দিল্লিতে আজ ঢাকার 'শেখ সাদী'

চন্দ্রকলা থিয়েটারের ‘শেখ সাদী’ নাটকের একটি দৃশ্য। ছবি: সংগৃহীত
চন্দ্রকলা থিয়েটারের ‘শেখ সাদী’ নাটকের একটি দৃশ্য। ছবি: সংগৃহীত

দিল্লির যুবরাজ মুহম্মদ বুলবন একবার বিশ্ব কবি সম্মেলনের আয়োজন করেছিলেন। সেখানে প্রধান কবি হিসেবে আমন্ত্রণ পান শেখ সাদী। দিল্লির কবি আমীর খসরু সাদীর কাছে আমন্ত্রণপত্র পাঠান। রাষ্ট্রীয় সম্মান এবং বন্ধুর আহ্বানে ভীষণ আনন্দিত হন শেখ সাদী। কিন্তু বার্ধক্যের কারণে সেই আমন্ত্রণে সাড়া দেওয়া হয় না তাঁর।

‘শেখ সাদী’ নাটকের গল্পটি এ রকম। ঢাকার মঞ্চে নতুন নাটকটি অল্প দিনেই সাড়া ফেলেছে। ইতিমধ্যে ভারতের আগরতলা ধর্মনগর নাট্যোৎসবে নাটকটি মঞ্চস্থ হয়। এবার ভারতের দিল্লি আন্তর্জাতিক নাট্যোৎসবে অংশ নিচ্ছে চন্দ্রকলা থিয়েটার। সেখানে আজ ‘শেখ সাদী’ নাটকটির মঞ্চায়ন হবে। পারস্যের মহাকবি শেখ সাদীর জীবন ও কর্ম নিয়ে নাটকটি রচনা করেছেন অপূর্ব কুমার কুণ্ডু। নাটকটি নির্দেশনার পাশাপাশি নাম–ভূমিকায় একক অভিনয় করেন এইচ আর অনিক। ২৪ জানুয়ারি উৎসবে অংশ নিতে দিল্লি গেছে চন্দ্রকলা থিয়েটার।

নাটকটি চন্দ্রকলা থিয়েটারের ১৮তম প্রযোজনা। নাট্যকর অপূর্ব কুমার কুণ্ডু জানান, নাটকটির কাহিনি এক ঐতিহাসিক মুহূর্তকে ঘিরে। দিল্লির যুবরাজ মুহম্মদ বুলবন তাঁর সময়কালে এক বিশ্ব কবি সম্মেলনের আয়োজন করেন, যেখানে মুখ্য কবি হিসেবে আমন্ত্রণ পান শেখ সাদী। শেখ সাদীর বন্ধু দিল্লির কবি আমীর খসরু আমন্ত্রণপত্র লেখেন এবং শেখ সাদীর আসার বিষয়ে নিশ্চিত করতে আহ্বান জানান। সেবার রাষ্ট্রীয় সম্মান এবং বন্ধুর আহ্বানে উৎফুল্ল শেখ সাদী সম্মানিত এবং আনন্দে আপ্লুত হয়েছিলেন বটে, কিন্তু বার্ধক্যজনিত কারণে সেই আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে দিল্লি আসতে পারেননি। অবশ্য সশরীরে না যাওয়ার আরেকটি কারণ ছিল। শেখ সাদী চেয়েছিলেন তাঁর জীবনের শেষ দিনগুলো কাটুক শিরাজি নগরীতে, যেখানে তাঁর জন্ম-শৈশব-কৈশোর ও যৌবনের বেড়ে ওঠা। ফলে শিরাজি ত্যাগ করে দিল্লির সে যাত্রায় শেখ সাদী না গেলেও শেখ সাদী তাঁর রচিত ‘গুলিস্তা’, ‘বুলিস্তা’সহ অন্যান্য রচিত গ্রন্থ তুলে দিয়েছিলেন শিরাজিতে অভ্যাগত দিল্লির রাষ্ট্রীয় অতিথিদের হাতে। ইতিহাসের এই সত্যকে ঘিরেই নাটকটি শুরু হয়।

নাটকটি নির্দেশনার পাশাপাশি নাম–ভূমিকায় একক অভিনয় করেন এইচ আর অনিক। ছবি: সংগৃহীত
নাটকটি নির্দেশনার পাশাপাশি নাম–ভূমিকায় একক অভিনয় করেন এইচ আর অনিক। ছবি: সংগৃহীত

নাটকের একটি দৃশ্যে দেখা যায়, মহাকবি শেখ সাদী তাঁর সৃজন সাহিত্যের সম্ভার নিয়ে দাঁড়িয়ে শিরাজির নিজ ঘরে, পারস্য থেকে দিল্লিগামী মুসাফিরদের আসার অপেক্ষায়। দিল্লি যুবরাজ মুহম্মদ বুলবন, কবি বন্ধুবর আমীর খসরুর আমন্ত্রণের প্রতিদান হিসেবে মুসাফিরদের হাতে তুলে দিলেন সাহিত্য সমগ্র। ভোরের আলো ফোটার মাহেন্দ্রক্ষণের মধ্যবর্তী অপেক্ষমাণ শেখ সাদীর সময়টুকু নিয়েই নাটক ‘শেখ সাদী’। এর মধ্যে নানা কথনে জানা যায় পোশাকের পকেটে খাবার রাখার বহুল প্রচলিত কাহিনির পাশাপাশি পারস্যের কবি রুদকি, ফেরদৌসী, জালাল উদ্দীন রুমি, ওমর খৈয়ামসহ পূর্বসূরি ও সমসাময়িক সাহিত্যিকদের সমান্তরাল পথচলা, যাপিত জীবনকে তুলে ধরার ঘটনাও। শেখ সাদীর আত্মোপলব্ধির নাটক শেখ সাদী।

নাটকের প্রযোজনা অধিকর্তা মামুনুর রশীদ, সংগীত হামিদুর রহমান, মঞ্চ ফজলে রাব্বি, মঞ্চ সহযোগী মাহমুদুল হাসান, আলো এস এম অঙ্গন, কাজী নজরুল ইসলাম। নাটকটির প্রযোজনা সহযোগী ঢাকার ইরানি কালচারাল সেন্টার। আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি কলকাতার দমদম আন্তর্জাতিক নাট্যোৎসবে ‘শেখ সাদী’ নাটকটির মঞ্চায় হবে। এ ছাড়া শেখ সাদীর জন্মস্থান ইরানেও নাটকটির একটি মঞ্চায়নের সম্ভাবনা রয়েছে।

নাটকটি চন্দ্রকলা থিয়েটারের ১৮তম প্রযোজনা। ছবি: সংগৃহীত
নাটকটি চন্দ্রকলা থিয়েটারের ১৮তম প্রযোজনা। ছবি: সংগৃহীত