ঝরে গেলেন 'মিস শেফালি'

চলে গেলেন মিস শেফালি। ছবি: ইনস্টাগ্রাম
চলে গেলেন মিস শেফালি। ছবি: ইনস্টাগ্রাম

আজ সকাল ছয়টায় মারা গেলেন আরতি দাস ওরফে ‘মিস শেফালি’। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৬ বছর। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের সোদপুরে নিজের বাড়িতেই শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন কলকাতার এই ক্যাবারে কুইন।

আনন্দবাজারের প্রতিবেদন অনুসারে, তাঁর ভাগনি আলভিনা সাহা জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন তিনি। ভুগছিলেন কিডনির সমস্যাতেও। মিস শেফালির দুটো কিডনিই নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। এর আগে একাধিকবার হাসপাতালে ভর্তিও ছিলেন তিনি। আজ ভোরবেলায় হঠাৎ হার্ট অ্যাটাক করে সব বন্ধ। এই তো দু-তিন সপ্তাহ আগেই তাঁকে নিয়ে বই বের হলো। খুব খুশি ছিলেন। তবে শেষ কয়েকটা দিন সমানে বলছিলেন, ‘আমি আর বাঁচব না। এবার চলেই যাব।’

দুর্দান্ত ক্যাবারে নর্তকী মিস শেফালির আড়ালে ঢাকা পড়ে যায় আরতি দাস। তাঁকে বলা হতো ‘কুইন অব ক্যাবারে’। তখন তো কলকাতা মাতিয়ে রাখত একটাই নাম, মিস শেফালি। আরতি দাস জন্মেছিলেন বাংলাদেশে। তারপর ১৯৪৭ সালে দেশভাগের সময় মাত্র ১১ বছর বয়সে চলে যান কলকাতায়।

চরম অর্থকষ্টে বেঁচে থাকার তাগিদে ১৩ বছর বয়সে ফিরপো হোটেলের লিডো রুমে নাচ শুরু করেন। অভিনেতা তরুণ কুমার তাঁকে প্রথম পরিচয় করিয়ে দেন। সেই থেকে শুরু। নাচের মুদ্রায় বিস্মিত করেছেন দেশি এবং বিদেশি সাহেবদের।

এরপর অসংখ্য জনপ্রিয় বাংলা নাটকে দেখা গেছে তাঁকে। ‘চৌরঙ্গী’, ‘রঙ্গিনী’, ‘সম্রাট সুন্দরী’, ‘সাহেব বিবি গোলাম’—আরও কত। অভিনয় করেছেন পরিচালক সত্যজিৎ রায়ের দুটি ছবিতে, ‘প্রতিদ্বন্দ্বী’ এবং ‘সীমাবদ্ধ’।

‘সীমাবদ্ধ’ ছবিতে তিনি তা-ই করেছেন, যা সবচেয়ে ভালো পারেন, নাচ। এই নাচের শুটিং হয়েছে ফিরপো হোটেলের লিডো রুমে। আরতি অথবা মিস শেফালি নিজেই সব ব্যবস্থা করেন। এমনকি মহানায়ক উত্তমকুমার পর্যন্ত তাঁর বেলি ড্যান্স আর হুলা মুভসে ধরাশায়ী হন।

বিয়ে করেননি শেফালি। শুধু মন দিয়ে, নিজেকে উজাড় করে নেচেছেন। পরিবারের সবার দায়িত্ব তুলে নেন নিজের কাঁধে। ভাইয়ের ছেলেকে নিজের ছেলের মতোই দেখেন। বাড়িতে যে মেয়েটি তাঁর কাজকর্ম দেখাশোনা করেন, সেই দুর্গাকে নিজের বোন বলে মনে করেন। ‘ডুম ডুম’ নামে একটা নাচের স্কুল আছে তাঁর। সেখানে হিপ হপ আর সালসা শেখান।

‘ডেথ ইন দ্য গঞ্জ’খ্যাত পরিচালক কঙ্গনা সেন তাঁকে নিয়ে ওয়েব সিরিজ নির্মাণ করবেন জেনে খুব খুশি হয়েছিলেন। বলেছিলেন, ‘নাচের মানুষ হলেও সবাই আমাকে মনে রেখেছেন চলচ্চিত্রের জন্য। কিন্তু আমাকে নিয়ে কোনো ছবি হয়নি। অনেক সংগ্রাম করে আমি টিকে থেকেছি। ছবিতে যদি তা না-ই আসল, তবে আমার জীবনের কী মানে থাকল?’