হুইলচেয়ারে বসে গাইলেন এন্ড্রু কিশোর, কাঁদলেন দর্শক

হুইলচেয়ারে বসে এন্ড্রু কিশোর গাইলেন, ‘জীবনের গল্প, আছে বাকি অল্প...’। ছবি: ফেসবুক
হুইলচেয়ারে বসে এন্ড্রু কিশোর গাইলেন, ‘জীবনের গল্প, আছে বাকি অল্প...’। ছবি: ফেসবুক

হুইলচেয়ারে বসে মঞ্চে এলেন তিনি। মাথায় হ্যাট, গায়ে লাল পাঞ্জাবি। গাইলেন, ‘জীবনের গল্প, আছে বাকি অল্প...’। কণ্ঠটাও স্পষ্ট, তিনিই এন্ড্রু কিশোর। এন্ড্রু কিশোর বললেন, ‘আমি কৃতজ্ঞ আপনাদের এমন ভালোবাসায়।’ চেনা সেই কণ্ঠ শুনে কেঁদে উঠলেন মিলনায়তনের বহু দর্শক। মঞ্চে এসে তিনি আরেক অসুস্থ শিল্পীর চিকিৎসা সহায়তায় নগদ অর্থ প্রদান করেন।

গত রোববার রাতে সিঙ্গাপুর বিজনেস সোসাইটি এবং বাংলাদেশ চেম্বারের আয়োজনে সিঙ্গাপুরের স্থানীয় গেটওয়ে থিয়েটার হলে আয়োজন করা হয় ‘এন্ড্রু কিশোরের জন্য ভালোবাসা’ শিরোনামের সংগীতানুষ্ঠান। সিঙ্গাপুরে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোস্তাফিজুর রহমানের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশন করেন কিংবদন্তি কণ্ঠশিল্পী সৈয়দ আব্দুল হাদী, সাবিনা ইয়াসমীন, মিতালী মুখার্জি, মোমিন বিশ্বাস, জাহাঙ্গীর সাঈদ ও মিলিয়া সাবেদ।

অনুষ্ঠানের একপর্যায়ে এন্ড্রু কিশোর সস্ত্রীক মঞ্চে ওঠেন। বক্তৃতা দিতে গিয়ে তিনি তাঁর বহুশ্রুত ‘জীবনের গল্প’ গানটির কয়েকটি লাইন গেয়ে শোনান। তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। এন্ড্রু কিশোর বলেন, ‘শিল্পী হিসেবে আমার দেশের প্রধানমন্ত্রী যে ভালোবাসা ও দায়িত্বের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন, তাতে আমার কৃতজ্ঞতা জানানোর ভাষা নেই। এ ছাড়া দেশে এবং দেশের বাইরে থেকে যেভাবে মানুষ আমার জন্য দোয়া ও ভালোবাসা প্রদর্শন করেছেন, তা আমাকে শক্তি ও সাহস জুগিয়েছে। সবার কাছে আমি শুধু দোয়াটুকু চাইছি।’

একপর্যায়ে এন্ড্রু কিশোর ব্যক্তিগতভাবে অসুস্থ সুরকার ও সংগীত পরিচালক সেলিম আশরাফের চিকিৎসা সহায়তায় ৫ হাজার সিঙ্গাপুরি ডলারের একটি খাম সাবিনা ইয়াসমীন ও সৈয়দ আব্দুল হাদীর হাতে তুলে দেন। সাবিনা ইয়াসমীন ও সৈয়দ আব্দুল হাদী ব্যক্তিগতভাবে সুরকার সেলিম আশরাফের চিকিৎসায় সহায়তা প্রদান করেছেন।

‘এন্ড্রু কিশোরের জন্য ভালোবাসা’ শিরোনামের এ আয়োজনের যৌথভাবে পৃষ্ঠপোষকতায় আছে সিঙ্গাপুর চেম্বার অব কমার্স ও বাংলাদেশ সোসাইটি সিঙ্গাপুর। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এরই মধ্যে এন্ড্রু কিশোরের চিকিৎসার যাবতীয় দায়িত্ব নেওয়ার কথা জানিয়েছেন। এরপরও তহবিল সংগ্রহের এ আয়োজন কেন, জানতে চাইলে জাহাঙ্গীর সাঈদ বলেন, ‘অনুষ্ঠানটির পরিকল্পনা দুই মাস আগের। তখনই ভেন্যু ভাড়া নেওয়া থেকে শুরু করে যাবতীয় আয়োজন সম্পন্ন করা হয়। অনেকে টিকিট কিনে নেন। তাই দর্শক ও আয়োজকদের কথা চিন্তা করেই আয়োজনটি করা হয়। তা ছাড়া প্রধানমন্ত্রী কিন্তু হাসপাতালের চিকিৎসার যাবতীয় দায়িত্ব নিয়েছেন। এর বাইরেও খরচ আছে। এ অনুষ্ঠান থেকে প্রাপ্ত তহবিল সেই কাজে আসবে।’

শরীরে নানা ধরনের জটিলতা নিয়ে এন্ড্রু কিশোর অসুস্থ অবস্থায় গত বছরের ৯ সেপ্টেম্বর উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরের উদ্দেশে দেশ ছেড়েছিলেন। বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর গত ১৮ সেপ্টেম্বর তাঁর শরীরে নন-হজকিন লিম্ফোমা নামের ব্লাড ক্যানসার ধরা পড়ে। সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক লিম সুন থাইয়ের অধীনে তাঁর চিকিৎসা শুরু হয়। কয়েক মাস ধরে সিঙ্গাপুরে তাঁর চিকিৎসা চলছে।

সংগীতজীবনের শুরুতে আবদুল আজিজ বাচ্চুর অধীনে প্রাথমিকভাবে সংগীতচর্চা শুরু করেন এন্ড্রু কিশোর। চলচ্চিত্রে তাঁর প্লেব্যাক যাত্রা শুরু হয় ১৯৭৭ সালে আলম খান সুরারোপিত ‘মেইল ট্রেন’ চলচ্চিত্রের ‘অচিনপুরের রাজকুমারী নেই যে তার কেউ’ গানের মধ্য দিয়ে। এরপর তাঁর গাওয়া অনেক গান জনপ্রিয় হয়। বাংলা চলচ্চিত্রের গানে অবদান রাখার জন্য তিনি কয়েকবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন।