করোনায় নিষেধাজ্ঞা, তবুও সুন্দরবনে শুটিং করছেন পরীমনিরা

অ্যাডভেঞ্চার অব সুন্দরবন ছবির শুটিংয়ের ফাঁকে পরীমনি ও তানভীর। ছবি-সংগৃহীত
অ্যাডভেঞ্চার অব সুন্দরবন ছবির শুটিংয়ের ফাঁকে পরীমনি ও তানভীর। ছবি-সংগৃহীত

২৫টি শিশুশিল্পী এবং চলচ্চিত্র তারকা সিয়াম, তানভীর ও পরীমনিকে নিয়ে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে চলছে ‘অ্যাডভেঞ্চার অব সুন্দরবন’ ছবির শুটিং। সরকারি অনুদানের এই ছবিটির পরিচালক আবু রায়হান। সুন্দরবন এলাকায় ১১ দিন ধরে এই ছবির শুটিং চলছে বলে জানা গেছে। শুটিংসংশ্লিষ্ট সবারই ফোন বন্ধ। কেউ যাতে তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পারেন, তাই ফোন বন্ধ করে রেখেছেন বলে জানা গেছে। মঙ্গলবার সকালে ছবিসংশ্লিষ্ট কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রযোজক ও পরিচালকের পরিকল্পনা মতো শুটিং করে যাচ্ছেন তাঁরা। কাল তাঁদের শুটিং শেষ হওয়ার কথা। ২৬ মার্চ অভিনয়শিল্পীদের কারও ঢাকায় ফেরার কথা রয়েছে।

জানা গেছে, শুটিংয়ের জন্য ১৩ মার্চ ‘অ্যাডভেঞ্চার অব সুন্দরবন’ ছবির অভিনয়শিল্পী ও কলাকুশলীরা সুন্দরবন অঞ্চলে পৌঁছান। এই দলে শিশুশিল্পীরা যেমন আছেন তেমনি নায়ক-নায়িকাসহ অন্য অভিনয়শিল্পীরাও আছেন। কলাকুশলীরা তো আছেনই। ধারণা করা হচ্ছে, ৫০ জনের বড় একটি ইউনিট নিয়ে সুন্দরবনে চলছে ‘অ্যাডভেঞ্চার অব সুন্দরবন’ ছবির শুটিং।

এদিকে আজ মঙ্গলবার সকালে একটি ছবি পোস্ট করে পরীমনি জানালেন, ‘অ্যাডভেঞ্চার অব সুন্দরবন’ ছবির শুটিংয়ের আজ তাঁর ১১তম দিন চলছে। পোস্ট করা ছবিটির ক্রেডিট দিয়েছেন অভিনয়শিল্পী শহীদুল আলম সাচ্চুকে। এদিকে করোনাভাইরাস সংক্রমণের এমন দিনে সবাইকে ছবির শুটিং আপাতত স্থগিত রাখতে চলচ্চিত্রসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংগঠন মিলে একটা সিদ্ধান্ত নেয়। এই সিদ্ধান্তের কথা পরিচালক-শিল্পী-প্রযোজক-কলাকুশলীসহ সবাইকে জানিয়েও দেওয়া হয়।

‘অ্যাডভেঞ্চার অব সুন্দরবন’ ছবির মহরত। ছবি-সংগৃহীত
‘অ্যাডভেঞ্চার অব সুন্দরবন’ ছবির মহরত। ছবি-সংগৃহীত

‘অ্যাডভেঞ্চার অব সুন্দরবন’ ছবির বিষয়ে প্রযোজক সমিতির সভাপতি খোরশেদ আলম বলেন, ‘আমরা বিষয়টি অবগত। আমরা প্রযোজক এবং পরিচালকদের জানিয়েছিও। তাঁদের বলেছি, এই ছবির শুটিংয়ে ২৫টি শিশুশিল্পীসহ অভিনয়শিল্পীদের বড় একটা গ্রুপ আছে। এ ধরনের সংকটময় সময়ে যদি ইউনিটের কেউ করোনায় সংক্রমিত হন, তাহলে পুরো দায় ছবির প্রযোজক ও পরিচালককে নিতে হবে। ছবিসংশ্লিষ্টরা আমাদের আশ্বস্ত করেছেন, তাঁরা সর্বোচ্চ সতর্কতা নিয়ে ছবির শুটিং করছেন। প্রয়োজনীয় সব প্রস্তুতি তাঁরা নিয়েছেন।’

শুটিং চালিয়ে নেওয়ার বিষয়টি নিয়ে ভীষণ উদ্বিগ্ন পরিচালক সমিতির সভাপতি মুশফিকুর রহমান গুলজারও। তিনি আজ প্রথম আলোকে বলেন, ‘এটা তো নিষেধ করার কিছু না। তারপরও আমরা জানিয়েছি। আমরা অভিনয়শিল্পী, পরিচালক, প্রযোজক ও কলাকুশলীদের এ ধরনের পরিস্থিতিতে শুটিং করা যে যাবে না, তা জানিয়েছি। এখন কিন্তু “অ্যাডভেঞ্চার অব সুন্দরবন” ছাড়া অন্য কোনো ছবির শুটিং চলছে বলে জানা নেই। নাটকের শুটিংও কিন্তু সবাই বন্ধ রেখেছেন। এই ছবির কারও সঙ্গে এখন যোগাযোগ করাও সম্ভব হচ্ছে না। শুটিং সবার তাগিদ থেকে বন্ধ করে দেওয়া উচিত। শিল্পীরা হয়তো প্রযোজক–পরিচালকের কথার বাইরে যেতে পারছেন না। কিন্তু তারপরও তো কিছু কথা থাকে। সচেতনতা সবার নিজের জায়গা থেকে শুরু করতে হবে। শুটিং চালিয়ে নেওয়াটা মোটেও ঠিক হচ্ছে না। আমাদের সবাইকে তো নিজেদের নিরাপত্তার ব্যাপারটা বুঝতে হবে। প্রত্যেকে আমরা এখন নিরাপদ দূরত্বে থাকছি। এ ধরনের পরিস্থিতিতে এভাবে শুটিং করার অর্থটা কী বুঝতে পারছি না! শুনেছি এই ছবির শুটিংয়ে ২৫টি শিশুও আছে। এই সময়ে শুটিং করলে যে বড় ধরনের ক্ষতি হয়ে যেত, তা–ও কিন্তু না।’

‘অ্যাডভেঞ্চার অব সুন্দরবন’ ছবির শুটিংয়ের ফাঁকে পরীমনি। ছবি-সংগৃহীত
‘অ্যাডভেঞ্চার অব সুন্দরবন’ ছবির শুটিংয়ের ফাঁকে পরীমনি। ছবি-সংগৃহীত

এদিকে সরকার রওনাক নামের একজনকে গতকাল সুন্দরবনে ছবিটির শুটিংয়ে অংশ নেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু করোনার কারণে তিনি যেতে সাহস করেননি। ফেসবুকে দেওয়া পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘নতুন চলচ্চিত্রে কাজ করতে গতকাল সুন্দরবন যাওয়ার কথা ছিল। শুটিং চলছে। পুরো টিম এখনো সুন্দরবন আছে, যেতে পারলাম না। এই প্রথম কাজ করতে গিয়ে কমিটমেন্ট রাখা সম্ভব হলো না, সময়টা যে পক্ষে নেই, কী করব। সবকিছু চিন্তা করে আপাতত আমার সেক্টরের সব কাজ থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিলাম, তবে এই চলচ্চিত্রের প্রচার–প্রচারণার কাজে থাকতে চাই, থাকব। শুভকামনা “অ্যাডভেঞ্চার অব সুন্দরবন” চলচ্চিত্রের জন্য, যাঁরা রাত–দিন খেটে কাজ করছেন, সবাই সুস্থভাবে ফিরে আসুন।’