'সিনেমা শিল্প থেকে বাণিজ্যে চলে যাচ্ছে'

আবদুস সেলিম ও ঝোঁয়া পাওলো মার্শেদু। ছবি: সংগৃহীত
আবদুস সেলিম ও ঝোঁয়া পাওলো মার্শেদু। ছবি: সংগৃহীত

‘সিনেমা সামাজিকীকরণের ক্ষেত্রে একটি নতুন চ্যালেঞ্জ। এটি একজন মানুষকে একটি ছোট্ট পর্দায় আবদ্ধ করে ফেলছে। শিল্প থেকে সংকুচিত হয়ে সিনেমা চলে যাচ্ছে বাণিজ্যের দিকে।’ ঢাকায় এসে কথাগুলো বললেন, আন্তর্জাতিক ফেডারেশন অব ফিল্ম সোসাইটিজ-এর সভাপতি ঝোঁয়া পাওলো মার্শেদু।

আজ বুধবার সন্ধ্যা ৬টায় ডেইলি স্টার ভবনের আজিজুর রহমান সম্মেলনকক্ষে এক আলোচনা সভার আয়োজন করে বাংলাদেশ ফেডারেশন অব ফিল্ম সোসাইটিজ। ‘অডিয়েন্স রাইট অ্যান্ড ফিল্ম সোসাইটি মুভমেন্ট ডিউরিং দ্য সেকেন্ড কোয়াটার অব টুয়েন্টি ফাস্ট সেঞ্চুরি’ শীর্ষক বক্তৃতানুষ্ঠানে কথা বলেন মার্শেদু। সিনেমা শিক্ষার ওপর গুরুত্ব দিয়ে তিনি বলেন, ‘তরুণ নির্মাতাদের চলচ্চিত্র শিক্ষার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। পাশাপাশি শৈশব থেকেই শিশুদের সিনেমার সঙ্গে যুক্ত হতে হব’।

বর্তমান শতাব্দীতে চলচ্চিত্র তাঁর নিজস্ব ধারা হারিয়ে ফেলছে, সিনেমাকে নতুন থেকে নতুনতর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হচ্ছে। বিশ্বের সিনেমা যে বৈরী আবহাওয়ার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে, সেই অভিজ্ঞতার আলোকে মার্শেদু বলেন, ‘বর্তমান চলচ্চিত্রের দর্শক কমছে। উন্নত বিশ্বের নতুন প্রযুক্তির সঙ্গে বিশ্বের বেশির ভাগ দেশ নিজেদের মানিয়ে নিতে পারছে না। দর্শকদের অধিকার খর্ব হচ্ছে, মানুষ সমাজ এবং পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে। স্বাধীন নির্মাতাদের নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ কমে যাচ্ছে।’ নেটফ্লিক্সের উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, ‘সিনেমা এখন শিল্প থেকে সংকুচিত হয়ে বাণিজ্যের দিকে যাচ্ছে। একজন মানুষকে একটি ছোট্ট পর্দায় আবদ্ধ করে ফেলছে নেটফ্লিক্স। মানুষের মাঝে দূরত্ব বাড়িয়ে তুলছে। মানুষ এখন একা হয়ে যাচ্ছে। মানুষের মাঝে একসঙ্গে দল বেঁধে সিনেমা দেখা এবং শেয়ারিং করা কমছে।’ তিনি জানান, আগামী ২৫ বছর স্বাধীন ধারার চলচ্চিত্রকে অনেক বাঁধা-বিপত্তি পেরিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। এ জন্য তরুণদের নতুন আইডিয়া বের করতে হবে।

ঢাকার সেমিনারে আন্তর্জাতিক ফেডারেশন অব ফিল্ম সোসাইটিজ-এর সভাপতি ঝোঁয়া পাওলো মার্শেদু। ছবি: সংগৃহীত
ঢাকার সেমিনারে আন্তর্জাতিক ফেডারেশন অব ফিল্ম সোসাইটিজ-এর সভাপতি ঝোঁয়া পাওলো মার্শেদু। ছবি: সংগৃহীত

আন্তর্জাতিক ফেডারেশন অব ফিল্ম সোসাইটিজ এবং বাংলাদেশের ফিল্ম সোসাইটিজের বিভিন্ন সময় ১৯ বছর দায়িত্ব পালন করেছেন বাংলাদেশের চলচ্চিত্র নির্মাতা গোলাম রাব্বানী। তিনি বলেন, ‘এ দেশে দর্শকদের অধিকারের কোনো অস্তিত্ব নেই। বিশ্বের কিছু সাধারণ সমস্যার একটি আমাদের সিনেমা। আমাদের উচিত হবে স্কুল পর্যায় থেকে শিশুদের সিনেমা দেখানোর মাধ্যমে দর্শক তৈরি করা।

আলোচনার শুরুর দিকে উঠে আসে চলচ্চিত্রকার মৃণাল সেনের বাড়ি ভাঙার প্রসঙ্গ। এ প্রসঙ্গে ঝোঁয়া পাওলো মার্শেদু বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে আন্তর্জাতিক ফেডারেশন অব ফিল্ম সোসাইটিজ অবগত রয়েছে।’ শিগগির সত্যজিৎ রায়, মৃণাল সেন এবং ঋত্বিক কুমার ঘটকের বসতভিটাকে ঐতিহ্য হিসেবে সংরক্ষণের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানাবে বাংলাদেশ ফেডারেশন অব ফিল্ম সোসাইটিজ।

প্রশ্নোত্তর পর্বে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে তরুণ নির্মাতাদের নানা প্রশ্নের উত্তর দেন ঝোঁয়া। অনুষ্ঠানে সঞ্চালকের দায়িত্ব পালন করেন বাংলাদেশ ফিল্ম সোসাইটিজের সভাপতি আবদুস সেলিম। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন চলচ্চিত্র নির্মাতা মসিহ উদ্দিন শাকের, বাংলাদেশের তরুণ চলচ্চিত্র নির্মাতা সাদিক প্রমুখ।