গায়েহলুদ নয়, রঙের খেলায় মিথিলা ও সৃজিত

কলকাতার লেক গার্ডেনসে মিথিলার শ্বশুরবাড়ির ছাদে রঙের খেলায় মেতেছেন সৃজিত, মিথিলা ও তাঁর মেয়ে আইরা। ছবি: ফেসবুক
কলকাতার লেক গার্ডেনসে মিথিলার শ্বশুরবাড়ির ছাদে রঙের খেলায় মেতেছেন সৃজিত, মিথিলা ও তাঁর মেয়ে আইরা। ছবি: ফেসবুক

বিবাহোত্তর সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আগের দিন বিকেলে রঙের খেলায় মেতেছেন অভিনয়শিল্পী মিথিলা ও কলকাতার পরিচালক সৃজিত মুখার্জি। তাঁদের দুজনের সঙ্গে দুই পরিবারের সদস্যরাও যোগ দিয়েছেন। কলকাতার লেক গার্ডেনসে মিথিলার শ্বশুরবাড়ির ছাদে রং খেলায় মেতেছেন সবাই। কলকাতা থেকে আজ শনিবার দুপুরে জানিয়েছেন মিথিলা।

এদিকে বিবাহোত্তর সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ঢাকা থেকে ৫০ জনের একটি দল কলকাতায় পৌঁছেছে বলে জানান মিথিলা। শনিবার সন্ধ্যায় কলকাতার স্বভূমি রাজকুটির হেরিটেজ হোটেলে মিথিলা ও সৃজিতের বিবাহোত্তর সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।

রঙের খেলা ভীষণ উপভোগ করেছেন সবাই। মিথিলা বলেন, ‘আগে কিন্তু গ্রামের বিয়ের অনুষ্ঠানে এই ধরনের রঙের খেলা হতো। এখন ঢাকায়ও হচ্ছে। আমি তো ছোটবেলা থেকেই দেখছি, গায়েহলুদের দিন রং খেলা হতে। আমাদের তো গায়েহলুদ অনুষ্ঠানের আয়োজন ছিল না। তাই ভাবলাম, সবাই মিলে রং মাখামাখি খেলি। বিকেল থেকে শুরু হয়ে সন্ধ্যার আগ পর্যন্ত রং মাখামাখি খেলা চলতে থাকে।’

রং খেলার বেশ কিছু স্থিরচিত্র মিথিলা তাঁর ফেসবুকেও পোস্ট করেছেন। বিয়ের আড়াই মাস পর বিবাহোত্তর সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছেন মিথিলা ও সৃজিতের পরিবার। অনুষ্ঠানে অতিথিদের খাওয়ানো হবে বিক্রমপুরের কাসুন্দি, ঠাকুরবাড়ির ‘কষা মাংস’র মতো সব রেসিপি। আজকের অনুষ্ঠানে কী পরবেন এমন প্রশ্নে মিথিলা বলেন, ‘বাঙালি বিয়েতে সবাই যেমন শাড়ি পরে, আমি তা–ই পরব। সৃজিত পরবে ধুতি-পাঞ্জাবি।’

মিথিলার সেলফিতে সৃজিত, ইরেশ যাকের, মিম রশিদসহ অন্যরা। ছবি: ফেসবুক
মিথিলার সেলফিতে সৃজিত, ইরেশ যাকের, মিম রশিদসহ অন্যরা। ছবি: ফেসবুক

মিথিলা জানান, ইচ্ছা থাকলেও বড় আয়োজনে বিবাহোত্তর সংবর্ধনা অনুষ্ঠান করা সম্ভব হচ্ছে না। কারণ, আগামীকাল সৃজিত চলে যাবে দক্ষিণ আফ্রিকায়, সিনেমার শুটিংয়ে। আর মিথিলা অফিশিয়াল কাজে একটি সম্মেলনে যোগ দিতে যাবেন ডেনমার্কে। সেখান থেকে আবার অফিসের কাজে যাবেন দক্ষিণ আফ্রিকা। পুরো মার্চ মাসে তাঁদের পরস্পরের সঙ্গে দেখা হবে না।

বিবাহোত্তর সংবর্ধনা অনুষ্ঠান উপলক্ষে মিথিলা ও সৃজিত আলাদা দুটি আমন্ত্রণপত্র ছেপেছেন। মিথিলা তাঁর আমন্ত্রণপত্রে লিখেছেন, ‘প্রেম কেবলই একটি রাসায়নিক বিক্রিয়া কি না, জানি না। তবে এটুকু জানি, মুখোমুখি বসে কথপোকথনের পর উপযুক্ত এক্স ফ্যাক্টরের সন্ধান পেলে এখনো প্রেম হয়ে ওঠে সেই ল্যান্ডফোনের দিনগুলোর মতোই মধুর। তাই সস্তা ক্ষোভ আর অ্যাঙ্গার স্টোরির টাইমলাইন পেরিয়ে আবার লাল বেলুনের স্বপ্ন। আপনাদের চেনা মিথিলা আর সৃজিত তাই এখন “হি অ্যান্ড শি” থেকে “মিস্টার অ্যান্ড মিসেস”।’

মিথিলার আমন্ত্রণপত্রে আরও লেখা ছিল, ‘রোমিও-জুলিয়েট, লাইলি-মজনু বা আলাদিন-জেসমিনের কেস স্টাডি ফলো করে সম্পর্কের ডেভেলপমেন্ট রিসার্স জানে, যেগুলোকে আমরা ব্যবধান আর দূরত্বের কারণ ভাবি, সেগুলোই আসলে ভালোবাসার পাগলা ঘুড়িকে সামলে রাখে মজবুত সুতোর মতন। তাই আলাদা দেশ, আলাদা ধর্ম নিয়ে ওঠা নানা কথা আমাদের আলাদা তো করতে পারেইনি, বরং এনেছে এক বৃত্তালপনার ঠিক মাঝখানে। নবাব হোক বা গুণ্ডা, বেড়ে ওঠার গল্প “আমার আমি” থেকে “আমার গল্পে তুমি”তে বদলালে উৎসব পালন করতে হয় সবাইকে।’

আমন্ত্রণপত্রের শুরুতে সৃজিত লিখেছেন, ‘“আমাকে আমার মতো থাকতে দাও” বলার দিন এবার শেষ। “নৌকার পালে চোখ রেখে” দিন কাটানোর আশায় বিয়েটা করেই নিলাম। তাই আপাতত মিথিলা আর সৃজিত “এক রাস্তায় ট্রামলাইন, এক কবিতায় কাপলেট।” মিথিলা ও সৃজিত।’

সৃজিত কার্ডে লিখেছেন, ‘পৃথিবীর সব উৎসবের ইতিহাসই বন্ধুবান্ধবদের খাওয়ানোর ইতিহাস। তাই নতুন আলুর খোসা আর ভালোবাসা দিয়ে ভাত-ডাল মাখার আগে চাই একটা জমজমাট হুল্লোড় আর ভূরিভোজ। ইংলিশ মিডিয়ামে যাকে বলে, “রিসেপশন”। খাঁটি বাঙালি শব্দ-বৌভাত।’

মিথিলার সেলফিতে সৃজিতসহ অন্যরা। ছবি: ফেসবুক
মিথিলার সেলফিতে সৃজিতসহ অন্যরা। ছবি: ফেসবুক

শেষে লিখেছেন, ‘আমাদের খুনসুটি আর ঝগড়াঝাঁটির জীবন আড্ডা দিয়ে জমজমাটি করে তুলতে আসবেন কিন্তু। নমস্কারান্তে মুখার্জি কমিশন।’

গত বছরের ৬ ডিসেম্বর সন্ধ্যা সাতটায় দক্ষিণ কলকাতায় লেক গার্ডেনসে সৃজিত মুখার্জির বাসায় মিথিলা ও সৃজিতের বিয়ের নিবন্ধন হয়। ঘরোয়া সেই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মিথিলার মা-বাবা, ভাইবোন ও সৃজিতের পরিবারের সদস্যরা। আরও ছিলেন এই দুই তারকার ঘনিষ্ঠ কয়েকজন বন্ধু, তাঁরা সবাই চলচ্চিত্রের খুব পরিচিত মুখ। পরদিন তাঁরা মধুচন্দ্রিমার জন্য চলে যান সুইজারল্যান্ডে।