নানা প্ল্যাটফর্মে আছে সুযোগ, আছে চ্যালেঞ্জও

নির্মাতা আশফাক নিপুণের পরিচালনায় বঙ্গ অরিজিনাল এই শহরে টেলিছবিতে মেহ্‌জাবীন চৌধুরী। এটি বেশ আলোচিত হয়।
নির্মাতা আশফাক নিপুণের পরিচালনায় বঙ্গ অরিজিনাল এই শহরে টেলিছবিতে মেহ্‌জাবীন চৌধুরী। এটি বেশ আলোচিত হয়।

ভিডিও কনটেন্ট প্রদর্শনের ক্ষেত্রে একমাত্র মাধ্যম ছিল টেলিভিশন। গত দশকে সেই ধারায় বেশ পরিবর্তন এসেছে। টেলিভিশনের পাশাপাশি প্রদর্শন মাধ্যম হিসেবে যুক্ত হয়েছে ইউটিউব ও অনলাইন স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম বা অ্যাপসভিত্তিক ওটিটি প্ল্যাটফর্ম। তাতে নির্মাতাদের কনটেন্ট নির্মাণের পরিধি যেমন বেড়েছে, তেমনি তাঁরা মুখোমুখি হয়েছেন নানা চ্যালেঞ্জের।

বিজ্ঞাপনের চাপ, কম বাজেট ও একঘেয়ে গল্পের কনটেন্টের কারণে দর্শক কমে গেছে টেলিভিশনের। প্রযুক্তির পরিবর্তনের কারণে মানুষের দেখার ধরনও পাল্টেছে। মানুষ টেলিভিশনে না দেখে ইউটিউবে কনটেন্ট দেখছে। এখন ইউটিউব চ্যানেলের জন্যই নাটক বানানো হচ্ছে। পাশাপাশি ‘OTT প্ল্যাটফর্ম’—অ্যাপ ডাউনলোড করে একটা নির্দিষ্ট ফি দিয়ে সাবস্ক্রিপশনের পর সেটি দেখতে হয়—এগুলো বাড়ছে। বায়োস্কোপ, বঙ্গবিডি, রবি টিভি প্লাস, সিনেস্পট, বাংলাফ্লিক্স ও ভারতীয় হৈচৈ কাজ করছে। নির্মাতারা মনে করছেন, টেলিভিশনের পাশাপাশি আরও প্রদর্শন মাধ্যম হওয়ায় কাজের পরিধি বেড়েছে। তবে মানসম্পন্ন কনটেন্ট, প্ল্যাটফর্মের নিজস্ব সংকট, ভালো গল্পের অভাব, অভিনয়শিল্পীর স্বল্পতাসহ নানা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ছেন নির্মাতারা।

নির্মাতা তানভীর আহসান বলেন, অনলাইন প্ল্যাটফর্ম আসার কারণে নির্মাতার কাজের পরিধি বেড়েছে। তবে বিদেশি প্ল্যাটফর্মের সঙ্গে দেশি প্ল্যাটফর্মের পাল্লা দিতে হলে তাদেরও ভালো কনটেন্ট লাগবে। ভালো কনটেন্ট বানানোটাই এখন চ্যালেঞ্জ। সবচেয়ে বড় ব্যাপার হলো, ভালো কাহিনি কিংবা গল্প। ইন্ডাস্ট্রিতে ভালো গল্পের অভাব প্রচুর।

নির্মাতা মিজানুর আরিয়ানের কাছে চ্যালেঞ্জ হলো কনটেন্টটি বিশাল দর্শকের কাছে পৌঁছাল কি না, সেটি। তিনি বলেন, ‘কনটেন্ট আমরা বানাই দর্শকের জন্য। দর্শক যেখানে আরামে কনটেন্ট দেখতে পারবে, ওই জায়গাটাতেই দেখবে। একটা জিনিস প্রথমে নিশ্চিত করতে হবে, দর্শক যেন দেখার সুযোগ পায়। আমি ভালো কনটেন্ট বানালাম কিন্তু দর্শক দেখতে পারল না, তাহলে হবে না। চ্যালেঞ্জ আছে

ভালো কনটেন্ট বানানোতে, ভালো গল্প লেখায়। আমাদের গল্পের প্রচুর সংকট। আমার মনে হয়, বাজেটের চেয়ে গল্পের সংকট বেশি। পাশাপাশি নিশ্চিত করতে হবে ওই ভালো গল্পই যেন ভালো বাজেট পায়। টিভি, ইউটিউব, অ্যাপস যে মাধ্যমই আসুক, প্রথম কথা কোয়ালিটি কনটেন্ট। দ্বিতীয় কথা হলো দর্শকের আরাম করে দেখার সুযোগ থাকতে হবে।’

নির্মাতা আশফাক নিপুণ টিভির পাশাপাশি নানা প্রদর্শন মাধ্যম তৈরির ব্যাপারটি দেখছেন নানা দৃষ্টিকোণ থেকে। প্রথমেই তিনি টেনে আনলেন টিভি ও ইউটিউবের প্রদর্শন মাধ্যমের পার্থক্য ও এর ব্যবহারের বিষয়টি নিয়ে। এই নির্মাতা বলেন, ‘টেলিভিশনে যেকোনো গল্প দিলেই তারা নেবে না। তারা যাচাই–বাছাই করবে। দেখভালের ব্যাপার আছে। কিন্তু ইউটিউবের জন্য কোনো নিয়মের বালাই নেই। যার ফলে যেকোনো ধরনের কনটেন্ট চলে আসতে পারে। এটা একটা রিস্কের জায়গা। যুক্তি হচ্ছে, টেলিভিশন হলো ড্রয়িংরুম মিডিয়া। ইউটিউব একদম ব্যক্তিগত। টেলিভিশনে চেক অ্যান্ড ব্যালেন্স আছে, যেটা ইউটিউবে নেই। এটা বড় রকমের পরিবর্তন ইন্ডাস্ট্রিতে। যেহেতু ইউটিউবে কোনো ধরনের নিয়ম ছাড়াই আপনি কনটেন্ট দিতে পারেন, সেহেতু কনটেন্ট ভালো ও মানসম্পন্ন করার দায়িত্ব নির্মাতারই বেশি।’

ওটিটি প্ল্যাটফর্ম আসার কারণে নির্মাতাদের কাজের পরিধি বেড়েছে ঠিকই, কিন্তু বেশির ভাগ প্ল্যাটফর্মই বিশাল দর্শককে কনটেন্টটি দেখাতে পারছে না। নিপুণ এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘এই প্ল্যাটফর্মগুলোর একটা সীমাবদ্ধতা আছে। যেকোনো প্ল্যাটফর্মেই কোনো মোবাইল অপারেটরের কানেকশন ছাড়া কনটেন্ট দেখা সম্ভব নয়। দেখতে চাইলে তাদের ওই কোম্পানির সিম নিয়ে দেখতে হবে। এটা একটা বড় চ্যালেঞ্জ প্ল্যাটফর্মগুলোর জন্য। আমরা চাই, আমাদের কাজ যেন একটা বিশাল দর্শক দেখে। এই প্ল্যাটফর্মের কাজগুলো দেশের বাইরে দেখা যায় না। এগুলো যাতে সবাই দেখতে পারে, এই ব্যবস্থা করতে হবে। সবার কাছে পৌঁছাতে হবে। যদি একটি সিম দিয়ে তাদের প্ল্যাটফর্মের কাজ দেখতে হয়, তাহলে জনপ্রিয় হওয়ার সুযোগ কম।’

অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলোতে দর্শকের আগ্রহ ও সংকট দুই বিষয় নিয়েই কথা বললেন বায়োস্কোপের কনটেন্ট অপারেশন ম্যানেজার রাজভিয়া হোসেন। তিনি বলেন, ‘গত বছরে ওয়েব সিরিজের দিকে দর্শকের আগ্রহ বেশি ছিল। একটা সিরিজের প্রথম মৌসুম শেষ হলেই দ্বিতীয় মৌসুমের জন্য অনুরোধ করেছে দর্শকেরা। আর নির্মাতাদের জন্য সবচেয়ে বেশি চ্যালেঞ্জ হলো—অল্প সময়ে ভালো কনটেন্ট নির্মাণ। আমরা সব সময় দর্শকদের নতুন কিছু দিতে চাই। তাই সময় অনেক কম থাকে। কম সময়ে কনটেন্ট তৈরির জন্য যে ধরনের প্রস্তুতি দরকার, আমাদের ইন্ডাস্ট্রির কাঠামো সেভাবে দাঁড়ায়নি। এরপর অভিনয়শিল্পী কম। একই মুখ ঘুরেফিরে দেখতে হচ্ছে। নির্মাতার জন্য ভ্যারিয়েশন আনার ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়। আমরাও রিপিটিশন করতে চাই না। আমরা চাই আরও ভালো গল্প আসুক। গল্পের ক্ষেত্রেও রিপিটেশন করতে চাই না। আমরা চাই নতুন কিছু ব্যতিক্রমী গল্পের কনটেন্ট।’