সাহিত্যিক, শিল্পী ও বুদ্ধিজীবী এতে অংশ নেন। জাতির মেধা, মনন ও সৃজনশীলতার প্রতীক বাংলা একাডেমির প্রাঙ্গণ তাঁদের আলোচনা–আড্ডায় প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে। তাঁরা বার্ষিক প্রতিবেদন ও বাজেট সম্পর্কে সাধারণ আলোচনায় অংশ নেন। এ সময় সদস্যদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন একাডেমির মহাপরিচালক ও সচিব।

আজ শিশিরভেজা সকালে শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যার পরিচালনায় সংগীত সংগঠন সুরের ধারার শিল্পীদের সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের সঙ্গে জাতীয় পতাকা ও বাংলা একাডেমির পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে সভার কার্যক্রম শুরু হয়। এরপর ছিল পবিত্র ধর্মগ্রন্থ থেকে পাঠ। দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রের প্রয়াত গুণী ব্যক্তিদের স্মরণে শোকপ্রস্তাব পাঠ ও তাঁদের স্মৃতির প্রতি সম্মান জানিয়ে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।

সভায় বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজী ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বার্ষিক প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন এবং একাডেমির সচিব মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেট সম্পর্কে অবহিত করেন। একাডেমির সদস্যরা বার্ষিক প্রতিবেদন ও বাজেট সম্পর্কে সাধারণ আলোচনায় অংশ নেন। মহাপরিচালক সদস্যদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন এবং উত্থাপিত প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে বক্তব্য দেন। সভায় ২০১৮ সালের ৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত ৪১তম বার্ষিক সাধারণ সভার কার্যবিবরণী সারা দেশ থেকে আগত একাডেমির ফেলো, জীবন সদস্য ও সদস্যদের সম্মতিক্রমে অনুমোদন ঘোষণা করেন বার্ষিক সাধারণ সভা ২০১৯-এর সভাপতি এবং বাংলা একাডেমির সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান।

সভায় দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ সাতজন বিশিষ্ট ব্যক্তিকে বাংলা একাডেমি সম্মানসূচক ফেলোশিপ ২০১৯ এবং বাংলা একাডেমি পরিচালিত পাঁচটি পুরস্কার প্রদান করা হয়। বাংলা একাডেমি সম্মানসূচক ফেলোশিপ ২০১৯ প্রাপ্ত ব্যক্তিরা হচ্ছেন সৈয়দ আনোয়ার হোসেন (শিক্ষা ও গবেষণা), শেখ মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ (প্রকৌশল), জাতীয় অধ্যাপক ব্রিগেডিয়ার (অব.) আবদুল মালিক (চিকিৎসাসেবা), কুমুদিনী হাজং (সমাজসেবা), কাঙ্গালিনী সুফিয়া (সংগীত), আলী যাকের (সংস্কৃতি) ও আসাদুজ্জামান নূর (সংস্কৃতি)।

এ ছাড়া প্রাবন্ধিক গবেষক ফরহাদ খান সাহিত্যিক মোহম্মদ বরকতুল্লাহ প্রবন্ধসাহিত্য পুরস্কার ২০১৯; কবি মহাদেব সাহা মযহারুল ইসলাম কবিতা পুরস্কার-২০১৯; কথাসাহিত্যিক পাপড়ি রহমান সা’দত আলি আখন্দ সাহিত্য পুরস্কার ২০১৯; অধ্যাপক শিশিরকুমার ভট্টাচার্য মেহের কবীর বিজ্ঞানসাহিত্য পুরস্কার ২০১৯ এবং মোকারম হোসেন ‘নিসর্গ আখ্যান’ গ্রন্থের জন হালীমা-শরফুদ্দীন বিজ্ঞান পুরস্কার-২০১৯-এ ভূষিত হয়েছেন। সাহিত্যিক মোহম্মদ বরকতুল্লাহ প্রবন্ধসাহিত্য পুরস্কারের অর্থমূল্য এক লাখ টাকা, মযহারুল ইসলাম কবিতা পুরস্কারের অর্থমূল্য এক লাখÿটাকা, মেহের কবীর বিজ্ঞানসাহিত্য পুরস্কারের অর্থমূল্য এক লাখ টাকা, সা’দত আলি আখন্দ সাহিত্য পুরস্কারের অর্থমূল্য ৫০ হাজার টাকা এবং হালীমা-শরফুদ্দীন বিজ্ঞান পুরস্কারের অর্থমূল্য ৩০ হাজার টাকা।

বার্ষিক সভায় (বাঁ থেকে) বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজী, সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান এবং একাডেমির সচিব মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন। ছবি: প্রথম আলো
বার্ষিক সভায় (বাঁ থেকে) বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজী, সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান এবং একাডেমির সচিব মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন। ছবি: প্রথম আলো

ব্রিগেডিয়ার (অব.) আবদুল মালিক, কুমুদিনী হাজং, কাঙ্গালিনী সুফিয়া এবং আলী যাকেরের অনুপস্থিতিতে তাঁদের পরিবারের সদস্যরা ফেলোশিপ গ্রহণ করেন। কবি মহাদেব সাহার অনুপস্থিতিতে তাঁর প্রতিনিধি পুরস্কার গ্রহণ করেন। পুরস্কার ও ফেলোশিপপ্রাপ্ত গুণীজন এবং তাঁদের প্রতিনিধিদের হাতে পুরস্কারের অর্থমূল্য, সম্মাননাপত্র, সম্মাননা স্মারক ও ফুলেল শুভেচ্ছা তুলে দেন বাংলা একাডেমির সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান এবং মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজী।

জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, ‘বাংলা একাডেমি প্রতিষ্ঠার পর থেকে তার সামর্থ্য অনুযায়ী বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের গবেষণায় কাজ করে যাচ্ছে। এই প্রতিষ্ঠানকে ঘিরে মানুষের প্রত্যাশা বিপুল। আজকের সাধারণ সভায়ও একাডেমির সদস্যরা নানা মতামত ও প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন। আমরা আশা করি, আগামী দিনগুলোতে বাংলা একাডেমি সবার সহযোগিতায় তার কার্যক্রম আরও সুচারুরূপে পালন করতে সক্ষম হবে।’

বার্ষিক প্রতিবেদন উপস্থাপন করে হাবীবুল্লাহ সিরাজী বলেন, বাংলা একাডেমি সাম্প্রতিক সময়ে অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং গবেষণা খাতে নতুন নতুন কর্মসূচি গ্রহণ এবং বাস্তবায়ন করে চলেছে। এখন একাডেমি থেকে সাতটি বিষয়ভিত্তিক সাময়িকপত্র নিয়মিত প্রকাশিত হচ্ছে, যা এই প্রতিষ্ঠানের কর্মচাঞ্চল্য এবং বুদ্ধিবৃত্তিক উৎকর্ষের সাক্ষ্য বহন করে।

সাধারণ পরিষদের বার্ষিক সভা উপলক্ষে বাংলা একাডেমির বর্ধমান হাউসে নবনির্মিত বাংলা একাডেমি লোকঐতিহ্য জাদুঘর সর্বসাধারণের পরির্দশনের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।