পঞ্চগড়ে ইত্যাদির শুটিংয়ে অগণিত দর্শক

পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় ইত্যাদির শুটিং। ছবি: ফাগুন অডিও ভিশনের সৌজন্যে।
পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় ইত্যাদির শুটিং। ছবি: ফাগুন অডিও ভিশনের সৌজন্যে।

১৭ জানুয়ারি ছিল হাড়কাঁপানো শীত। এই শীত উপেক্ষা করে এসেছিলেন অগণিত দর্শক। তাঁদের সাক্ষী করে ধারণ করা হয়েছে এবারের ইত্যাদি। পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া সরকারি পাইলট মডেল উচ্চবিদ্যালয় মাঠে অনুষ্ঠানের শুটিং শেষ হয়। বিকেল ৫টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত চলে দৃশ্যধারণের কাজ। এমনটাই জানান ইত্যাদির পরিচালক ও উপস্থাপক হানিফ সংকেত।

তিনি জানান, এর আগেও কয়েকটি পর্বে লক্ষাধিক দর্শকের উপস্থিতি ছিল। কিন্তু এবারের পর্ব আগের সবগুলোকে ছাড়িয়ে গেছে। বিকেলের মধ্যেই বিদ্যালয়ের মাঠ পূর্ণ হয়ে যাওয়ায় হাজার হাজার মানুষ আশপাশের গাছ, স্কুলের ছাদ ও রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে মন্ত্রমুগ্ধের মতো অনুষ্ঠান উপভোগ করেছে। তিনি বলেন, ‘শীত এমন পর্যায়ে ছিল যে রাতে দল বেঁধে আমাদের আগুন পোহাতে হয়েছিল।’

ইত্যাদির শুটিংয়ের একটি পর্ব। ছবি: ফাগুন অডিও ভিশনের সৌজন্যে।
ইত্যাদির শুটিংয়ের একটি পর্ব। ছবি: ফাগুন অডিও ভিশনের সৌজন্যে।

হানিফ সংকেত আরও বলেন, ‘৩২ বছর ধরে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে প্রচারবিমুখ, জনকল্যাণে নিয়োজিত মানুষকে খুঁজে এনে তুলে ধরা হয় এ অনুষ্ঠানে। সেই ধারাবাহিকতায় এবার পঞ্চগড় জেলার ইতিহাস, ঐতিহ্যের পাশাপাশি রয়েছে পর্যটকদের জন্য আকর্ষণীয় এবং মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত স্থানগুলোর ওপর তথ্যভিত্তিক প্রতিবেদন। নিয়মিত পর্বসহ এবারও রয়েছে বিভিন্ন সমসাময়িক ঘটনা নিয়ে বেশ কিছু সরস অথচ তীক্ষ্ণ নাট্যাংশ। বরাবরের মতো এবারও ইত্যাদির শিল্পনির্দেশনা ও মঞ্চ পরিকল্পনায় ছিলেন মুকিমুল আনোয়ার।

এবারের ইত্যাদিতে উল্লেখযোগ্য শিল্পীরা হলেন মাসুদ আলী খান, এস এম মহসীন, সোলায়মান খোকা, জিয়াউল হাসান, কে এস ফিরোজ, আবদুল কাদের, শবনম পারভীন, আফজাল শরীফ, সুভাশীষ ভৌমিক, জামিল হোসেন প্রমুখ। ইত্যাদি একযোগে বিটিভি ও বিটিভি ওয়ার্ল্ডে প্রচারিত হবে ৩১ জানুয়ারি শুক্রবার রাত আটটার বাংলা সংবাদের পর। ইত্যাদি রচনা, পরিচালনা ও উপস্থাপনা করেছেন হানিফ সংকেত। নির্মাণ করেছে ফাগুন অডিও ভিশন।

সমবেত নৃত্য পরিবেনা। ছবি: ফাগুন অডিও ভিশনের সৌজন্যে।
সমবেত নৃত্য পরিবেনা। ছবি: ফাগুন অডিও ভিশনের সৌজন্যে।

হানিফ সংকেত বলেন, ‘আমাদের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন, আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র এবং মুক্তিযুদ্ধের গৌরবময় স্থানে গিয়ে ইত্যাদি অনুষ্ঠানের দৃশ্যধারণের ধারাবাহিকতায় এবারের পর্ব ধারণ করা হয়েছে হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত বাংলাদেশের সর্ব উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায়। আমাদের ইত্যাদি অনুষ্ঠানের দৃশ্যধারণ উপলক্ষে তেঁতুলিয়ায় ছিল উৎসবের আমেজ। অনুষ্ঠানস্থলে তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না।’

ইত্যাদিসংশ্লিষ্ট একজন জানান, পঞ্চগড়ের ইতিহাস, ঐতিহ্যর পাশাপাশি এবার রয়েছে পর্যটকদের জন্য আকর্ষণীয় এবং মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত স্থানগুলোর ওপর তথ্যভিত্তিক প্রতিবেদন। দেশের একমাত্র পাথরের জাদুঘর-রকস মিউজিয়াম এবং পঞ্চগড়ের সমতলে চা চাষের ওপর রয়েছে দুটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন। স্নায়ুবিক বিকাশগত সমস্যায় আক্রান্তদের ওপর রয়েছে একটি মানবিক ও উদ্বুদ্ধকরণ প্রতিবেদন। রয়েছে ঠাকুরগাঁওয়ের নবম শ্রেণির মেধাবী ছাত্রী শিক্ষানুরাগী সুখী আক্তারের জীবনসংগ্রামের ওপর একটি হৃদয়স্পর্শী প্রতিবেদন। বিদেশি প্রতিবেদন পর্বে রয়েছে বার্সেলোনায় পর্যটকদের জন্য আকর্ষণীয় স্থান মিউজিয়াম অব ইলুউশনের ওপর একটি সচিত্র প্রতিবেদন।

ইত্যাদি রচনা, পরিচালনা ও উপস্থাপনা করেছেন হানিফ সংকেত। ছবি: ফাগুন অডিও ভিশনের সৌজন্যে।
ইত্যাদি রচনা, পরিচালনা ও উপস্থাপনা করেছেন হানিফ সংকেত। ছবি: ফাগুন অডিও ভিশনের সৌজন্যে।

পঞ্চগড় জেলা ও তেঁতুলিয়ার উল্লেখযোগ্য কিছু বিষয় নিয়ে মোহাম্মদ রফিকউজ্জামানের কথায়, হানিফ সংকেতের সুর ও মেহেদীর সংগীতায়োজনে একটি গানের সঙ্গে নৃত্য পরিবেশন করেছেন পঞ্চগড় ও তেঁতুলিয়ার প্রায় দেড় শতাধিক নৃত্যশিল্পী। নাচের গানে কণ্ঠ দিয়েছেন কমল, তানজিনা রুমা, শুক্লা, কৃষ্ণা ও রিয়াদ, নৃত্য পরিচালনা করেছেন গাথী গাঙ্গুলী ও তিলোত্তমা দাস।

দর্শকপর্বের নিয়ম অনুযায়ী ধারণ স্থান পঞ্চগড়কে ঘিরে করা প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে উপস্থিত দর্শকের মাঝখান থেকে চারজন দর্শক নির্বাচন করা হয়। দ্বিতীয় পর্বে নির্বাচিত দর্শকেরা ‘শীতে মানবিকতার নামে প্রচার কাঙাল মানুষ’দের নিয়ে রচিত একটি নাট্যাংশে অভিনয় করেন। রয়েছে জাদুকর ম্যাজিক রাজিকের ব্যতিক্রমধর্মী মনস্তাত্ত্বিক জাদু। পেশায় প্রকৌশলী ও আইটি বিষয়ে গ্র্যাজুয়েট রাজিক দীর্ঘদিন বিদেশি টেলিভিশনে জাদু প্রদর্শন করলেও দেশের কোনো টেলিভিশন পর্দায় এই প্রথম জাদু দেখাবেন রাজিক।