দরজা-জানালা বন্ধ করে শুটিংয়ের প্রস্তুতি

আপনঘর-২ শুটিং হাউস। ছবি: সংগৃহীত
আপনঘর-২ শুটিং হাউস। ছবি: সংগৃহীত

উত্তরার একটি শুটিংবাড়িতে দরজা-জানালা বন্ধ করে লুকিয়ে শুটিংয়ের প্রস্তুতি চলছিল। খবর পেয়ে টেলিভিশনের সংগঠনের নেতারা দ্রুত শুটিং বন্ধ করার নির্দেশ দেন। একটি দৃশ্যের শুটিং বাকি রেখেই শুটিং বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয় ওই শুটিং ইউনিট। করোনাভাইরাস সতর্কতায় ছোট পর্দার ১৪টি সংগঠন সম্মিলিতভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে শুটিং বন্ধের ঘোষণা দেয়। ১৯ মার্চ ছোট পর্দার নির্মাতা, শিল্পী, প্রযোজক সমিতি এবং চিত্র নাট্যকারদের চার সংগঠনের সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক তথ্যমন্ত্রীর সঙ্গে শুটিং বন্ধ করা নিয়ে পরামর্শ করেন। তথ্যমন্ত্রীর পরামর্শে ২২ মার্চ থেকে শুটিং বন্ধ রাখার ঘোষণা দেন সংগঠনের নেতারা।

জানা যায়, ঘোষণা দিলেও সেই নিয়ম না মেনে সকাল থেকে উত্তরার আপনঘর শুটিংবাড়িতে শুরু হয় শুটিং। টেলিভিশন প্রোগ্রাম প্রডিউসারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক সাজু মনতাসির বলেন, ‘আমরা শুনেছি, দরজা-জানালা বন্ধ করে একটি টিম শুটিংয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছিল। আমরা শোনামাত্র সেটা বন্ধ করে দিয়েছি। এরপরও যদি কোনো শুটিং হয়, তাহলে আমরা সাংগঠনিকভাবে সিদ্ধান্ত নেব। মানুষ করোনা নিয়ে আতঙ্কিত। যাঁরা উৎসাহী, তাঁদের বিবেকের কাছে জিজ্ঞাসা করব, তাঁরা কেন শুটিং করছেন। সারা দেশের মানুষ সতর্ক। মানুষ তারকাদের অনুসরণ করে। নিয়ম ভেঙে তাঁরাই যদি বাড়ির বাইরে জমায়েত হন, শুটিং করেন, তাহলে বোঝা যায় আমরা কতটা বিবেকহীন।’

আপনঘর নামে একই মালিকের আরেকটি শুটিং বাড়ি। ছবি: সংগৃহীত
আপনঘর নামে একই মালিকের আরেকটি শুটিং বাড়ি। ছবি: সংগৃহীত

উত্তরার একটি শুটিংবাড়িতে শুটিং করছিলেন নির্মাতা মেহেদী হাসান হৃদয়। তিনি বলেন, ‘আরটিভিতে একটি ধারাবাহিক নাটক চলছিল। আমাদের হাতে ছিল চার পর্বের শুটিং করা ফুটেজ। নাটকটি প্রচারের জন্য দু–তিনটা দৃশ্যের প্রয়োজন দেখা দেয়। আমাদের দু-তিন ঘণ্টার শুটিংয়ের প্রয়োজন হয়। এ জন্য প্রযোজক অনুরোধ করলে আমি বলি সবার কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে আসেন। তিনি অনুমতির আশ্বাস দিলে আজ সকালের দিকে শুটিং শুরু করি। দুটি দৃশ্যের শুটিং হলে ডিরেক্টরস গিল্ড থেকে আমাকে ফোন করে শুটিং করতে নিষেধ করা হয়। সঙ্গে সঙ্গে আমি শুটিং বন্ধ করি। পরে দ্রুত আমরা সবাই শুটিং হাউস থেকে বের হয়ে আসি। এই মুহূর্তে আমরা শুটিং করছি না। পরবর্তী নির্দেশ না দিলে আর শুটিং করব না।’

নাটকটির প্রযোজক রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘সামান্য কাজ বাকি ছিল। নাটকটি প্রচারের সুবিধার জন্য অল্প সময়ের তিনটি দৃশ্যের শুটিং করলেই হয়ে যেত। দ্রুত সেটা করা হয়েছে। বাকি একটি দৃশ্যের শুটিংয়ের আগেই অ্যাসোসিয়েশন থেকে আমাদের ফোন করে নিষেধ করা হয়। সঙ্গে সঙ্গে আমরা শুটিং বন্ধ করি। নাটকটি প্রচারের জন্য আমরা এই বোকামি করেছি। বড় একটা ভুল করে ফেলেছি।’

মন্দিরা শুটিং হাউসের প্রবেশদ্বার। ছবি: সংগৃহীত
মন্দিরা শুটিং হাউসের প্রবেশদ্বার। ছবি: সংগৃহীত

এই নাটকে অভিনয়শিল্পী ছিলেন এফ এস নাঈম, জাকিয়া বারী মম ও মুমতাহিনা টয়া। চেষ্টা করেও অভিনেতা এফ এস নাঈমের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। মম বলেন, ‘আমি চার দিন ধরে ঘরে আছি। বাইরে বের হচ্ছি না। আজ একটি শুটিং করার কথা ছিল, সেটা আমি প্যাকআপ করেছি। এই মুহূর্তে সবার সচেতন থাকা দরকার।’

আপনঘর শুটিংবাড়ির মালিক খলিল হোসেন বলেন, ‘আজ একটা পার্টি কিছু সময় শুটিং করেছে। তাঁদের অনুরোধ শোনাই উচিত হয়নি। এটাই শেষ। যে যতই অনুরোধ করুক, আর লাভ নেই। অন্যদের জন্য বিপদে পড়তে চাই না। ৩১ মার্চের মধ্যে আর শুটিংয়ের সুযোগ নেই। এরপর থেকে নিয়ম মেনেই শুটিং হবে।’

ডিরেক্টরস গিল্ডের সাধারণ সম্পাদক এস এ হক অলিক জানান, শুটিংয়ের বিষয়টি তাঁদের নজরে এলে নির্মাতার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। পরে তাঁরা সঙ্গে সঙ্গেই শুটিং বন্ধ করেন। তাঁদের এই মুহূর্তে শুটিং করা উচিত হয়নি। পৃথিবী একটা সংকটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। এই মুহূর্তে সবাইকে সচেতন থাকতে হবে।

মন্দিরা নামে উত্তরার আরও একটি শুটিংবাড়িতে করোনা প্রতিরোধে সচেতনতা নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি বিজ্ঞাপনের শুটিং করা হয়। প্রয়োজনীয় বিবেচনায় সেই শুটিংটি করতে দেওয়া হয় বলে জানান এস এ হক অলিক। তবে বিকেল পাঁচটার পর বিজ্ঞাপনটির শুটিং শেষ হওয়ার কথা।