সচেতন করতে সমাবেশ

টেলিভিশন নাটকের শুটিংয়ে শৃঙ্খলা ফেরাতে মাঠে নেমেছিল নাটকের আন্তসংগঠনগুলো। এবার এ বিষয়ে সচেতন করতে আয়োজন করা হয়েছে সমাবেশের। গত বছরের নভেম্বর মাসে উত্তরার একটি শুটিং বাড়িতে চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করে কাজ শুরু করেন অভিনেতা আবুল হায়াত।  ফাইল ছবি
টেলিভিশন নাটকের শুটিংয়ে শৃঙ্খলা ফেরাতে মাঠে নেমেছিল নাটকের আন্তসংগঠনগুলো। এবার এ বিষয়ে সচেতন করতে আয়োজন করা হয়েছে সমাবেশের। গত বছরের নভেম্বর মাসে উত্তরার একটি শুটিং বাড়িতে চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করে কাজ শুরু করেন অভিনেতা আবুল হায়াত। ফাইল ছবি

টেলিভিশন নাটকের শুটিংয়ে সাধারণত সকাল ১০টায় অভিনয়শিল্পীদের আসার সময় বেঁধে দেওয়া হয়। মেকআপ বা লাইট, ক্যামেরা, প্রোডাকশন–সংশ্লিষ্ট লোকজনের আসার সময় থাকে সকাল সাতটায় বা এরও আগে। অভিনয়শিল্পীরা দেরিতে আসায় শুটিং গড়ায় গভীর রাত পর্যন্ত। এতে নাটকের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অন্য সবার ১৬ থেকে ১৮ ঘণ্টা শুটিং করতে হয়। তখন তাঁদের কোনো পারিবারিক জীবন থাকে না। এমন চিত্র শুটিং বাড়িতে হরহামেশাই চলত।

গত নভেম্বর মাসে এর বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে যায় টিভি নাটক–সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলো। চুক্তিপত্রে পরিচালক, প্রযোজক ও অভিনয়শিল্পী ও কলাকুশলীদের স্বাক্ষর করে কাজ করতে হয়। তাতে বেশ সফলতা এসেছে বলে জানিয়েছেন অভিনয়শিল্পী সংঘের সভাপতি শহীদুজ্জামান সেলিম। এবার টেলিভিশন–সংশ্লিষ্ট সবাইকে এ বিষয়ে সচেতন করতে সমাবেশের আয়োজন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ২৪ ফেব্রুয়ারি এটি অনুষ্ঠিত হবে রাজধানীর সেগুনবাগিচার বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে।

নাটকের সঙ্গে যুক্ত সব সংগঠন মিলে যে নতুন নিয়মনীতি তৈরি হয়েছে, সেই বিষয়গুলো সবাইকে জানানোর জন্য এই সমাবেশ। টেলিভিশন নাটকের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট শিল্পী–কলাকুশলীদের অংশগ্রহণে দিনব্যাপী সমাবেশটি হবে। সবার মতামতের ওপর প্রাধান্য দিয়ে তৈরি হতে পারে নতুন নিয়মও। এ প্রসঙ্গে ডিরেক্টরস গিল্ডের সভাপতি নির্মাতা সালাউদ্দিন লাভলু জানান, ‘আমাদের টেলিভিশন নাট্যাঙ্গনে নিয়মানুবর্তিতার অভাব, চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর না করে শুটিং হচ্ছে এখনো কিছু কিছু। নাটকের বাজেট চূড়ান্তভাবে কমে যাওয়ার পরেও অনেক অভিনয়শিল্পী সময়মতো শুটিং সেটে যাচ্ছেন না। আবার যাঁরা সময়মতো শুটিং সেটে যাচ্ছেন, তাঁরা বিপাকে পড়ছেন। এ কারণে শুটিং সময়মতো শেষ হচ্ছে না। সবদিক থেকে টিভি নাটকের এই জায়গাটা একটা অপেশাদারত্বে ভুগছে। সেই বিষয় নিয়েই আমরা আলোচনা করব।’

নাটকের মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বাজেট কমে যাওয়ার কারণে দুজনকে দিয়ে নাটক বানানো হচ্ছে। অনেক সময় অভিনয়শিল্পীকে বলতে শোনা যায়, তাঁদের সম্মানী দিচ্ছেন না প্রযোজক। টেলিভিশন প্রোগ্রাম প্রডিউসারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক সাজু মুনতাসির বলেন, ‘শুটিং নিয়ে অভিযোগের শেষ নেই। আমরা শুটিংয়ে পরিপূর্ণ একটা শৃঙ্খলা ফেরাতে সবার স্বার্থে সমাবেশ করার উদ্যোগ নিতে যাচ্ছি। সেখানে আমরা সবাই মিলে বসে সিদ্ধান্ত নেব। কীভাবে নাটকের সুদিনটা ফিরিয়ে আনা যায়।’

নাটক–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বক্তব্য, তরুণেরা এই মাধ্যমকে পেশা হিসেবে নিতে আস্থাহীনতায় ভুগছেন। যে কেউ মানহীন কাজ বানিয়ে নাটক বলে ইউটিউবে দিচ্ছেন। তদারক করার কেউ নেই। সব মিলিয়ে একটা সংকটের মধ্যে দিয়ে চলছে টেলিভিশন নাটকের ইন্ডাস্ট্রি। এমন প্রেক্ষাপটে এ উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন প্রবীণ অভিনয়শিল্পী আবুল হায়াত। তিনি বলেন, এটা অবশ্যই ভালো উদ্যোগ। আলাপ–আলোচনার মধ্যে দিয়ে যদি সমস্যা উঠে আসে, তাহলে সেটা সমাধান করার চেষ্টা করা যেতে পারে। অভিজ্ঞ লোকজন থাকলে একটা ফলপ্রসূ সমাধান বেরিয়ে আসবে।

যদিও গত নভেম্বর মাসে চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করে নিয়মশৃঙ্খলা মেনে শুটিং করার যে প্রবণতা শুরু হয়েছে, তাতে অনেক সফলতা এসেছে বলে মনে করেন শিল্পী সংঘের সভাপতি শহীদুজ্জামান সেলিম। তিনি বলেন, ‘প্রত্যেককে নিয়মনীতির গ্রহণযোগ্যতা বোঝানোর জন্য সমাবেশটা করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। বেশির ভাগ কাজ নিয়মশৃঙ্খলা মেনে হচ্ছে। বিশেষ করে ঢাকায় যে শুটিংগুলো হচ্ছে, সেগুলো। এখানে একটি বিষয় উল্লেখ করার মতো, ঢাকার বাইরে যে শুটিংগুলো হয়, সে ক্ষেত্রে নিয়মকানুন মানার ক্ষেত্রে শিথিলতা আছে। আর ঢাকায় যেগুলো আগেই শুটিং শুরু হয়েছে, কিছু পরিচালক কম বাজেটে নাটক শুরু করেছিলেন। এই সময়ের মধ্যে তাঁদের কাজ শেষ করতে পারছেন না। তখন শুটিং হাউস ছেড়ে দিয়ে দু–তিনটি সিকোয়েন্স রাতে বাইরে করছেন। কিন্তু এই নিয়মনীতির প্রতি সিংহভাগই শ্রদ্ধাশীল। আমি মনে করি এটা ইতিবাচক। এ বিষয় নিয়েই সচেতন করতে সমাবেশ ডাকা হয়েছে।’