চীনা নাগরিকের সঙ্গে শাবনূরের বিয়ে হয়েছিল, দাবি স্বামীর

শাবনূর ও অনীক মাহমুদ। ছবি-সংগৃহীত
শাবনূর ও অনীক মাহমুদ। ছবি-সংগৃহীত

‘অনীক মাহমুদ মাদকাসক্ত। অনেকবার মধ্যরাতে মদ্যপ অবস্থায় বাসায় এসে আমার ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালিয়েছে।’ স্বামীকে নিয়ে তালাক নোটিশে এমনটাই অভিযোগ করেছেন শাবনূর। সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন অনীক। পাল্টা শাবনূরের দিকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন অনীক। শুক্রবার বিকেলে ফোন দিয়ে অনীক বলেন, ‘শাবনূরকে আমি ওপেন চ্যালেঞ্জ করলাম। আমার বিরুদ্ধে তাঁকে অভিযোগের প্রমাণ দিতে হবে। প্রমাণ দিতে না পারলে তাঁকে সব অভিযোগ প্রত্যাহার করে ক্ষমা চাইতে হবে।’

শাবনূরের পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, গত ২৬ জানুয়ারি স্বামী অনীক মাহমুদের কাছে বিচ্ছেদ চেয়ে নোটিশ পাঠিয়েছেন শাবনূর। নোটিশে শাবনূর তাঁর স্বামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে বলেছেন, ‘একজন মুসলিম স্ত্রীর সঙ্গে তাঁর স্বামী যে ব্যবহার করেন, অনীক সেটা করছে না। উল্টো নানাভাবে আমাকে নির্যাতন করে। এসব কারণে আমার জীবনে অশান্তি নেমে এসেছে। চেষ্টা করেও এসব থেকে তাকে ফেরাতে পারিনি। বরং আমার সন্তান এবং আমার ওপর নির্যাতন আরও বাড়তে থাকে। উপরোক্ত কারণগুলোর জন্য মনে হয় তার সঙ্গে আমার আর বসবাস করা সম্ভব নয় এবং আমি কখনো সুখী হতে পারব না। তাই নিজের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ এবং সুন্দর জীবনের জন্য তার সঙ্গে সব সম্পর্ক ছেদ করতে চাই। মুসলিম আইন এবং শরিয়ত মোতাবেক আমি তাকে তালাক দিতে চাই। আজ থেকে সে আমার বৈধ স্বামী নয়, আমিও তার বৈধ স্ত্রী নই।’

বিচ্ছেদের নোটিশ এখনো হাতে পাননি বলে জানালেন অনীক। তবে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে এবং টেলিভিশনে বিচ্ছেদের যেসব কারণ দেখানো হয়েছে, তা নিয়ে বিরক্তি ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনীক। তিনি বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগগুলো দেওয়া হচ্ছে, জবাব দিইনি শুধু আমার সন্তান আইজানের দিকে তাকিয়ে। শাবনূরও আমার সন্তানের মা, এটাও একটা ব্যাপার কাজ করেছে। আমাকে বলা হচ্ছে পর–নারীতে আসক্ত, মাদকাসক্ত। সন্তানের ভরণপোষণের দায়িত্ব নিইনি—আমি শাবনূরকে চ্যালেঞ্জ করে বলতে চাই, এসবের কোনো প্রমাণ যদি সে দিতে পারে, আমি যেকোনো শাস্তি মাথা পেতে নেব।’

সন্তানের জন্মের পর থেকেই শাবনূর ও অনীক আলাদা থাকছেন। শাবনূর এটিকে বনিবনা না হওয়া বললেও অনীক বললেন ভিন্ন কথা। অনীকের দাবি, ‘বিয়ের পর তিনি জানতে পারেন, একজন চীনা নাগরিকের সঙ্গে শাবনূরের বিয়ে হয়েছিল। স্বামী হিসেবে এটা শোনার পর তিনি বিস্মিত হন। আড়াই বছর আগে একবার হঠাৎ করে কোনো কথা নেই বার্তা নেই, শরীফ নামের একজন লোকের সঙ্গে মালয়েশিয়া চলে যাওয়ার বিষয়টিও বলেন। অনীক বলেন, ‘এত কিছুর পরও আমি চুপচাপ ছিলাম। বিভিন্ন মিডিয়া থেকেও জানতে চেয়েছিল, আমাদের সম্পর্ক ঠিক আছে কি না। আমি কিন্তু বলেছি, উই আর ফাইন। আমার তো সমাজ আছে, সবার সঙ্গে চলতে হয়, আত্মীয়স্বজন আছে, পরিবার আছে, পরিবারকেও সবার সঙ্গে চলতে হয়। সন্তানের দিকে তাকিয়ে তাই কাউকে কিছু বুঝতে দিইনি। এখন আমার বিরুদ্ধে যে ধরনের অভিযোগ করা হচ্ছে, এসব শুনে আমার বাবা অসুস্থ, হাসপাতালে ভর্তি।’

অনীকের দাবি, তিনিই শাবনূরকে মদ্যপ অবস্থায় পেয়েছেন। বললেন, ‘একজন মানুষ ও স্বামী হিসেবে এসব তো মেনে নেওয়া যায় না। তাই দূরে থেকেছি। শাবনূরকে বাংলাদেশে স্বনামধন্য, জনপ্রিয় এবং অত্যন্ত ভালো মানের অভিনয়শিল্পী হিসেবে শ্রদ্ধা করি। সেভাবেই তাঁর সঙ্গে আমার পরিচয়। আমার সন্তানের মা হিসেবে, আমার সাবেক স্ত্রী হিসেবেও তিনি সম্মানের দাবিদার। কিন্তু তাই বলে আমার সম্পর্কে যা খুশি তা–ই মিডিয়াকে বলবে—এটা তো মানা যায় না!’

স্বামী অনীক মাহমুদের সঙ্গে শাবনূর। ছবি-সংগৃহীত
স্বামী অনীক মাহমুদের সঙ্গে শাবনূর। ছবি-সংগৃহীত

অনীক বলেন, ‘আমাকে মাদকাসক্ত বলা হলো। সবার উদ্দেশে বলতে চাই, আমি প্রতিদিন সকাল ছয়টায় ঘুম থেকে উঠি। এরপর দুই-তিন ঘণ্টা জিমে ওয়ার্কআউট করি। অনেক বেশি স্বাস্থ্যসচেতন মানুষ। আমি অনেক বডি বিল্ডিং প্রতিযোগিতায় বিচারক হিসেবেও থাকি। একজন স্বাস্থ্যসচেতন মানুষ কীভাবে মাদকাসক্ত, সেটা সবার কাছে জানতে চাই। আমি চ্যালেঞ্জ করে বলছি, আমার রক্ত পরীক্ষা করা হোক। যদি মাদকাসক্তের কোনো নমুনা পাওয়া যায়, তাহলে যা শাস্তি প্রাপ্য তা–ই মেনে নেব। শাবনূরের রক্তও পরীক্ষা করা হোক। আমি আসলে এসব মেনে নিতে পারছি না। আমার হাতে কোনো নোটিশ এল না, টেলিভিশন আর পত্রিকায় দেখছি, সন্তানের ভরণপোষণও দিই না! সবার কাছে প্রশ্ন রাখছি, সন্তানের ভরণপোষণ দেওয়ার হিসাব কি আমাকে রাখতে হবে? আমার ছেলে অস্ট্রেলিয়ায় থাকুক কিংবা বাংলাদেশে থাকুক—সব সময় বাবা হিসেবে যাবতীয় দায়িত্ব পালন করেছি। কিন্তু আফসোস, দেড় বছর ধরে সন্তানকে দেখার সুযোগ থেকেও আমি বঞ্চিত।’

জানা গেছে, ২০১১ সালের ৬ ডিসেম্বর অনীক মাহমুদের সঙ্গে আংটি বদল করেন শাবনূর। এরপর ২০১২ সালের ২৮ ডিসেম্বর বিয়ে করেন তাঁরা। ২০১৩ সালের ২৯ ডিসেম্বর আইজান নিহান নামের এক ছেলেসন্তানের মা হন শাবনূর। ছেলেকে নিয়ে তিনি এখন অস্ট্রেলিয়ায় থাকেন।

বেশ কিছুদিন ধরে বিনোদন অঙ্গনে গুঞ্জন, শাবনূর-অনীকের বিচ্ছেদ হয়ে গেছে। সে সময় অনীক বলেছিলেন, এমন কিছু হয়নি। তাঁরা একসঙ্গেই আছেন, ভালো আছেন। শাবনূরের পারিবারিক সূত্র জানিয়েছে, দুই পরিবার মিলে কয়েক দফা আলোচনা করে সংসার টিকিয়ে রাখতে চেয়েছে। কিন্তু দুজনের মতের অমিল এতটাই চূড়ান্ত রূপ ধারণ করে, তাই আলাদা হওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে হয়।
বিচ্ছেদের সিদ্ধান্তের বিষয়ে সিডনি থেকে শাবনূর প্রথম আলোকে বলেন, ‘সন্তান জন্মের পর থেকেই আমাদের মধ্যে একটা দূরত্ব তৈরি হয়। অনেকগুলো বিষয়ে মতের অমিল হচ্ছিল। এরপর আমরা আলাদা থাকা শুরু করি। ভাবলাম, একটা সময় উপলব্ধিতে পরিবর্তন আসবে। কিন্তু তা আর হলো না। এরপর অনীকের বাবা-মায়ের সঙ্গেও কথা বলা হয়। অনেক চেষ্টার পরও বনিবনা হচ্ছিল না। তারপর ভাবলাম, এভাবে থাকার চেয়ে আলাদা থাকাটাই ভালো। আইনজীবীর মাধ্যমে ২৬ জানুয়ারি তালাক নোটিশ অনীকের বাসায় পাঠানো হয়।’

শাবনূর বলেন, ‘অভিনয়ে এসে অনেক চড়াই-উতরাইয়ের মধ্য দিয়ে নিজেকে সবার ভালোবাসার মানুষ হিসেবে তৈরি করেছি। সংসারজীবন শুরু করেছিলাম ভালো থাকার আশায়। চলচ্চিত্রে সবার ভালোবাসা পাওয়া আমার হয়তো সংসারজীবনের ভালোবাসা ভাগ্যে লেখা ছিল না। তাই সংসারজীবনে বিচ্ছেদ করতে হয়েছে। অনীকের পরিবার আছে, আমারও পরিবার আছে—দুজনেরই সমাজ আছে, সেখানে দুজন নিজেদের মতো করে থাকুক, এটাই চেয়েছি।’

কী এমন মতের অমিল হয়েছিল যে বিচ্ছেদের মতো সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে? এমন প্রশ্নে শাবনূর বলেন, ‘সন্তান জন্মের পর অনীক পরিবারের প্রতি অনেক দায়িত্বশীল আচরণ করত না। অনেকবার বলার পরও তার দায়িত্ব আর আচরণগত পরিবর্তন আসেনি, তাই ভাবলাম, এভাবে থাকার চেয়ে না থাকাটাই ভালো।’