'শাবনূর-সামিরা দুজনের আচরণ রহস্যজনক'

নীলা চৌধুরী, সালমান শাহ, সামিরা এবং শাবনূর। ছবি: সংগৃহীত
নীলা চৌধুরী, সালমান শাহ, সামিরা এবং শাবনূর। ছবি: সংগৃহীত

সালমান শাহর সঙ্গে শাবনূরের অন্তরঙ্গ সম্পর্ককে মিথ্যা তথ্য বলছেন নীলা চৌধুরী। প্রয়াত নায়কের মা নীলা চৌধুরী বলেন, ‘এটা সম্পূর্ণ বানোয়াট কথা। রাজ্জাক–কবরী তো একসঙ্গে অভিনয় করেছেন। তাঁরাও নামকরা তারকা জুটি ছিল। তাহলে কি বলবেন, তাঁদের প্রেম ছিল। জুটি মানেই কি প্রেম?’

রোববার লন্ডন থেকে মোবাইলে প্রথম আলোর সঙ্গে আলাপকালে নীলা চৌধুরী আরও বলেন, ‘শাবনূরকে আমার ইমন (সালমান শাহ) খুব স্নেহ করত। কিন্তু সেই শাবনূর, ইমন হত্যার পর গত ২৪ বছরে কোনো দিন একবারের জন্য দেখা করা দূরে থাক, ফোনও করেনি। আর আজ শাবনূর বলছে আমাকে ক্ষমা চাইতে হবে, কেন? আমি কী বলেছি? আমি তার রহস্যজনক আচরণের কারণ বুঝছি না।’ সালমান শাহর সঙ্গে অতি-অন্তরঙ্গতা নিয়ে শাবনূরের নীরবতায় নীলা চৌধুরী আরও বলেন, ‘ইমন শাবনূরকে সব সময় স্নেহ করত, ওর মাকে সম্মান করত। তাদের অভাব–অভিযোগে ইমন পরিবারের মতো পাশে থাকত। শাবনূরের সঙ্গে পরিবারের মতো সম্পর্ক। তাহলে এখানে প্রেমের সম্পর্ক আসে ক্যামনে? শাবনূর এখন চুপ আছে কেন?’

একটি সিনেমার দৃশ্যে সালমান শাহ ও শাবনূর। ছবি; সংগৃহীত
একটি সিনেমার দৃশ্যে সালমান শাহ ও শাবনূর। ছবি; সংগৃহীত

গত ২৪ ফেব্রুয়ারি চিত্রনায়ক সালমান শাহর অপমৃত্যুর ঘটনায় দায়ের করা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন ঢাকার আদালতে জমা দিয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। পিবিআইয়ের তদন্ত প্রতিবেদন বলছে, চিত্রনায়ক সালমান শাহকে খুন করা হয়নি। তিনি আত্মহত্যা করেছিলেন। এ আত্মহত্যার পেছনে পাঁচটি কারণ ছিল। প্রথম এবং প্রধান কারণ, সালমান শাহ ও চিত্রনায়িকা শাবনূরের মধ্যকার ‘অতি-অন্তরঙ্গতা’। এ নিয়ে সালমানের স্ত্রী সামিরার সঙ্গে দাম্পত্য কলহের জেরে আত্মহত্যা করেন সালমান শাহ।

মা–বাবা ও ভাইয়ের সঙ্গে সালমান শাহ। ছবি: সংগৃহীত
মা–বাবা ও ভাইয়ের সঙ্গে সালমান শাহ। ছবি: সংগৃহীত

নায়ক সালমান শাহ মারা যাওয়ার পর শাবনূর কোনো দিন সালমান শাহর মায়ের সঙ্গে দেখা না করার বিষয়টি নীলা চৌধুরীকে পীড়া দেয় বলে জানান তিনি। এ বিষয়ে নীলা চৌধুরী বলেন, ‘একটা মানুষ মারা গেলেও বন্ধুবান্ধব–শুভাকাঙ্ক্ষীরা শেষবিদায়ে আসে। কিন্তু শাবনূর আসে নাই। অথচ আমার সালমানের সবচেয়ে বেশি স্নেহের ছিল সে। দেশের বাইরে গেলেও সালমান শাহ তার জন্য অনেক কিছু কিনে আনত। এখন ইমনকে ঘিরে যে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে পিবিআই প্রতিবেদন রিপোর্ট প্রকাশ করেছে, সেটা নিয়ে চুপ কেন শাবনূর। সে কেন প্রতিবাদ করে লিখিতভাবে কিছু বলছে না। কেন বলছে না এটা মিথ্যা, এটা ষড়যন্ত্র। শাবনূরের এত ভয় কিসের। কেন ভয়ে পালিয়ে আছে এত দিন। তার কারণ ইমন যে হত্যার শিকার হবে শাবনূর সবই জানত। সে জেনেও আমাদের কিছু জানায়নি। আমার রাগটা এখানেই। ইমন মারা যাবার পর সেই সামিরার সঙ্গে শাবনূরের দোস্তি হয়ে গেল। তারা বান্ধবী। যদি প্রেম থাকত, তাহলে শাবনূর সামিরার বান্ধবী হলো কী করে?’

সালমান শাহর মা নীলা চৌধুরী। ছবি: সংগৃহীত
সালমান শাহর মা নীলা চৌধুরী। ছবি: সংগৃহীত

নীলা চৌধুরী আরও বলেন, ‘ইমন (সালমান) মারা যাবার পর সামিরার সঙ্গে শাবনূরের সম্পর্ক আরও ভালো হলো। তারা বান্ধবী হয়ে গেল। এটা কোন ধরনের বন্ধুত্ব হলো? এখন বেহুদা শাবনূর আমার ছেলের ওপর কলঙ্ক দিচ্ছে।’ কান্নাজড়িত কণ্ঠে নীলা চৌধুরী বলেন, ‘সামিরা আমার ছেলেকে সবচেয়ে বেশি টর্চার করেছে। গত ২৪ বছর ধরে সামিরাও আমার সঙ্গে কথা বলে না, তার কারণ সে ফেঁসে যাবে। এখন ন্যাকামি করে। আগে নাম ধরে বলত নীলা চৌধুরী, এখন বলে আমার আগের শাশুড়ি, ইমনের মা, ইমনের আম্মা। এত ভালোবাসা হঠাৎ কোথা থেকে আসে।’
প্রয়াত নায়ক সালমান শাহর মা সামিরার কথা প্রসঙ্গে আরও বলেন, ‘আমার কোনো দিনও সামিরার সঙ্গে ঝগড়া হয়নি। বরং ইমনের সঙ্গে ঝগড়া হলে সামিরা কাঁদত, তখন আমি ইমনকে বকা দিতাম। ইমন বলত, “আম্মা, তুমি কেন ওকে আদর করছ।”’

শাবনূর। ছবি: প্রথম আলো
শাবনূর। ছবি: প্রথম আলো

১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর মারা যান চিত্রনায়ক চৌধুরী মোহাম্মদ শাহরিয়ার ইমন ওরফে সালমান শাহ। এ ঘটনায় অপমৃত্যুর মামলা করেন তাঁর বাবা কমরউদ্দিন আহমদ চৌধুরী। এরপর ১৯৯৭ সালের ৩ নভেম্বর আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয় পুলিশের অপরাধ ও তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। ওই প্রতিবেদনেও সালমান শাহর মৃত্যুকে ‘আত্মহত্যা’ বলে উল্লেখ করা হয়। সিআইডির প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে সালমানের বাবা ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতে রিভিশন আবেদন করেন। পরে ২০০৩ সালের ১৯ মে মামলাটি বিচার বিভাগীয় তদন্তে পাঠানো হয়। এই আদেশের প্রায় ১২ বছর পর ২০১৪ সালের ৩ আগস্ট বিচার বিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। তাতেও সালমান শাহর মৃত্যুকে ‘অপমৃত্যু’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। ২০১৫ সালের ১৯ এপ্রিল মহানগর দায়রা জজ আদালতে আবার রিভিশন আবেদন করেন সালমান শাহর মা নীলা চৌধুরী। ২০১৬ সালের ২১ আগস্ট ঢাকার আদালত পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দেন।