ঢাকা চলচ্চিত্র উৎসবে পুরস্কার পেল যেসব সিনেমা

ঢাকা চলচ্চিত্র উৎসবের শেষ দিনে ছিল সংগীত পরিবেশনা। ছবি: প্রথম আলো
ঢাকা চলচ্চিত্র উৎসবের শেষ দিনে ছিল সংগীত পরিবেশনা। ছবি: প্রথম আলো

বাউলগান পরিবেশনা, পুরস্কার বিতরণ এবং চলচ্চিত্র প্রদর্শনের মধ্যে দিয়ে শেষ হলো ‘অষ্টাদশ ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব’। নয় দিনের উৎসবের ২২০টি চলচ্চিত্র দেখার অভিজ্ঞতা হলো ঢাকা দর্শকদের। বিভিন্ন বিভাগের এসব চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হয়। সেসব চলচ্চিত্রের মধ্য থেকে বিচারকদের রায়ের ভিত্তিতে শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র নির্মাতাদের পুরস্কার দেওয়া হলো সমাপনী অনুষ্ঠানে। ‘নান্দনিক চলচ্চিত্র, মননশীল দর্শক, আলোকিত সমাজ’ স্লোগান উৎসবটির আয়োজন করে রেইনবো চলচ্চিত্র সংসদ।

সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। বিশেষ অতিথি অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। সভাপতিত্ব করেন উৎসব কমিটির নির্বাহী সদস্য ম. হামিদ। স্বাগত বক্তব্য দেন উৎসব পরিচালক আহমেদ মুজতবা জামাল। অনুষ্ঠানে পুরস্কার গ্রহণের পাশাপাশি গান শোনান নির্মাতা, গায়ক ও অভিনেতা অঞ্জন দত্ত।

বাংলাদেশ প্যানোরমা ফিপ্রেসি জুরি অ্যাওয়ার্ড জিতেছে ‘ন ডরাই’। ছবি: প্রথম আলো
বাংলাদেশ প্যানোরমা ফিপ্রেসি জুরি অ্যাওয়ার্ড জিতেছে ‘ন ডরাই’। ছবি: প্রথম আলো

সমাপনী আয়োজনে উৎসবে প্রদর্শিত চলচ্চিত্রের মধ্য থেকে পূর্ণদৈর্ঘ্য, স্বল্পদৈর্ঘ্য, তথ্যচিত্রসহ পাঁচটি শাখার মোট ১১ বিভাগে পুরস্কার দেওয়া হয়। উৎসবের প্রতিযোগিতা বিভাগে শ্রেষ্ঠ ফিচার ফিল্মের পুরস্কার পেয়েছে ইরানি ছবি ‘ক্যাসেল অব ড্রিম’। শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র হিসেবে এশিয়ান কমপিটিশন বিভাগের নির্মাতা রেজা মিরকারিমি নির্মিত ছবিটি পেয়েছে এক লাখ টাকার পুরস্কার। বাংলাদেশ প্যানোরমা ফিপ্রেসি জুরি অ্যাওয়ার্ড জিতেছে তানিম রহমান অংশু নির্মিত ছবি ‘ন ডরাই’। সিনেমা অব দ্য ওয়ার্ল্ড বিভাগে দর্শকের রায়ে শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র নির্বাচিত ভারতের অঞ্জন দত্ত পরিচালিত ছবি ‘ফাইনালি ভালোবাসা’। উইমেন্স ফিল্ম মেকার সেকশনে স্বল্পদৈর্ঘ্য বিভাগে মেক্সিকোর সান্ড্রা রাইনোসো নির্মিত ছবি ‘ভিডিও টেপ’ জিতে নিয়েছে বিশেষ পুরস্কার। একই বিভাগে শ্রেষ্ঠ স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রে পুরস্কার জিতেছে রাশিয়ার দারিয়া বিনেভসকায়া নির্মিত ছবি ‘মাই নেম ইজ পিতায়া’। একইভাবে শ্রেষ্ঠ ফিচার ফিল্ম পুরস্কার পেয়েছে পোল্যান্ডের ম্যালগোরজাতা ইমিয়েস্কা নির্মিত ছবি ‘অল ফর মাই মাদার’। স্পিরিচুয়াল বিভাগে শ্রেষ্ঠ স্বল্পদৈর্ঘ্য পুরস্কার জিতেছে লুভরো মেরডেন নির্মিত ছবি ‘দ্য স্ট্যাম্প’। একই বিভাগে সেরা ফিচার ফিল্মের পুরস্কার জিতেছে চীনের ইয়েসির নির্মিত ছবি ‘কোয়ালি অ্যান্ড রাইস’।

আজকের পৃথিবীতে ক্রমাগত যন্ত্রের ব্যবহারের সঙ্গে সঙ্গে মানুষ যন্ত্র হয়ে যাচ্ছে, এমন মন্তব্য করে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, ‘মানুষ যাতে ক্রমাগত যন্ত্রের ব্যবহারের সঙ্গে সঙ্গে যন্ত্র না হয়, মানুষ যেন মানুষ থাকে, মানুষের মানবিকতা যেন লোপ না পায়, মানুষের মধ্যে যেন মনুষ্যত্ব হারিয়ে না যায়, সে ক্ষেত্রে চলচ্চিত্র বিরাট ভূমিকা পালন করতে পারে। তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের দেশকে উন্নত রাষ্ট্রে রূপান্তরিত করতে চাই। শুধু উন্নত রাষ্ট্র গঠন করে উন্নতি করা সম্ভব নয়, এ জন্য মানুষের মানবিকতারও উন্নতি প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে চলচ্চিত্র গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।’

সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। ছবি: প্রথম আলো
সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। ছবি: প্রথম আলো

সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ বলেন, ‘সমাজকে পরিবর্তন করার সবচেয়ে বড় এবং সহজ মাধ্যম হলো চলচ্চিত্র। কেননা, চলচ্চিত্র খুব সহজে মানুষকে মানুষের কাছে নিয়ে আসতে পারে। একটা সময় ছিল, যখন পারিবারিক সম্পর্কে দৃঢ় করার মাধ্যমও ছিল চলচ্চিত্র, যা সবার মাঝে সম্পর্কের একটা সেতুবন্ধ তৈরি করত। ভালো চলচ্চিত্র নির্মাণ না হওয়ায় এখন আমরা সেই চলচ্চিত্র থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছি। ভালো কলাকুশলীও তৈরি হচ্ছে না। হলগুলো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। তবে চলচ্চিত্রকে আগের অবস্থানে ফিরিয়ে নিয়ে আসতে আমরা নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি।’

উৎসব পরিচালক আহমদ মুজতবা জামাল বলেন, ‘দেশীয় চলচ্চিত্র ও শিল্প-সংস্কৃতির সঙ্গে বৈশ্বিক সংস্কৃতির মেলবন্ধন ঘটাতে আমাদের এই উৎসব আয়োজন। যার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের জন্য আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্ম তৈরি করারও একটা উদ্দেশ্য কাজ করে। শুধু তা-ই নয়, এই উৎসবের মধ্য দিয়ে দেশীয় চলচ্চিত্রর দর্শক বা চলচ্চিত্রপ্রেমীদের ভালো কিছু দেওয়ার চেষ্টা করে আসছি।’