মমতাজউদদীন আহমদ নাট্যজন পুরস্কার পেলেন আসাদুজ্জামান নূর

মমতাজউদদীন আহমদ নাট্যজন পুরস্কার পেলেন আসাদুজ্জামান নূর। ছবি: সংগৃহীত
মমতাজউদদীন আহমদ নাট্যজন পুরস্কার পেলেন আসাদুজ্জামান নূর। ছবি: সংগৃহীত

বহুগুণের মানুষ মমতাজউদদীন আহমদ। লিখেছেন অসংখ্য দর্শকনন্দিত নাটক। নির্দেশনাও দিয়েছেন। নাটক লেখা ও নির্দেশনার পাশাপাশি অভিনেতা হিসেবেও দাগ কেটেছেন দর্শকহৃদয়ে। ছিলেন শিক্ষাবিদ। শিক্ষক হিসেবে তাঁর জনপ্রিয়তা ছিল যথেষ্ট। কাল শনিবার ছিল দেশের নাট্য আন্দোলনের সেই পথিকৃৎ মমতাজউদদীন আহমদের ৮৬তম জন্মদিন। তাঁর না থাকার বাস্তবতাকে মেনে নিয়ে নানা আয়োজনে উদযাপিত হলো জয়ন্তী।

পৃথক দুটি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ভালোবাসা জানানো হলো একুশে পদকজয়ী এই শিল্পীকে। শিল্পীর জন্মদিনে তাঁর নামাঙ্কিত পদক প্রদান করা হয় সংস্কৃতিজন আসাদুজ্জামান নূরকে। প্রকাশিত হয় মমতাজউদদীন আহমদ স্মারকগ্রন্থ। অন্যদিকে গান, কবিতা, নাটকসহ বহুমাত্রিক আয়োজনে সব্যসাচী এই নাট্যব্যক্তিত্বকে শ্রদ্ধা নিবেদন করে তাঁরই হাতে গড়া নাট্যদল থিয়েটার।

গতকাল বিকেলে বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে স্মারকগ্রন্থের প্রকাশনা ও পদক প্রদান অনুষ্ঠানের আয়োজন করে অধ্যাপক মমতাজউদদীন আহমদ ৮৬তম জন্মদিন উদ্‌যাপন জাতীয় পর্ষদ। নাটক ও সংস্কৃতিতে অবদানের জন্য আসাদুজ্জামান নূরকে অধ্যাপক মমতাজউদদীন আহমদ নাট্যজন পুরস্কার-২০১৯ ও পদক প্রদান করা হয়। একই অনুষ্ঠানে মমতাজউদদীন আহমদ স্মারকগ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করেন বরেণ্য চিত্রশিল্পী ও মুক্তিযোদ্ধা শাহাবুদ্দিন আহমেদ। পুরস্কারের সম্মানী হিসেবে আসাদুজ্জামান নূরের হাতে এক লাখ টাকার চেক প্রদান করেন মমতাজউদদীন আহমদের স্ত্রী। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছিলেন সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক। তিনি সম্মাননা স্মারক তুলে দেন আসাদুজ্জামান নূরের হাতে।

অনুষ্ঠানে মমতাজউদদীন আহমদ স্মারকগ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করেন বরেণ্য চিত্রশিল্পী ও মুক্তিযোদ্ধা শাহাবুদ্দিন আহমেদ। ছবি: সংগৃহীত
অনুষ্ঠানে মমতাজউদদীন আহমদ স্মারকগ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করেন বরেণ্য চিত্রশিল্পী ও মুক্তিযোদ্ধা শাহাবুদ্দিন আহমেদ। ছবি: সংগৃহীত

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর আতিউর রহমান। স্বাগত বক্তব্য দেন পর্ষদের সদস্যসচিব ও জুরিবোর্ডের আহ্বায়ক গোলাম কুদ্দুছ। মমতাজউদদীন আহমদের প্রশংসাবচন পাঠ করেন আহ্কাম উল্লাহ্। অনুষ্ঠানে মমতাজউদদীন আহমদের জীবনীভিত্তিক প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শিত হয়। নজরুলসংগীতশিল্পী ফেরদৌস আরা গেয়ে শোনালেন মমতাজউদদীন আহমদের প্রিয় গান ‘আমি চিরতরে দূরে চলে যাব তবু আমারে দেবো না ভুলিতে’ এবং ‘জানি জানি প্রিয়, এ জীবনে মিটিবে না সাধ’।

স্মরণ করল থিয়েটার
মমতাজউদদীন আহমদের তাঁর নিজ হাতে গড়া নাট্যসংগঠন থিয়েটার দেশের প্রধান নাট্য দলগুলোর অন্যতম। থিয়েটার গতকাল তাঁকে স্মরণ করল আনন্দ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে। সন্ধ্যায় বরেণ্য এই নাট্যজনের জন্মদিন পালন করা হয় বেইলি রোডের বাংলাদেশ মহিলা সমিতির নীলিমা ইব্রাহিম মিলনায়তনে।

পুরস্কারের সম্মানী হিসেবে আসাদুজ্জামান নূরের হাতে এক লাখ টাকার চেক প্রদান করেন মমতাজউদদীন আহমদের স্ত্রী। ছবি: প্রথম আলো
পুরস্কারের সম্মানী হিসেবে আসাদুজ্জামান নূরের হাতে এক লাখ টাকার চেক প্রদান করেন মমতাজউদদীন আহমদের স্ত্রী। ছবি: প্রথম আলো

মমতাজউদদীন আহমদের ওপর নির্মিত ‘চোখের আলোয় দেখেছিলেম’ নামে একটি তথ্যচিত্র দেখানো হয়, যার নির্মাতা প্রবীর দত্ত। ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়ের কণ্ঠে আবৃত্তির পর মঞ্চে আসেন অতিথিরা। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। বিশেষ অতিথি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মঞ্চসারথি আতাউর রহমান, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী, নাট্যজন মামুনুর রশীদ, বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের সেক্রেটারি জেনারেল নাট্যজন কামাল বায়েজীদ। সভাপতিত্ব করেন থিয়েটার সভাপতি নিলুফার বানু।

মমতাজউদদীন আহমদের প্রিয় রবীন্দ্রসংগীত ‘আমি অপার হয়ে বসে আছি’ গেয়ে শোনান শিল্পী অনিমা মুক্তি গোমেজ। এরপর মমতাজউদদীন আহমদের লেখা শ্রুতিনাটক ‘বোলনের বউ’ পাঠ করে শোনান মনিরা ইউসুফ মেমী ও জাহিদ হোসেন শোভন। শেষে ছিল তাঁরই লেখা ‘স্পার্টাকাসবিষয়ক জটিলতা’ নাটকের অংশবিশেষের মঞ্চায়ন। মমতাজউদদীন আহমদ শারীরিকভাবে উপস্থিত ছিলেন না অনুষ্ঠানে, কিন্তু পুরো অনুষ্ঠানেই ছিল তাঁর উপস্থিতি। না থেকেও স্মৃতিতে-শ্রদ্ধায় তিনি থাকলেন পুরোটা সময়।

মহিলা সমিতির নীলিমা ইব্রাহিম মিলনায়তনে থিয়েটারের অনুষ্ঠানে অতিথিরা। ছবি: প্রথম আলো
মহিলা সমিতির নীলিমা ইব্রাহিম মিলনায়তনে থিয়েটারের অনুষ্ঠানে অতিথিরা। ছবি: প্রথম আলো

অধ্যাপক মমতাজউদদীন আহমদ রচিত ও নির্দেশিত নাটক ‘সাতঘাটের কানাকড়ি’ এ দেশের নাট্যাঙ্গনে মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত। থিয়েটার প্রযোজিত তুমুল জনপ্রিয় নাটকটি তৎকালীন স্বৈরশাসকের ভিত পর্যন্ত কাঁপিয়ে দিয়েছিল সে সময়। অন্য উল্লেখযোগ্য নাটকগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘বর্ণচোরা’, ‘স্বাধীনতা আমার স্বাধীনতা’, ‘জমিদার দর্পণ’, ‘বটবৃক্ষের ধরমকরম’, ‘ফলাফল নিম্নচাপ’, ‘যামিনীর শেষ সংলাপ’, ‘দুই বোন’, ‘ওহে তঞ্চক’, ‘খামাখা খামাখা’, ‘স্বাধীনতার সংগ্রাম’, ‘নাট্যত্রয়ী’, ‘হৃদয়ঘটিত ব্যাপার স্যাপার’ ইত্যাদি।

তাঁর লেখা নাটক ‘কী চাহ শঙ্খচিল’ ও ‘রাজা অনুস্বারের পালা’ কলকাতার রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠ্য তালিকাভুক্ত হয়েছিল। তাঁর লেখা গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে ‘বাংলাদেশের নাটকের ইতিবৃত্ত’, ‘বাংলাদেশের থিয়েটারের ইতিবৃত্ত’, ‘নীলদর্পণ’ (সম্পাদনা), ‘সিরাজ উদ দৌলা’ (সম্পাদনা) ইত্যাদি।