নারী বিপ্লবের এই ছবিটি সময়োপযোগী

‘জয়নগরের জমিদার’ ছবিতে মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করেছেন ফারজানা ছবি। ছবি: ফেসবুক থেকে
‘জয়নগরের জমিদার’ ছবিতে মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করেছেন ফারজানা ছবি। ছবি: ফেসবুক থেকে

বছরের প্রথম শুক্রবারে মুক্তি পায়নি কোনো ছবি। রাত পোহালেই ২২টি হলে মুক্তি পাবে ২০২০ সালের প্রথম ছবি ‘জয়নগরের জমিদার’। আবু সাঈদ খান প্রযোজিত, এম সাখাওয়াৎ হোসেন পরিচালিত এ ছবিতে মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করেছেন ফারজানা ছবি। সঙ্গে আছেন আরমান পারভেজ মুরাদ ও আবু সাঈদ খান। আলাপ হলো নারীপ্রধান এই গল্পের মূল অভিনয়শিল্পী ফারজানা ছবির সঙ্গে।

‘জয়নগরের জমিদার’ ছবিতে আপনি কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেছেন, আপনার চরিত্রটি কেমন?

‘জয়নগরের জমিদার’ মূলত নারী বিদ্রোহের গল্প। আমি এ চলচ্চিত্রে ‘বড় রানি’ চরিত্রে অভিনয় করেছি। নারীর মৌলিক অধিকার এবং নারীমুক্তির প্রয়াসে বড় রানি তথাকথিত জমিদারি প্রথার নির্যাতন ও নিপীড়নের বিরূদ্ধে সোচ্চার হয়ে সংঘবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তোলে। এটি আমার অভিনীত প্রথম বাণিজ্যিক ঘরানার চলচ্চিত্র। আর ২০২০ সালের মুক্তিপ্রাপ্ত প্রথম ছবি এটি। এটি দিয়েই এ বছর যাত্রা শুরু করবে আমাদের প্রেক্ষাগৃহগুলো। একজন অভিনয়শিল্পী হিসেবে বড় পর্দায় অভিনয়ের আকাঙ্ক্ষা আমার বরাবরই ছিল। তাই এ কাজটি আমার অভিনয়জীবনের নতুন সংযোজন।

‘জয়নগরের জমিদার’ চলচ্চিত্রের একটি দৃশ্যে ফারজানা ছবি ও আরমান পারভেজ মুরাদ। ছবি: ফেসবুক থেকে
‘জয়নগরের জমিদার’ চলচ্চিত্রের একটি দৃশ্যে ফারজানা ছবি ও আরমান পারভেজ মুরাদ। ছবি: ফেসবুক থেকে

এই চরিত্রের জন্য কীভাবে প্রস্তুতি নিয়েছেন?

ব্যক্তি ছবি এবং ‘বড় রানি’ চরিত্রের যাপিত জীবন সম্পূর্ণ আলাদা। তাই এই চরিত্র রূপায়ণের জন্য আমার বিশেষ প্রস্তুতির নিতে হয়েছিল। আমি সেই সময়ের প্রচুর বই পড়েছি। সত্যি বলতে কি, আমরা যতই নারী স্বাধীনতা এবং নারী অধিকার নিয়ে কথা বলি না কেন, আসলে আমরা একটি খোলসে জীবন যাপন করছি। বাইরে থেকে মসৃণ মনে হলেও ভেতরটা দগদগে, ক্ষতবিক্ষত। এমন একটি সময়ে নারী বিপ্লবের এই ছবিটি সময়োপযোগী বলে আমার মনে হয়েছে; যা দর্শকের সামনে অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতের কিছু খণ্ডচিত্র উপস্থাপন করবে।

কোথায় শুটিং হয়েছে?

২০১৯ সালের শুরুতে সব মিলিয়ে ২৬ দিন ধরে চলেছে শুটিং। এটি নির্দিষ্ট সময়কে ধরে কাহিনিনির্ভর চলচ্চিত্র। তাই সুনির্দিষ্ট সময়কাল বিবেচনা করে কালিয়াকৈর জমিদারবাড়ি, নাটোরের রাজবাড়িসহ দেশের বিভিন্ন প্রত্যন্ত অঞ্চলের পুরোনো সব জমিদারবাড়িতে শুটিং হয়েছে।

শুটিংয়ের অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?

চলচ্চিত্রে একটি অস্থিতিশীল সময় চলছে। এই সময় এ ধরনের একটি ইতিহাসনির্ভর ভিন্নধারার সিনেমা নির্মাণের জন্য চলচ্চিত্রের প্রতি ভালোবাসা এবং নিষ্ঠা—দুটিই প্রয়োজন। সেই বিবেচনায় প্রযোজক আবু সাঈদ খান ও পরিচালক এম সাখাওয়াৎ হোসেন তাঁদের এ প্রচেষ্টার জন্য প্রশংসার দাবিদার। এ চলচ্চিত্রের সামগ্রিক আয়োজন ছিল বেশ বিস্তৃত। অভিনয়শিল্পীরা প্রত্যেকেই নিজ নিজ অবস্থান থেকে সর্বোচ্চ ভালো কাজটুকু দর্শকদের দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। আশা করি, দর্শক ছবিটি দেখে বিমুখ হবেন না।

ফারজানা ছবি। ছবি: ফেসবুক থেকে
ফারজানা ছবি। ছবি: ফেসবুক থেকে

আপনি বললেন চলচ্চিত্র অস্থিতিশীল সময়ের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে। এর কারণ কী?

প্রথমত, আমাদের দেশীয় চলচ্চিত্রে অর্থ লগ্নিকারীরা এখন আর সংঘবদ্ধ নেই। দ্বিতীয়ত, হলের সংখ্যা কমে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। প্রায় ১ হাজার ৩০০ হল কমে মাত্র ২৫০টিতে এসে দাঁড়িয়েছে। বহুদিনের ঐতিহ্যবাহী প্রেক্ষাগৃহগুলো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। যদি প্রদর্শনের জন্য হলই না থাকে, তবে ছবি নির্মাণ তো ধীরে ধীরে কমবেই।

চলচ্চিত্রে কি নিয়মিত হওয়ার ইচ্ছা আছে?

অবশ্যই আমি চলচ্চিত্রে নিয়মিত হব। দর্শক নাটকে আমাকে যেমন বৈচিত্র্যময় সব চরিত্রে দেখেছেন, চলচ্চিত্রেও আমার সেই চেষ্টা অব্যাহত থাকবে। সত্যি বলতে কি, আমি তো অভিনয়ের মানুষ। দিনশেষে অভিনয়টাই বড় কথা। অভিনয়ের মাধ্যমগুলোকে কখনো আলাদা করে ভাবিনি। আমার কাছে কাজটাই মুখ্য। তাই সব কটি মাধ্যমেই নিরলসভাবে কাজ করে অভিনয়ের মধ্যেই বেঁচে থাকতে চাই।

‘জয়নগরের জমিদার’ ছবিতে মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করেছেন ফারজানা ছবি। ছবি: ফেসবুক
‘জয়নগরের জমিদার’ ছবিতে মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করেছেন ফারজানা ছবি। ছবি: ফেসবুক

বর্তমানে আর কী কী কাজ করছেন?

বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে পান্থ শাহরিয়ারের রচনা ও মাসুদ চৌধুরীর পরিচালনায় বিশেষ নাটক ‘সত্য গল্পের অসত্য উপাখ্যান’, কায়সার আহমেদের পরিচালনায় দীপ্ত ধারাবাহিক ‘বকুলপুর’, সৈম্য নজরুলের পরিচালনায় দুরন্ত টেলিভিশনের ধারাবাহিক ‘মেছো তোতা গেছো ভূত’, ধারাবাহিক নাটক ‘আরশীনগর’, অরণ্য আনোয়ারের রচনা ও পরিচালনায় ‘চান্দের বুড়ি নোয়াখালী’সহ বেশ কিছু খণ্ডনাটকে কাজ করছি।

আপনার একটি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র রাজস্থান ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে নির্বাচিত হয়েছে। এর বিষয় কী?

হ্যাঁ, মিজানুর রহমান লাবুর চিত্রনাট্য ও পরিচালনায় স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র, ‘মালা ভাবী’। পাপ-পুণ্য ও কর্মফলের সঙ্গে প্রকৃতির অতিপ্রাকৃত সংযোগ এর মূল বিষয়বস্তু। এটিও আমার ভীষণ পছন্দের একটি কাজ।

দর্শক কেন দেখবেন ‘জয়নগরের জমিদার’?

সমসাময়িক গল্পভাবনা এবং একই ধাঁচে নির্মিত চলচ্চিত্রের ভিড়ে এটি সম্পূর্ণ মৌলিক গল্প। ভিন্ন নির্মাণশৈলীর একটি নিরঙ্কুশ দেশীয় চলচ্চিত্র; যা আমাদের ইতিহাস ও শিকড়ের কথা বলে। এ জন্যই দর্শক এই সিনেমাকে ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করবেন বলে আমি আশাবাদী।