বামবার কমিটি 'অবৈধ ও বেআইনি': মাকসুদ

মাকসুদুল হক। ছবি: ফেসবুক থেকে
মাকসুদুল হক। ছবি: ফেসবুক থেকে

বাংলাদেশের ব্যান্ডগুলো নিয়ে সংগঠন ‘বাংলাদেশ মিউজিক্যাল ব্যান্ডস অ্যাসোসিয়েশন’ (বামবা)-এর বর্তমান কমিটিকে ‘অবৈধ ও বেআইনি’ অভিহিত করে ‘নৈতিক কারণে’ নির্বাহী কমিটি থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করেছেন শিল্পী মাকসুদুল হক। সোমবার নির্বাহী কমিটির বৈঠকে ইস্তফা দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন ‘মাকসুদ ও ঢাকা’ ব্যান্ডের এই দলনেতা।

এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তিনি জানিয়েছেন, ‘বামবা তথা বাংলাদেশ মিউজিক্যাল ব্যান্ডস অ্যাসোসিয়েশনের আসন্ন সাধারণ নির্বাচন ও এর চলতি নির্বাহী পর্ষদ থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নিচ্ছি। নৈতিক বিবেচনায় বেআইনি, অবৈধ ও নীতি লঙ্ঘনকারী কিছুর সঙ্গে যুক্ত থাকা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। একই সঙ্গে এ–ও বলে রাখি যে আমাদের ব্যান্ড “মাকসুদ ও ঢাকা” বামবার সদস্য থাকবে কি না, তা ব্যান্ড সিদ্ধান্ত নেবে। ব্যক্তিগত প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত ব্যান্ডের ওপর কোনো প্রভাব রাখবে না।’ পরে বামবার গঠনতন্ত্র ও বর্তমান প্রেক্ষাপট নিয়ে ফেসবুকে আরও একটি পোস্ট লেখেন মাকসুদ।

মাকসুদ লেখেন, বামবার কার্যকরী সদস্যদের সঙ্গে সদস্য ব্যান্ডগুলোর সম্পর্কের ভিত্তি হলো বিশ্বস্ততা ও আনুগত্য। কিন্তু আজ আমাদের প্রতি সদস্য ব্যান্ডগুলোর বিশ্বাস বা আনুগত্য নেই বললে চলে। এর মূল কারণ আমরা তাদের মধ্যে এই আস্থা তৈরি করতে ব্যর্থ হয়েছি যে তারাই হলো বামবার ভবিষ্যৎ ধারক ও বাহক।

হতাশা নিয়ে তিনি লেখেন, ‘আজ অবধি প্রতিটি কাজ বাস্তবায়ন করতে গেলে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয় আমাদের, যেখানে অধিকাংশ সদস্য আর দশটা কনসার্ট বা ইভেন্টের মতোই কেবল পারফর্ম করতে আসে এবং পারফরম্যান্স শেষে চলে যায়। এই আত্মসমালোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, বামবার গঠনতন্ত্র কী বলে আর আমরাই বা তা কতটুকু মেনে চলি, সেটির কোনো গুরুত্ব আজ নেই বললেই চলে।’

বর্তমান নির্বাহী কমিটির পদত্যাগ দাবি করে মাকসুদ লেখেন, ‘বর্তমান নির্বাহী কমিটির উচিত পদত্যাগ করা। এটাই আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। আমরা হয়তো এত দিন যাবৎ অনেক নিষ্ঠা, উৎসাহ এবং বলতে গেলে অনেকটা ঐচ্ছিকভাবেই কাজ করে এসেছি। কিন্তু সংগঠনের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী বর্তমানে কার্যকরী সদস্য হিসেবে কাজ করার কোনো আইনগত ভিত্তি আমাদের নেই।’ আজ দুপুরে মাকসুদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি আমার প্রস্তাবগুলো দিয়েছি। দেখি তারা কী সিদ্ধান্ত নেয়। তারপরে আমি এ নিয়ে বিস্তারিত কথা বলব। আপাতত এটুকুই বলতে চাই, আমি “নৈতিক কারণে” পদত্যাগ করেছি।’

মাকসুদুল হক। ছবি: সংগৃহীত
মাকসুদুল হক। ছবি: সংগৃহীত

মাকসুদের দেওয়া প্রস্তাবগুলো হলো সংগঠনের প্রতি নিজেদের স্বচ্ছতা, দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করতে সবার পদত্যাগ। একটি অ্যাডহক নির্বাচন স্টিয়ারিং কমিটি করে পক্ষপাতহীন নির্বাচনী পরিবেশ সৃষ্টি করা। নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত কার্যকরী সদস্য তথা সংগঠন কর্ণধারদের নাম প্রকাশ্যে ঘোষণা ও তাদের দায়িত্বভার গ্রহণের সঙ্গে সঙ্গে ইএসসির সব কার্যক্রম অবলুপ্ত করা। নিরপেক্ষ বামবাবহির্ভূত একজন নির্বাচন কমিশনার একটি পদ সৃষ্টি, যিনি শুধু প্রয়োগযোগ্য নির্বাচনী আচার-আচরণ ও বিধিমালা প্রণয়নের দায়িত্ব পালন করবেন। প্রতিটি ইওজিএমের ক্ষেত্রে এই পদ কার্যকর করা। সদস্য ব্যান্ডগুলোকে নির্বাচনের আগে বকেয়া চাঁদার কমপক্ষে ৫০ শতাংশ পরিশোধ করা।

গত শতকের আশির দশকে আধুনিক গান ও সিনেমার গানের পাশাপাশি ব্যান্ডসংগীত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল। বাড়ছিল ব্যান্ডের সংখ্যা। এমন পরিস্থিতিতে তৎকালীন কয়েকজন জ্যেষ্ঠ শিল্পী দেশের সক্রিয় ব্যান্ডগুলোকে নিয়ে বাংলাদেশ অ্যামেচার মিউজিক্যাল ব্যান্ডস অ্যাসোসিয়েশন, সংক্ষেপে বামবা নামে একটি সংগঠন করার পরিকল্পনা করেন। পরে ‘অ্যামেচার’ শব্দটি বাদ দিয়ে ১৯৮৭ সালে বন্যার্তদের সাহায্যের উদ্দেশ্যে কনসার্টের মধ্য দিয়ে যাত্রা শুরু করে বামবা। সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন তৎকালীন ফিডব্যাক ব্যান্ডের ভোকাল মাকসুদুল হক। প্রথম যাত্রায় ১৪টি ব্যান্ড দল সদস্য ছিল। ব্যান্ড সংগীতকে দেশব্যাপী সম্মানজনক অবস্থানে নিয়ে যাওয়া, নীতিমালা প্রণয়ন, সামগ্রিক অর্থে এর যাবতীয় সমস্যার সমাধান ও সুবিধা প্রদানের উদ্দেশ্য নিয়ে বামবা কাজ শুরু করে। ধীরে ধীরে বামবার সদস্যসংখ্যা বাড়তে থাকে। বর্তমানে এর সক্রিয় সদস্যসংখ্যা ২৮।