উত্তমকুমারের সহশিল্পী ফকির কুমার মারা গেছেন

উত্তমকুমারের সঙ্গে ফকির কুমার দাস। ছবি: ফেসবুক থেকে
উত্তমকুমারের সঙ্গে ফকির কুমার দাস। ছবি: ফেসবুক থেকে

মারা গেছেন কলকাতার অভিনয়শিল্পী ফকির দাস কুমার। বাংলা চলচ্চিত্রে উত্তমকুমার আর তাপস পালের মতো তারকার সঙ্গে তিনি অভিনয় করেছেন। বার্ধক্যজনিত অসুস্থতায় তিনি দীর্ঘদিন ধরে ভুগছিলেন। শারীরিক অবস্থা বেশি খারাপ হলে বর্ধমানের একটি বেসরকারি নার্সিং হোমে ভর্তি হয়েছিলেন তিনি। সেখানে বেশ কিছুদিন চিকিৎসাধীন থাকার পর বৃহস্পতিবার সকালে শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন ফকির দাস কুমার। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৬ বছর।

এমনিতে তাপস পালের অকস্মাৎ মৃত্যুতে শোকে মুহ্যমান হয়ে পড়েছিল কলকাতার শিল্পী ও সংস্কৃতিজগৎ। সেই রেশ কাটার আগেই ফকির দাস কুমারের মৃত্যুতে আবারও শোকের ছায়া নেমে এসেছে বলে জানা গেছে স্থানীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও অনেক শিল্পী, চলচ্চিত্র-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি শোক প্রকাশ করে মন্তব্য লিখেছেন। মৃত্যুর খবর পেয়ে বর্ধমানের শিল্পী ও সংস্কৃতিজগতের ব্যক্তিরা নার্সিং হোমে ভিড় করেন। দুপুরে এই শিল্পীর মরদেহ নিয়ে বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেন তাঁর আত্মীয়–পরিজনেরা।

মৃত্যুকালে তিনি রেখে গেছেন তিন ছেলে, দুই মেয়ে, পুত্রবধূ ও নাতি-নাতনিদের। এই অভিনয়শিল্পীর মৃত্যুতে কলকাতার পাশাপাশি বর্ধমানেও নেমেছে শোকের ছায়া। জানা গেছে, টালিগঞ্জে জনিপ্রয় হলেও বর্ধমানের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ ছিল বেশ। আমন্ত্রণ এলে বর্ধমানের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার চেষ্টা করতেন। তবে বার্ধক্য ও অসুস্থতার কারণে বেশ কয়েক মাস বাড়ির বাইরে বের হতে পারতেন না তিনি।

পূর্ব বর্ধমানের মেমারির সেনপুরের ছেলে ফকির দাস কুমার। কমেডি চরিত্র অভিনয়ের মাধ্যমে ভক্তদের মনে জায়গা করে নিয়েছিলেন। ‘জয়জয়ন্তী’, ‘বিকেলে ভোরের ফুল’, ‘রাতের রজনীগন্ধা’, ‘কায়াহীনের কাহিনী’, ‘দুই পুরুষ’, ‘মৌচাক’সহ ১৪টি ছবিতে উত্তমকুমারের সঙ্গে অভিনয় করেছেন তিনি। সদ্য প্রয়াত তাপস পালের সঙ্গে ‘রাজেশ্বরী’, ‘দামাল ছেলে’সহ বেশ কিছু ছবিতে অভিনয় করেছিলেন। কখনো গামছা কাঁধে নিয়ে ভৃত্যের অভিনয়, কখনো-বা ওঝার চরিত্রে দেখা গেছে তাঁকে। প্রায় ১৫০টি ছবিতে তিনি অভিনয় করেছেন। এই সময়ের বেশ নামকরা পরিচালকের সঙ্গে কাজ করেছেন তিনি। তাঁর বিভিন্ন সাক্ষাৎকার থেকে জানা যায়, উত্তমকুমারের সঙ্গে তাঁর পারিবারিক সম্পর্ক ছিল। বলা যায়, ‘মহানায়কের ঘরের লোক ছিলেন তিনি।’ ছোট ভাইয়ের মতোই তাঁকে স্নেহ করতেন মহানায়ক। সেই সময়ে চালভাজা এবং নাড়ু নিয়ে মহানায়কের বাড়িতে চলে যেতেন ফকির দাস কুমার। ফকির দাসের নিয়ে যাওয়া চালভাজা ও নাড়ুতে মন ভরে যেত মহানায়কের—এমন স্মৃতিচারণাই পাওয়া যায় ফকির দাসের কথায়।

শুধু সিনেমা নয়, মঞ্চেও বেশ সফল অভিনেতা ছিলেন ফকির দাস কুমার। শতাধিক রেডিও নাটকে কাজ করেছেন তিনি। যাত্রায়ও ছিলেন সমান জনপ্রিয়। যাত্রা ও নাটকের সূত্র ধরেই চলচ্চিত্রজগতে ঢুকে পড়া। বাণিজ্যিক ছবির পাশাপাশি বিকল্প ঘরানার চলচ্চিত্রেও কাজ করেছেন তিনি।

আপনার সঙ্গে কেমন সম্পর্ক ছিল মহানায়কের? ২০১৮ সালে ভারতীয় গণমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের এক প্রশ্নের জবাবে ফকির দাস বলেছিলেন, ‘আমাকে খুব ভালোবাসতেন। একবার হাজারীবাগে আউটডোরে শুটিং চলছিল। ১৯৫৭ কি ৫৮ সাল হবে। দাদার সঙ্গে প্রথম ছবি “জয়জয়ন্তী”তে অভিনয় করছি। সেখানে এক বাগানবাড়িতে শুটিং হচ্ছে। হাজারীবাগ কলেজের একদল ছাত্র এসেছে অটোগ্রাফ নিতে। উত্তমকুমার প্রায় হাঁপিয়ে উঠেছেন। আমি বললাম, ম্যানেজ করে নেব। তারপর প্রায় ৩০০টি খাতায় আমরা পাঁচজন মিলে মহানায়কের অটোগ্রাফ দিয়েছিলাম। তাঁরাও খুশি হয়েছিল। উত্তম বাবুও স্বস্তি পেয়েছিলেন। সেদিন রাতে উত্তম বাবু ডেকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, “এই বুদ্ধিটা কার?” আমার বলতেই বললেন, “দারুণ কু বুদ্ধি তো। ঠিক আছে।”’