এক ডজন সত্যিকারের হিরো

>টম ক্রুজের মিশন ইম্পসিবল থেকে শুরু করে টম হল্যান্ডের স্পাইডারম্যান—সিনেমায় সব হিরোই তাঁদের কাল্পনিক চরিত্রগুলোতে অভিনয় করে বাঁচিয়েছেন হাজার হাজার মানুষের জীবন। থাকুক এলিয়েনদের হুমকি বা থানোসের মতো মহাভিলেন, মুভি আর সিরিজে মানবজাতিকে বাঁচিয়ে প্রায়ই প্রশংসা ও হাততালি পান তাঁরা। কিন্তু বাস্তবেও তাঁদের অনেকেই সুপারহিরো। পর্দার পেছনেও জীবন বাজি রেখে অন্যকে বিপদ থেকে মুক্ত করতে পিছপা হন না তাঁরা। এমন এক ডজন সত্যিকারের ‘হিরো’ নিয়ে আমাদের এবারের আয়োজন।
কেট উইন্সলেট ও রিচার্ড ব্র্যানসনের মা
কেট উইন্সলেট ও রিচার্ড ব্র্যানসনের মা

কেট উইন্সলেট
টাইটানিক ছবির শেষ দৃশ্যে প্রেমিক জ্যাককে বাঁচাতে পারেননি রোজ। বরফঠান্ডা পানিতে নেমে সাহসিকতা দেখানো সম্ভব ছিল না। তবে বাস্তবে ‘রোজ’ চরিত্রের সেই অভিনেত্রী কেট উন্সলেটকে ঠান্ডা–গরম, আগুন–পানি কিছুই দমাতে পারে না। অস্কার বিজয়ী এই অভিনেত্রীর ২০১১ সালের এক ঘটনাতে সবাইকে বুঝিয়ে দিয়েছেন বাস্তবের ‘হিরো’ কেমন হয়। ব্রিটিশ ধনপতি রিচার্ড ব্র্যানসনের ৭০ মিলিয়ন ডলারের বিরাট এক বাড়িতে আগুন ধরে যায়। বাড়িতে সে সময় ছিলেন রিচার্ডের বৃদ্ধ মা। আগুন দেখে সবাই বেরিয়ে এলেও বার্ধক্যের কারণে দ্রুত বেরিয়ে আসতে পারছিলেন না বাড়ির সেই জ্যেষ্ঠ সদস্য। পরে অভিনেত্রী কেট উন্সলেট ঘটনাস্থলে ত্রাণকর্তা হয়ে আবির্ভূত হন। কেটের সাহসিকতায় বেঁচে যান রিচার্ডের ৯০ বছর বয়সী মা।

অজ্ঞান হয়ে যাওয়া তরুণীর পাশে জেনিফার লরেন্স
অজ্ঞান হয়ে যাওয়া তরুণীর পাশে জেনিফার লরেন্স

জেনিফার লরেন্স
২০১২ সালের জুনের ঘটনা। ক্যালিফোর্নিয়ায় নিজের বাসায় হাঁটাহাঁটি করছিলেন অস্কারজয়ী অভিনেত্রী জেনিফার লরেন্স। সামনের বাসার এক তরুণীকে হঠাৎ অজ্ঞান হতে দেখে ছুটে যান তিনি। তিনি যে এত বড় একজন তারকা, এসব ভুলে বাড়ির পাশের রাস্তায় বসেই প্রাথমিক চিকিৎসা দেন ওই মেয়েকে। এরপর ওই মেয়েকে দ্রুত হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থাও করেন লরেন্স।

হারিকেনে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের উদ্ধার করছেন শন পেন
হারিকেনে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের উদ্ধার করছেন শন পেন

শন পেন
দুবার একাডেমি অ্যাওয়ার্ড বিজয়ী শন পেন যেমন অভিনয়ের ব্যাপারে একাগ্র, তেমনই মানবসেবাতেও তিনি বদ্ধপরিকর। বিপদগ্রস্ত মানুষ দেখলেই তিনি নিজেকে ধরে রাখতে পারেন না। সব ভুলে ঝাঁপিয়ে পড়েন বিপদে পড়া মানুষকে বাঁচাতে। ২০০৫ সালের হারিকেন ক্যাটরিনা যখন আঘাত হানে যুক্তরাষ্ট্রে, সে সময় পাওয়া যায় শন পেনের সেই সাহসী রূপ। তিনি ছুটে যান হারিকেনে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের সহায়তায়। ব্যক্তি উদ্যোগেই উদ্ধার করেন হারিকেনের তাণ্ডবে আটকা পড়া ৪০ জনকে।

দুর্ঘটনায় আক্রান্ত গাড়ি চালকের সঙ্গে জেমি ফক্স
দুর্ঘটনায় আক্রান্ত গাড়ি চালকের সঙ্গে জেমি ফক্স

জেমি ফক্স
হলিউড অভিনেতা জেমি ফক্স তখন ক্যালিফোর্নিয়ার নিজের বাড়িতে। অদূরেই একটি গাড়ি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার বাইরে ছিটকে পড়ে। চোখের পলকে তাতে আগুনও ধরে যায়। এই দৃশ্য জেমির চোখে পড়তেই ক্ষিপ্রতার সঙ্গে বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসেন এবং ছুটে যান গাড়িটির দিকে। পড়ে জেমি জ্বলন্ত গাড়ি থেকে টেনে বের করে আনেন আহত যাত্রীকে। প্রাণে বেঁচে যান আহত সেই গাড়ির চালক।

ইলিয়াস কাঞ্চন
ইলিয়াস কাঞ্চন

ইলিয়াস কাঞ্চন
১৯৯৩ সালে এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় এলোমেলো হয়ে যায় নব্বই দশকের জনপ্রিয় নায়ক ইলিয়াস কাঞ্চনের জীবন। দুর্ঘটনায় মারা যায় তাঁর স্ত্রী জাহানারা কাঞ্চন। একসময় শুরু করেন ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ আন্দোলন। ২৫ বছর ধরে ইলিয়াস কাঞ্চন সেই আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। তাঁর সংগঠনের নাম এখন জাতীয় স্লোগানে পরিণত হয়েছে। এ আন্দোলন নিয়ে ইলিয়াস কাঞ্চনকে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন মহলের রোষানলে পড়তে হয়েছে। বারবার হয়েছেন হুমকির শিকার। কিন্তু নিজের কাজ করে গেছেন তিনি। মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি তিনি যানবাহনের চালকদের প্রশিক্ষণ কর্মসূচিরও উদ্যোগ নিয়েছেন, হয়ে উঠেছেন পর্দার বাইরে সত্যিকারের ‘হিরো’।

ডুবতে বসা তরুণকে বাঁচানোর পর অরল্যান্ডো ব্লুম
ডুবতে বসা তরুণকে বাঁচানোর পর অরল্যান্ডো ব্লুম

অরল্যান্ডো ব্লুম
লর্ড অব দ্য রিংস ছবির লেগোলাস চরিত্রটি যেমন জনপ্রিয়, পাইরেটস অব দ্য ক্যারাবিয়ান–এর উইল টার্নারও ততটা আলোচিত। দুই চরিত্রেই অভিনয় করেছেন ৪৩ বছর বয়সী হলিউড অভিনেতা অরল্যান্ডো ব্লুম। ২০১৫ সালের কথা। ‘বাবা দিবস’–এ ছেলে ফ্লিনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার বিচে ঘুরছিলেন ব্লুম। এমন সময় দড়ি পেঁচিয়ে প্রায় ডুবে যাওয়া এক ব্যক্তিকে বাঁচান ব্লুম। বাবা দিবসে ছেলের জন্য এর চেয়ে বড় অনুপ্রেরণা আর কী হতে পারে!

টম ক্রুজ
ইথান হান্ট আর টম ক্রুজের মধ্যে তেমন কোনো পার্থক্য নেই। বাস্তবে হোক আর অভিনয়ে, যে কারও বিপদে এগিয়ে যাওয়া এই দুজনেরই অভ্যাস। মানুষকে বিভিন্নভাবে সাহায্য করা নিয়ে টম ক্রুজের একগাদা ঘটনা রয়েছে। কিন্তু সবচেয়ে বড় ঘটনাটি ঘটেছিল ১৯৯৬ সালে, যখন সাগরের মাঝখানে এক জ্বলন্ত নৌকায় আটকে পড়া লোকজনকে শ্বাসরুদ্ধকর এক পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে উদ্ধার করেন টম।

মেরিল স্ট্রিপ
৭০ বছর বয়সী হলিউডের মহাতারকা মেরিল স্ট্রিপ আর সংগীতশিল্পী শের বেশ ভালো বন্ধু। একবার দুই বন্ধুর আইসক্রিম খাওয়ার শখ হলো। বেরিয়ে পড়লেন নিউইয়র্কের রাস্তায়। এমন সময় হঠাৎ এক মেয়ের চিৎকার তাঁদের কানে আসে। এগিয়ে গিয়ে দেখতে পান, বিশালদেহী এক লোক মেয়েটিকে আঘাত করছেন। এ দৃশ্য দেখেই লোকটিকে ধাওয়া করেন দুই তারকাশিল্পী। পরে উদ্ধার হওয়া মেয়েটি টুইটে জানিয়েছিলেন, ‘এ রকম একটা বিপদে আমাকে বাঁচালেন মেরিল স্ট্রিপ আর শের! আমি কৃতজ্ঞ তাঁদের কাছে।’

বেনেডিক্ট কাম্বারব্যাচ
স্ত্রী সোফি হান্টারের সঙ্গে বেনেডিক্ট বেরিয়েছিলেন ঘুরতে। একসময় তাঁর নজরে আসে চার ছিনতাইকারী একজন সাইকেল আরোহীকে ঘিরে ধরেছে। তখনই বেনেডিক্টের ভেতরের ‘হিরো’ জেগে ওঠে। তিনি একাই চার ছিনতাইকারীকে ধরতে ছুটে যান। পর্দার এই শার্লক হোমসকে তো কোটি কোটি মানুষ চেনে। তাই অবধারিতভাবে ছিনতাইকারীরাও চিনে ফেলে তাঁকে, আর এর সঙ্গে সঙ্গেই ভয়ে পালিয়ে যায়।

ভিন ডিজেল
ফাস্ট অ্যান্ড ফিউরিয়াস–এর চরিত্রের সঙ্গে বাস্তবের ভিন ডিজেলের বেশ মিল। দুজনেরই কোনো ভয়ডর নেই। ২০০২ সালের এক ঘটনা থেকে এটা স্পষ্ট হয়। মোটরসাইকেল চালিয়ে যাচ্ছিলেন ভিন। এমন সময় দেখেন, একটি গাড়ি দুর্ঘটনার শিকার হয়ে রাস্তার পাশে পড়ে আছে। সঙ্গে সঙ্গে ছুটে গিয়ে সেই গাড়ি থেকে বের করে আনেন শিশুসহ একটি পরিবারকে। সবাইকে গাড়ি থেকে বের করে আনার কয়েক মিনিটের মধ্যেই বিরাট এক বিস্ফোরণ হয়ে পুরো গাড়ি বিধ্বস্ত হয়ে যায়।

টম হার্ডি
লন্ডনের এক চুরির ঘটনায় টম হার্ডি বেশ সাহসিকতা দেখিয়েছিলেন। অনেকটা সিনেমার মতো করেই দৌড়ে চোরকে তাড়া করেছিলেন টম। বাগান, বিল্ডিং, ওয়াল একের পর এক বাধা পেরিয়ে শেষমেশ ধরেই ফেলেন চোরকে। চোর বেচারা টম হার্ডির চেহারা দেখে একটু চমকেই উঠেছিল। সিনেমার নায়ক সত্যিই তাকে পাকড়াও করল, নাকি এটাও সিনেমা—সেই ভ্রম কাটাতে সময় লেগেছিল চোরের!

টম হল্যান্ড
স্পাইডারম্যানের মানুষ বাঁচানো দেখে অনেক কিশোর-তরুণেরই হিংসে হওয়ার কথা। ‘ইশ্‌! আমিও যদি স্পাইডারম্যানের মতো হতে পারতাম! নিজের পরিচয় লুকিয়ে সবাইকে বাঁচাতাম।’ কিন্তু এ চরিত্রের অভিনেতা টম হল্যান্ড বাস্তবের হিরোও বটে। গত বছরের মাঝামাঝিতে স্পাইডারম্যান: ফার ফ্রম হোম ছবির প্রচারে বেরিয়েছিলেন টম। অটোগ্রাফ, ফটোগ্রাফের জন্য পাগল ভক্তদের নিরাশ করেন না তিনি। নিউইয়র্কে এমনই এক দিনে একগাদা ভক্তের মধ্যে চাপা পড়ে যায় এক কিশোরী। ‘প্যানিক অ্যাটাক’–এর কারণে মেয়েটি আর উঠতে পারছিল না। পরে টম নিজে গিয়ে ভিড় থেকে মেয়েটিকে উদ্ধার করেন।

তথ্যসূত্র: পিপল ম্যাগাজিন