ঢাকায় সাশ্রয়ী ছবির মেলা

ছাপচিত্র মেলা ঘুরে দেখছেন আসাদুজ্জামান নূর। ছবি: প্রথম আলো
ছাপচিত্র মেলা ঘুরে দেখছেন আসাদুজ্জামান নূর। ছবি: প্রথম আলো

চিত্রকর্ম দিয়ে ঘর সাজানোর সাধ যাঁদের, তাঁদের অনেকেরই নেই সেসব কেনার সাধ্য। অ্যাক্রিলিক, তেলরং,জলরঙে আঁকা ছবির অনেক দাম বটে। কিন্তু কিছুটা সাশ্রয়ী দামে পাওয়া যায় ছাপচিত্র। চারুকলার ছাপচিত্রের শিক্ষার্থী ও এ মাধ্যমে কাজ করা শিল্পীদের আঁকা ছবি নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলায় শুরু হয়েছে তিন দিনের ৯ম কিবরিয়া আন্তর্জাতিক ছাপচিত্র মেলা। এ মেলার আয়োজন করেছে কিবরিয়া ছাপচিত্র স্টুডিও।

গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জয়নুল গ্যালারিতে শুরু হয়েছে এ মেলা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ প্রাঙ্গণে প্রধান অতিথি হিসেবে মেলার উদ্বোধন করেন সংস্কৃতিজন আসাদুজ্জামান নূর। শিল্পী আবুল বারক আলভীর সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন শিল্পী রফিকুন নবী, মনিরুল ইসলাম ও শিল্পপতি তানিম উদ দৌলা।

মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘ছাপচিত্রকে অনেকে গুরুত্ব দেন না। কিন্তু এর পেছনে শ্রম অনেক। আমি ৪০ বছর ধরে এই মাধ্যমে কাজ করেছি। এর ভাষা একেবারেই আলাদা। বিদেশের প্রদর্শনীতে গিয়ে বাংলাদেশের শিল্পীদের ছাপচিত্র দেখে গর্ববোধ করেছি।’

ছাপচিত্র মেলায় বিদেশি দর্শক। ছবি: প্রথম আলো
ছাপচিত্র মেলায় বিদেশি দর্শক। ছবি: প্রথম আলো

রফিকুন নবী বলেন, ‘ছাপচিত্রকে গ্রহণ করার রুচি সবার ভেতরে আসছে না। সফিউদ্দিন স‍্যার আমাদের কাঠের ওপরে কাজ করাতেন। কাজগুলো ভীষণ কষ্টকর ছিল। ছাত্রজীবন শেষে বিদেশে লেখাপড়া করতে গিয়ে নিজের ঘাড়ে তুলে নিলাম সেই কাজ। বিদেশে গিয়ে দেখলাম অনেক সুন্দর কাজ হয় এ মাধ‍্যমে। ঢাকায় ছাপচিত্রের জন্য এখন অনেক স্টুডিও হয়েছে। আগে চারুকলা ছাড়া আর কোথাও এ কাজ করা যেত না। এখন অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাপার যন্ত্র আছে। আমি নিশ্চিত একটা সময় বিদেশের মতো এখানেও এই মিডিয়া জনপ্রিয় হবে।’

আসাদুজ্জামান নূর বলেন, ‘আমার সৌভাগ্য আমি অনেক বড় বড় মানুষের সঙ্গে মেশার সুযোগ পেয়েছি। তাঁদের মধ্যে ছিলেন অনেক শিল্পী, সাহিত্যিক, কবি, বুদ্ধিজীবী, রাজনীতিক। এটাই আমার জীবনের সবচেয়ে বড় অর্জন। এখনকার চারুকলা মানে আর্ট কলেজের হোস্টেলে আমার নিয়মিত যাতায়াত ছিল। রাজনৈতিক আন্দোলনগুলোর পোস্টার আমরা সে সময় হাতে লিখতাম। আন্দোলন সংগ্রামের অনেক ইতিহাস আছে এই চারুকলা ঘিরে। কিবরিয়া স্যার হোস্টেলের ওপর থেকে নেমে এসে বলতেন হইচই কোরো না। কিন্তু আমাদের প্রতি তাঁর সমর্থন ছিল। আজ তাঁর নামে এই মেলা।’

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন চারুকলা অনুষদের ডিন নিসার হোসেন। তিনি বলেন, ‘অনেক দূর–দূরান্ত থেকে এ মেলায় যাঁরা আসেন, অনেক সময়ই তাঁদের যাওয়া-আসার টাকাও ওঠে না। সময় ও অর্থের অপচয় করে যাঁরা এ মেলায় যোগ দিচ্ছেন, তাঁরা আসলে শিল্পীর দায় থেকে আসেন। দুর্ভিক্ষের ছবি এঁকে খ্যাতি পাওয়া জয়নুল আবেদিন ঢাকায় এসে বলেছিলেন এখন আমরা রুচির দুর্ভিক্ষের সঙ্গে লড়াই করছি। এখনকার এই ছাপচিত্রের শিল্পীরা যেন সেই রুচির দুর্ভিক্ষ তাড়াতে কাজ করছে।’ আক্ষেপ নিয়ে তিনি বলেন, ‘ছাপচিত্রে সফিউদ্দিন স্যার, মনিরুল ইসলাম, রফিকুন নবীদের অনেক অবদান আছে। তাঁরা এ ঘরানাকে অনেক উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। যদিও এখন আর সেইভাবে তাঁরা ছাপচিত্র করেন না। বাংলাদেশের শিল্পীদের ছাপচিত্র দেশে কতটা সার্থক হবে জানি না, কিন্তু বিদেশে এর অনেক সুনাম।’

মেলার উদ্বোধকদের হাত থেকে আজীবন সম্মাননা গ্রহণ করছেন ছাপচিত্রী এ কে এম আলমগীর হক। ছবি: প্রথম আলো
মেলার উদ্বোধকদের হাত থেকে আজীবন সম্মাননা গ্রহণ করছেন ছাপচিত্রী এ কে এম আলমগীর হক। ছবি: প্রথম আলো

আবুল বারক আলভী বলেন, ‘প্রিন্ট নিয়ে যাঁরা কাজ করতে চান, তাঁদের কথা ভেবেই কিবরিয়া ছাপচিত্র স্টুডিও শুরু করা হয়। দল বেঁধে যাঁরা ছাপচিত্র নিয়ে কাজ করেন, তাঁদের নিয়ে আয়োজন করা হয় এই মেলা।’ অনুষ্ঠানে আজীবন সম্মাননা জানানো হয় ছাপচিত্রী এ কে এম আলমগীর হককে। তাঁর হাতে তুলে দেওয়া হয় সম্মাননা স্মারক ও অর্থমূল্যের চেক। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন শিল্পী রশিদ আমিন।

মেলায় দেখা যাবে প্রয়াত শিল্পী কালিদাস কর্মকারের ছাপচিত্রে আঁকা ছবি। তবে সেগুলো বিক্রির জন্য নয়। ফেব্রুয়ারির ১৫ তারিখ পর্যন্ত মেলা ঘুরে আসা যাবে প্রতিদিন বেলা ৩টা থেকে রাত ৮টা।