সপ্তাহে চার দিন কাজ করি

>চারদিকে ছড়ানো তৈমুরের নানান খেলনা। বিশালাকার এক লাইব্রেরিজুড়ে কারিনা কাপুর ও সাইফ আলী খানের পছন্দের নানান বই। দেয়ালে ফ্রেমবন্দী ফেলে আসা নানান মুহূর্ত, আর নতুন-পুরোনো সিনেমার পোস্টার। সাইফ–কারিনার বান্দ্রার অফিসের কথা বলছি। সেখানেই বসেছিল এবারের আড্ডা। শীতের দুপুরে বসা এই আড্ডায় ছেলে তৈমুর, স্বামী সাইফ, শাশুড়ি শর্মিলা ঠাকুর থেকে কারিনা কাপুর খানের সদ্য মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি গুড নিউজ-এর প্রসঙ্গও উঠে এল। প্রথম আলোর মুম্বাই প্রতিনিধি দেবারতি ভট্টাচার্য লিখেছেন সেই আড্ডা থেকে ফিরে।
কারিনা কাপুর খান । ছবি: এএফপি
কারিনা কাপুর খান । ছবি: এএফপি

দেবারতি ভট্টাচার্য: আবার আপনি কমেডি ছবিতে। মানুষকে হাসানো সহজ, না কঠিন?

কারিনা কাপুর খান: আমার তো মনে হয় মানুষকে খুব সহজে কাঁদানো যায়। হাসানো কঠিন। আমি এর আগে কাভি খুশি কভি গাম ছবিতে ‘পু’ হয়ে সবাইকে হাসিয়েছি। যাব উই মেট ছবিতে আমার ‘গীত’ চরিত্রটিও খুব মজার ছিল। গোলমাল থ্রিতেও আমি প্রচুর কমেডি করেছি। এ ছাড়া প্রিয়দর্শনের বেশ কিছু ছবিতে কমেডি চরিত্রে অভিনয় করেছি। 

দেবারতি: গুড নিউজ ছবির শুটিং চলাকালে কি কোথাও নিজের গর্ভকালের কথা মনে পড়েছিল?

কারিনা: হা হা হা। এই ছবিতে আমাকে পুরোপুরি প্রেগন্যান্সি স্যুট পরে শুটিং করতে হয়েছে। লন্ডনের প্রস্থেটিক গ্রাফটিং কোম্পানি এই স্যুটটা বানিয়েছিল। তিন মাস, ছয় মাস, নয় মাস—এই তিন পর্যায়ে তিন ধরনের প্রস্থেটিক পোশাক ছিল। আর প্রস্থেটিক পরে শুটিং করা খুব কষ্টকর। পর্দায় এটাকে পুরো আসল বলে মনে হচ্ছে।

দেবারতি: আউটডোর শুটিংয়ে যখন বাইরে যান তৈমুরকে আপনার সঙ্গে দেখা যায়। ও কি এখন লাইট, ক্যামেরা, শুটিং এসব কিছু বোঝে?

কারিনা: লাল সিং চাড্ডা ছবির শুটিংয়ের জন্য তৈমুর আমার সঙ্গে চণ্ডীগড়, অমৃতসরে গিয়েছিল। আমি ওকে সেটে খুব কম নিয়ে যেতাম। তবে তৈমুর এখন শুধু শুটিং শব্দটুকুই বোঝে। এর বেশি কিছু বোঝে না। 

দেবারতি: এত ব্যস্ততার মধ্যেও তৈমুরকে সঙ্গ দেন কীভাবে?

কারিনা: আমি সময়ের ব্যাপারে খুবই সচেতন থাকি। এই আজকেও দেখুন না। আমি আমার ম্যানেজারকে বলে দিয়েছি যে ১২টা থেকে ৪টা পর্যন্ত আমি সময় দিতে পারব। ৪টার পর আমাকে আর পাবে না। ওই সময় আমি আমার বাচ্চার কাছে যাব। আসলে আমার সময়জ্ঞান ভালো। সময়কে দারুণভাবে আমি ভাগ করতে পারি। আমি ৮ ঘণ্টার বেশি শুটিং করি না। আমার কাজের প্রতি সাইফের কোনো আগ্রহ নেই। ও শুধু জানতে চায় যে আমি কখন বাড়ি ফিরছি। আমি আমার সন্তানের সঙ্গে যথেষ্ট সময় কাটাচ্ছি কি না। এটাই ওর একমাত্র চিন্তা।

দেবারতি: অক্ষয়ের সঙ্গে দীর্ঘদিন পর কাজ করলেন। এই দীর্ঘদিনে অক্ষয়ের মধ্যে কতটা বদল এসেছে?

কারিনা: আমাদের সম্পর্ক ৩০ বছরের। অক্ষয় এখন দুর্দান্ত সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এখন ওর এই সময়টা অমিতাভ বচ্চনের মতো। আমি মনে করি অক্ষয়ের ক্যারিয়ারের এখন স্বর্ণালি সময় চলছে। ও ওর পরিশ্রম, কাজের প্রতি নিষ্ঠা, সঠিক চিত্রনাট্য নির্বাচন এসবেরই প্রতিদান পাচ্ছে। আর এই সাফল্য অক্ষয়ের প্রাপ্য।

দেবারতি: আপনার শাশুড়ি অভিনেত্রী শর্মিলা ঠাকুরের ৭৫তম জন্মদিন গেল। তিনি আপনাকে কীভাবে আরও সমৃদ্ধ করেছেন?

কারিনা: আমি মনে করি তিনি তাঁর সময়কে খুবই আধুনিকভাবে প্রতিনিধিত্ব করেছেন। তাঁর চিন্তাভাবনা অভিনব। তিনি খুব সুন্দরভাবে সবকিছু বজায় রেখে চলেন। স্ত্রী হিসেবে তিনি যেমন দুর্দান্ত ছিলেন, মা হিসেবেও অসাধারণ। তাঁর সবকিছুই আমাকে ভীষণভাবে অনুপ্রাণিত করে। আমি আশা করি, এ প্রজন্মের নারীরাও যেন তাঁর মতো হওয়ার চেষ্টা করেন।

দেবারতি: গুড নিউজ ছবির ব্যাপারে একেকজনের কাছে একেক রকম ব্যাখ্যা। আপনার কাছে ‘গুড নিউজ’ কী?

কারিনা: আমি ছোট ছোট জিনিসের মধ্যে ‘গুড নিউজ’ খুঁজে পাই। এই এখন আমি হালুয়া খাচ্ছি, এতেই আমি খুশি। আমি যখন তৈমুরের সঙ্গে সময় কাটাই, তখন দারুণ খুশি থাকি। আমি চেষ্টা করি তৈমুরের খাওয়ার সময় ওর পাশে থাকতে। তাই আমি সপ্তাহে চার দিন কাজ করি। শুক্র, শনি, রোববার আমি কাজ করি না। 

দেবারতি: নিজেকে কীভাবে চিন্তামুক্ত রাখেন?

কারিনা: আমি তখন সবকিছু থেকে নিজেকে সুইচ অফ করে দিই। তাই আমাকে কোনো অনুষ্ঠানে কম দেখবেন। কাজ হয়ে গেলেই সোজা বাড়ি। পরিবারের সঙ্গে থাকলে আমি সবচেয়ে বেশি রিল্যাক্সড থাকি।

দেবারতি: আপনি রেডিও শো সঞ্চালনা করছেন। কী রকম অভিজ্ঞতা?

কারিনা: দুর্দান্ত। আমাদের এই ‘হোয়াটস উম্যান ওয়ান্ট’ শোতে আলাদা আলাদা ব্যক্তিত্বের আলাদা আলাদা কাহিনি শোনা যায়। এসব কাহিনি খুবই প্রেরণাদায়ক। আমাদের এই শো দারুণ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এই তো সেদিন আমার শোতে শর্মিলা ঠাকুর এসে মাতৃত্ব নিয়ে অনেক কথা বলেছেন। সোনালী বেন্দ্রে বলেছেন নিজেকে কীভাবে ভালোবাসবে। তাপসী পান্নু মেয়েদের নিরাপত্তা নিয়ে অনেক কিছু বলেছেন। এ ধরনের শোয়ের সঙ্গে যুক্ত হতে পেরে আমি গর্বিত।

দেবারতি: সাইফকে একজন অভিনেতা হিসেবে কীভাবে দেখেন?

কারিনা: সাইফ খুবই সাহসী অভিনেতা। ওর পছন্দই সাহসী। সুপারস্টার তো ১০০টা আছেন। কিন্তু আমি মনে করি কেউই সাইফের মতো নন। কারণ, সাইফ সব সময় ওর মনের কথা শুনে চলে। ওর মাথাটাই আলাদা। তা না হলে ২৫ বছর এই ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করার পর সেক্রেড গেমস-এ কাজ করে! আসলে ও কখনো বক্স অফিসের কথা মাথায় রেখে কাজ করে না। অভিনেতা হিসেবে সাইফ দুর্দান্ত।