'চলচ্চিত্রকে চলচ্চিত্র হিসেবে দেখুন'

শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নির্মাতা কামার আহমাদ সাইমন ও প্রযোজক সারা আফরিন। ছবি: সংগৃহীত
শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নির্মাতা কামার আহমাদ সাইমন ও প্রযোজক সারা আফরিন। ছবি: সংগৃহীত

‘দেশে চলচ্চিত্রের পাঠ এখনো গল্প (ফিকশন) বা অ-গল্পের (নন-ফিকশনের) সেকেলে বিভাজননির্ভর। চলচ্চিত্রকে নির্দিষ্ট কোনো ধারায় না ফেলে শুধু ‘চলচ্চিত্র’ হিসবে দেখার নতুন দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করতে হবে। আর এই পরিবর্তনটি তরুণদের হাত ধরেই আসতে হবে।’

নির্মাতা কামার আহমাদ সাইমন গতকাল তাঁর চলচ্চিত্র ‘শুনতে কি পাও!’–এর এক বিশেষ প্রদর্শনীতে এসব কথা বলেন। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশের (আইইউবি) মিডিয়া অ্যান্ড কমিউনিকেশন বিভাগ ও আইইউবি ফিল্ম ক্লাব যৌথভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের বসুন্ধরা ক্যাম্পাসে এই প্রদর্শনীর আয়োজন করে। এ ছবিটিই মুক্তির পর ফিকশন, নাকি নন ফিকশন—এই আলাপের ক্ষেত্র তৈরি করে।

চলচ্চিত্র প্রদর্শনী শেষে নির্মাতা কামার আহমাদ সাইমন দেড় ঘণ্টা উপস্থিত ছাত্রদের সঙ্গে একটা আড্ডায় অংশ নেন। সেখানে মূলত ফিল্ম রিডিংয়ের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলাপ জমে ওঠে। কামার আহমাদ সাইমন বলেন, ‘আমাদের ছবিকে বিশ্ব চলচ্চিত্রের মহলে নিয়ে যাওয়ার জন্য আন্তর্জাতিক “ফিল্ম রিডিং”টা বুঝতে হবে। সেই চর্চাটা গড়ে তুলতে হবে। ফিকশন, নন-ফিকশনের পুরোনো ছাঁচ ভেঙে বেরিয়ে আসতে হবে। এখানে নিরীক্ষামূলক কাজে নিজের মুন্সিয়ানা দেখানোর সুযোগটা একেবারে খালি পড়ে আছে।’

ড. জাকির হোসেন রাজু সঞ্চালনা করছেন প্রশ্নোত্তর পর্ব। ছবি: সংগৃহীত
ড. জাকির হোসেন রাজু সঞ্চালনা করছেন প্রশ্নোত্তর পর্ব। ছবি: সংগৃহীত

আলাপনে বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তিরা অনুযোগের সুরে বলার চেষ্টা করছিলেন, এখনকার তরুণদের জগৎ আটকে গেছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। সবকিছু ইনস্টাগ্রাম, টুইটার, ফেসবুককেন্দ্রিক হয়ে যাচ্ছে। তাদের নিজেদের মেমোরি বলে তেমন কিছু থাকছে না। কামার আহমাদ সাইমন অবশ্য ‘ওদের’ আর ‘আমাদের’—এই বিভাজনটা রাখতেই নারাজ। তাঁর মতে, সবাই মিলেই আমরা। দ্বিমত পোষণ করে তিনি বরং তরুণদের ক্রমাগত বদলে যেতে থাকা ভাষাকে বুঝতে চান।

আইইউবির শিক্ষার্থীদের ‘ক্রাউড’ ভালো লেগেছে কামার আহমাদ সাইমনের। নির্মাতা কামার ব্যক্তি কামারকে ‘মিস’ করেন কি না, এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘আমি যখন কোনো ছবি বানাই, তখন একেবারে শূন্য থেকে শুরু করি। সেটাকে এগিয়ে নিয়ে যাই। আবার নতুন কাজ করার সময় নতুন করে শূন্যে ফিরে যাই।’ কোনো চেনা মুখ নেই, বাণিজ্যিক ব্যাপার নেই, ‘নীল মুকুটে’র পোস্টারটা এমন ‘অন্য রকম’ কেন? উত্তরে এই নির্মাতা বলেন, ‘আমার ছবিতে যে সময়, যে আকুতি আছে, পোস্টার সেটারই প্রতিনিধিত্ব করে।’

কামার আহমাদ সাইমন। ছবি: খালেদ সরকার
কামার আহমাদ সাইমন। ছবি: খালেদ সরকার

৯০ মিনিটের চলচ্চিত্রটির প্রদর্শনী শেষে বিভাগের প্রধান, অধ্যাপক জাকির হোসেন রাজু নির্মাতার সঙ্গে দর্শকদের একটি প্রশ্নোত্তর পর্ব পরিচালনা করেন। এ সময় কামার আহমাদ এই চলচ্চিত্রটি নির্মাণে তাঁর বিভিন্ন অভিজ্ঞতার কথা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করেন। এ ছাড়া তাঁর আগামী চলচ্চিত্র ‘নীল মুকুট’ হলে গিয়ে দেখার জন্য সবাইকে আমন্ত্রণ জানান।

এই প্রদর্শনীতে আইইউবি ফিল্ম ক্লাবের সমন্বয়ক তাজীন আহমেদ, মিডিয়া অ্যান্ড কমিউনিকেশন বিভাগসহ আইইউবির বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, আমন্ত্রিত অতিথি এবং চলচ্চিত্রটির প্রযোজক সারা আফরীন উপস্থিত ছিলেন।

‘শুনতে কি পাও!’ এ পর্যন্ত ৩৫টির বেশি আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে আমন্ত্রিত হয়ে অংশ নেয়। ২০১৩ সালে প্যারিসে অনুষ্ঠিত ইউরোপের অন্যতম প্রামাণ্যচিত্র উৎসব সিনেমা দ্যু রিলের ৩৫তম আসরে সর্বোচ্চ পুরস্কার ‘গ্রাঁপ্রি’ জিতেছিল ছবিটি।