'আমার আমি ৭৫% তাঁর অবদানে': আবুল হায়াত

ঢাকার মালিবাগে বৌভাতের দিন তোলা ছবিতে আবুল হায়াত ও মাহফুজা খাতুন শিরিন। ছবি: ফেসবুক
ঢাকার মালিবাগে বৌভাতের দিন তোলা ছবিতে আবুল হায়াত ও মাহফুজা খাতুন শিরিন। ছবি: ফেসবুক

‘৫০ বছরের বিরতিহীন যাত্রা। ৪ ফেব্রুয়ারি ১৯৭০ থেকে অদ্যাবধি। যাত্রাপথে কতশত আনন্দ-বেদনা, সুখ-দুঃখ, আশা-হতাশা, প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি, বাধা-বিপত্তি—সবকিছু আমরা বিশ্বাস, আস্থা আর ভালোবাসায় হাসিমুখে ভাগ করে নিয়েছি। সত্যি, জীবন কত চ্যালেঞ্জিং এবং মধুময়!’ দাম্পত্য জীবনের ৫০ বছর পেরোনো আবুল হায়াত সংক্ষেপে এভাবেই তাঁর অনুভূতি ব্যক্ত করলেন।

মাহফুজা খাতুন শিরিনকে অভিনেতা আবুল হায়াত বিয়ে করেন ৫০ বছর আগের এই দিনে। সেই দাম্পত্য জীবনের আজ ৫০ বছর পার হলো। সুখে–দুঃখে একজন মানুষের সঙ্গে ৫০ বছর পার করে দেওয়াটা আজকালকার হুটহাট সংসার ভাঙার এই সমাজে দারুণ এক দৃষ্টান্ত, উৎসবের উপলক্ষ।

সারা দিনই নানা আয়োজনে আবুল হায়াত ও মাহফুজা শিরিনের ৫০ বছর পূর্তি কেটেছে। সন্ধ্যায় ঘরোয়া আয়োজনে বাড়ির বাইরে ছিলেন। সেখান থেকে প্রথম আলোকে আবুল হায়াত বলেন, ‘সুখ হচ্ছে মানুষের চাওয়া। আকাঙ্ক্ষা। এটার একটা সীমাবদ্ধতা থাকা উচিত। চাওয়া কম থাকলে একটা মানুষের প্রাপ্তিটা বেশি হয়। আমি আমার বাবার কাছ থেকে শিখেছি—চাইবা কম, তাহলে দেখবে সব সময় পাবে বেশি। আর বেশি চাইলে দেখবে নিরাশ হতে হচ্ছে। যা তোমার জীবনে একটা নেতিবাচক দিক চলে আসবে। সারা জীবন আমি সেটাই অনুসরণ করেছি। আমার চাওয়াটা সব সময় খুবই অল্প ছিল, কিন্তু সারা জীবন সবচেয়ে বেশিই পেয়েছি।’

স্ত্রীকে নিয়ে সাইকেল চালাচ্ছেন আবুল হায়াত। ছবি: ফেসবুক
স্ত্রীকে নিয়ে সাইকেল চালাচ্ছেন আবুল হায়াত। ছবি: ফেসবুক

বিনোদন অঙ্গনে ইদানীং সংসার ভাঙার কথা বেশি শোনা যায়। বিষয়টিতে তারকাদের ঘিরে নেতিবাচক একটি ভাবমূর্তি তৈরিও হয়। নতুন প্রজন্মের জন্য আবুল হায়াত বললেন, ‘আমি সবাইকে বলতে চাই বিশ্বাস, আস্থা ও ভালোবাসা নিয়েই এগিয়ে যেতে। চাওয়ার সীমাবদ্ধতাও যেন থাকে। কোনো কিছুতে ক্রেজি হলে চলবে না। এমন মানসিকতা পোষণ করব না যে আমার এটা পেতেই হবে। এটা করতে হবে। অমুকের মতো হতে হবে। অমুকের মতো করতে হবে। নিজের মতো করে ভালোবেসে কাজ করে যেতে হবে। স্বামী কিংবা স্ত্রীর কেউ কাউকে যেন না বলে, কেন আমার মতো হতে পারছ না—এসব অস্থির মানসিকতা দুজনকে পরিহার করতে হবে। তা না হলে কোনো সম্পর্কই টিকবে না। এখনকার প্রজন্ম অনেক বেশি অস্থিরতায়ও ভোগে। কোনো ধরনের অ্যাফোর্ট দেওয়া ছাড়া তাঁরা যেকোনো কিছু পেতে চায়—এটাও সবচেয়ে বড় সমস্যা।

অনেক সময় সুখী দম্পতিরা বলে থাকেন ভুল মানুষকে বিয়ে করেছেন। আপনার কি কখনো তেমন কিছু মনে হয়েছে? ‘এমন প্রশ্নে আবুল হায়াত বলেন, ‘আমার কখনোর মনে হয়নি ভুল মানুষকে বিয়ে করেছি। আমি সব সময় মনে করি, দাম্পত্য জীবনে দুজন মানুষ দুটি অপরিচিত জায়গা থেকে একটা জায়গায় একত্র হয়েছি। ছোটবেলা থেকে একটি মেয়ে কী পরিবেশে বেড়ে উঠেছে। তাঁর মানসিকতা কেমন—একজন পুরুষকে শুরুতে এটা বুঝার চেষ্টা করতে হবে। বিয়ের পর একটা মেয়ে একেবারে নতুন একটা পরিবেশে আসে। একদিনে সে নিজেকে বদলে ফেলবে, এমনটা হতে পারে না। আমি মনে করি, স্বামী-স্ত্রী দুজন মিলেই একটা আলাদা সংস্কৃতি তৈরি করবে। দুজনে মিলে যে সংস্কৃতি তৈরি করে, সেটাই দাম্পত্য জীবন টিকে থাকার সেরা উপায়। আমরা সেভাবেই নিজেদের গড়ে নিয়েছি। আমার সন্তানদের বড় করে তোলা, মানুষ হিসেবে তৈরি করার পুরো কাজটি আমার স্ত্রী একাই করেছে। আমি চাকরি করেছি, সিনেমায় অভিনয় করেছি, টেলিভিশন নাটক করেছি, মঞ্চের কাজ করেছি—পরিবারকে সে একাই সামলেছে। ঘরের সব বিষয় সুন্দরভাবে সামলেছে—এটা অনেক বিরাট ব্যাপার।’

আবুল হায়াত ও মাহফুজা খাতুন শিরিন। ছবি: ফেসবুক
আবুল হায়াত ও মাহফুজা খাতুন শিরিন। ছবি: ফেসবুক

আবুল হায়াত এ–ও বলেন, ‘আজকের আমার আমি ৭৫ শতাংশ তাঁর অবদানে। নাটকের প্রতি আমার ইচ্ছা, আকাঙ্ক্ষা, ভালো লাগা, ভালোবাসা—এটার পেছনের অবদান, সমর্থনটা আমার স্ত্রীর ছিল সবচেয়ে বেশি। আমি দেশের বাইরে ছিলাম। বললাম চলে যাব দেশে—এটা বলার পর সে আমাকে বলেছে, তোমার যদি ভালো না লাগে তুমি চলে আসো। নাটক করতে আসলাম। সরকারি চাকরিতে থেকে নাটক করতে অসুবিধা হয়, বলল ছেড়ে দাও। এই সাপোর্টগুলো আমরা সব সময় জীবনসঙ্গীর কাছ থেকে প্রত্যাশা করি। আর সত্যিকারের জীবনসঙ্গীরাই এমনটা করে থাকে।’
আবুল হায়াত ও মাহফুজা শিরিন দম্পতির দুই সন্তান—বিপাশা হায়াত ও নাতাশা হায়াত। রাতেই তাঁরা মা-বাবার দাম্পত্য জীবনের ৫০ বছর পূর্তির জন্য শুভেচ্ছা জানান। এ ছাড়া ফেসবুকে বিনোদন অঙ্গনের অনেকের পাশাপাশি তাঁর ভক্ত ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা শুভকামনা জানিয়েছেন। জীবনের সুন্দর দিনে তিনি তাঁর ও স্ত্রী-সন্তানদের জন্য দোয়া চেয়েছেন সবার কাছে।