টোকিওতে তানভীর মোকাম্মেলের 'জীবনঢুলী'

প্রদর্শনীর শেষে প্রশ্নোত্তর পর্বে (বাঁ থেকে) টোকিও বিদেশবিদ্যা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক নাওনোরি কুসাকাবে, তানভীর মোকাম্মেল এবং অধ্যাপক মাসাআকি ওহাশি। ছবি: প্রথম আলো
প্রদর্শনীর শেষে প্রশ্নোত্তর পর্বে (বাঁ থেকে) টোকিও বিদেশবিদ্যা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক নাওনোরি কুসাকাবে, তানভীর মোকাম্মেল এবং অধ্যাপক মাসাআকি ওহাশি। ছবি: প্রথম আলো

বাংলাদেশের বরেণ্য চলচ্চিত্রকার তানভীর মোকাম্মেল সংক্ষিপ্ত এক সফরে টোকিও এসেছেন। জাপান ফাউন্ডেশনের সহায়তায় পরিচালিত এশিয়ান লিডার্স ফেলোশিপ প্রোগ্রামের আমন্ত্রণে প্রামাণ্য চলচ্চিত্রবিষয়ক এক সেমিনারে বক্তব্য দেবেন তিনি। পাশাপাশি একই অনুষ্ঠানে তাঁর ‘বস্ত্র বালিকা’ ছবিটি প্রদর্শন করা হবে। এই অনুষ্ঠানের এক দিন আগে, ২৪ জানুয়ারি, জাপানের সেক্রেড হার্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব সাস্টেইনেবল ডেভেলপমেন্ট তানভীরের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক কাহিনিচিত্র ‘জীবনঢুলী’র একটি প্রদর্শনীর আয়োজন করেছিল। অনুষ্ঠানের যৌথ আয়োজক হিসেবে আরও যে তিনটি সংগঠন এই উদ্যোগের সঙ্গে হাত মেলায়, সেই দলে বাংলাদেশ সাংবাদিক-লেখক ফোরাম জাপানও অন্তর্ভুক্ত।

বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে মূলত জাপানি শিক্ষাবিদ, গবেষক, এনজিওকর্মী ও বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কিত অন্য বিশিষ্ট জাপানিদের সমাবেশে ‘জীবনঢুলী’ দেখানো হয়। ছবির প্রদর্শনীর শেষে সেক্রেড হার্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মাসাআকি ওহাশির উপস্থাপনায় প্রাণবন্ত এক প্রশ্নোত্তর পর্বে দর্শকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন তানভীর মোকাম্মেল।

সুদূর হিরোশিমা থেকে আসা একজন চলচ্চিত্র গবেষক জানতে চেয়েছিলেন, পরিচালক কেন ১৯৭১ সালের ঘটনার আলোকে পাকিস্তানি বাহিনীর নির্মমতার পাশাপাশি ভারতীয় সৈন্যদের যুদ্ধে অংশ নেওয়া দেখাননি। উত্তরে তানভীর মোকাম্মেল উল্লেখ করেছেন, ছবিটি কাহিনিচিত্র হলেও এর পেছনে আছে খুলনার চুকনগর গণহত্যার বিষয়টি, যেটাকে তিনি বাংলাদেশের প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে জনগণের ভোগ করতে হওয়া দুর্দশার আলোকে সাজিয়ে নিয়েছেন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারতীয় বাহিনীর অবদান অস্বীকার করার উপায় নেই। তবে সম্মুখ যুদ্ধ শুরু হয়ে যাওয়ার পর ভারতীয় বাহিনীর লক্ষ্য যেহেতু ছিল ঢাকার পাশাপাশি অন্যান্য প্রধান শহর দখল করে নিয়ে যুদ্ধে পাকিস্তানের দ্রুত পরাজয় নিশ্চিত করা, ফলে সেই পথে অগ্রসর হওয়ার বাইরে দূরবর্তী অনেক গ্রামাঞ্চলে ভারতীয় বাহিনীর আগমন ঘটেনি এবং মুক্তিযোদ্ধারা সেখানে ছিলেন শত্রুকে পরাভূত করার প্রধান শক্তি।

আরেকজন জাপানি দর্শক জানতে চেয়েছিলেন, ছবিতে হিন্দু সম্প্রদায়ের নমশূদ্র গোষ্ঠীকে দেখানোর পেছনে পরিচালকের বিশেষ কোনো উদ্দেশ্য ছিল কি না। উত্তরে তানভীর মোকাম্মেল বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পুরো সময় ধরে পাকিস্তানি বাহিনী সহজ শিকার হিসেবে হিন্দু সম্প্রদায়কে লক্ষ্য ধরে নিয়েছিল এবং নিম্নবর্ণের সহায়-সম্বলহীন হিন্দু গোষ্ঠী এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এদের সেই দুর্দশার কথাই তিনি তাঁর ছবিতে বলতে চেয়েছেন।

প্রশ্নোত্তর পর্বের শেষে যৌথ আয়োজকদের পক্ষ থেকে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন এশিয়ান লিডার্স ফেলোশিপ প্রোগ্রামের প্রতিনিধি এবং বাংলাদেশ সাংবাদিক লেখক ফোরাম জাপানের আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেন। উভয়েই জাপানে বাংলাদেশের সৃজনশীল ধারার সুন্দর একটি ছবি দেখানোর সুযোগ করে দেওয়ার জন্য পরিচালক তানভীর মোকাম্মেলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। এ ছাড়া বাংলাদেশের গুণী চলচ্চিত্র পরিচালকের ছবি দেখতে আসার জন্য দর্শকদের ধন্যবাদ জানান দেলোয়ার হোসেন।