'একাত্তর' মুক্তি পাবে আজ

‘একাত্তর’ ওয়েব সিরিজের দৃশ্যে মিথিলা। ছবি: ফেসবুক
‘একাত্তর’ ওয়েব সিরিজের দৃশ্যে মিথিলা। ছবি: ফেসবুক

‘একাত্তর’ নামের ওয়েব সিরিজে বলা হবে ১৯৭১ সালে পুরান ঢাকার তরুণ সেলিমের কথা। পিতৃহীন যে ছেলে ছোটবেলা থেকে ক্ষমতাকে হাতের মুঠোয় বন্দী করতে স্বপ্ন দেখেছিল পাড়ার মাস্তান হওয়ার। হয়েছিলও তাই। কিন্তু প্রেম করতে গিয়ে দেখল, সেখানে মাস্তানি বিশেষ পাত্তা পায় না। জানতে হয় কবিতাসহ আরও নানা কিছু।

পরিকল্পনাটা ছিল লেফটেন্যান্ট জেনারেল সাহেবজাদা ইয়াকুব খানের। ঠান্ডা মাথার হত্যাকারী হিসেবে পরিচিত পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর মেজর জেনারেল খাদিম হোসেন রাজা স্বীকার করেছিলেন অপারেশন ব্লিটজের কথা। ১৯৭১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি তিনি তাঁর ব্রিগেডকে অপারেশন ব্লিটজ সচল করার জন্য প্রস্তুত হওয়ার নির্দেশ দেন। ১ মার্চ দুপুরের পর কোনো একসময় এটি কার্যকর হতে পারে বলে তিনি অফিসারদের জানিয়ে দেন। এর অংশ হিসেবে ২৭ ফেব্রুয়ারি খুলনা, ফরিদপুর, বরিশাল, বগুড়া, পাবনা, ময়মনসিংহ ও টাঙ্গাইলে সেনা পাঠানো হয়।

পাকিস্তানের একাধিক সেনা কর্মকর্তার বইতে ‘অপারেশন ব্লিটজ’ নামে একটি সামরিক পরিকল্পনার উল্লেখ আছে। কিন্তু কোনো কারণে বাতিল হয়ে যায় এই পরিকল্পনা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত অপারেশন ব্লিটজ বাতিল করে অপারেশন সার্চলাইটের পরিকল্পনা চূড়ান্ত করা হয়। আজ ২৬ মার্চ ওয়েব প্ল্যাটফর্ম হইচইয়ে মুক্তি পাবে ইতিহাসের সেসব অধ্যায় থেকে অনুপ্রাণিত মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে নির্মিত ওয়েব সিরিজ ‘একাত্তর’।

‘একাত্তর’ ওয়েব সিরিজের দৃশ্যে মোস্তফা মনোয়ার। ছবি: ফেসবুক
‘একাত্তর’ ওয়েব সিরিজের দৃশ্যে মোস্তফা মনোয়ার। ছবি: ফেসবুক

দেশ, রাজনীতি নিয়ে বিশেষ ভাবনা ছিল না পুরান ঢাকার মাস্তান সেলিমের। কিন্তু সেই তরুণই তাঁর গ্যাং নিয়ে জড়িয়ে পড়ল মুক্তিযুদ্ধে। এই চরিত্রটিই বড় পর্দায় জীবন্ত হবে মোস্তফা মনোয়ারের শরীরে। ট্রেইলারে দেখা যায়, কলা ভবনের সামনে ‘ছ্যাবলার মতো’ দাঁড়িয়ে থাকা সেলিমের দিনের কাজের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। সম্ভবত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী, অ্যাকটিভিস্ট জয়িতারূপী নুসরাত ইমরোজ তিশাকে বোধ হয় ভালোবাসেন তিনি। মোস্তফা মনোয়ার বললেন, মুক্তিযুদ্ধের গল্পের এ রকম ‘পপ ভার্সনে’র মতো করে নির্মাণ আগে হয়নি। পোশাক, সেট, লুক, মেকআপ, সেট—সবকিছুই অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে নির্মিত হয়েছে।

পা‌কিস্তা‌নি মেজ‌র ওয়া‌সিমের চ‌রি‌ত্রে দেখা দেবেন ইরেশ জা‌কের। তিনি ভালো কাজের পুরো কৃতিত্ব দিলেন পরিচালক তানিম নূরকে। শুটিং শুরুর মাসতিনেক আগে এই পরিচালক ইরেশের চরিত্রের ‘সাইকোলজি’ নির্মাণের জন্য তাঁকে পড়তে দিয়েছিলেন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের ওপর বেশ কয়েকটি বই।

‘একাত্তর’ ওয়েব সিরিজের পোস্টার। ছবি: ফেসবুক
‘একাত্তর’ ওয়েব সিরিজের পোস্টার। ছবি: ফেসবুক

ইরেশ বলেন, ‘আজ সিরিজটি মুক্তির পর দর্শক কীভাবে নেবেন, সেটা তো আমাদের হাতে নেই। আমাদের হাতে যেটুকু ছিল, আমরা একটুও ছাড় দিইনি। যতটা যত্ন নিয়ে কাজ করা যায়, প্রায় ততটাই যত্ন নিয়ে কজটা করা। পরিচালকসহ অন্য শিল্পীরাও নিজেদের পুরোটা নিংড়ে কাজটা করেছেন। এই সব প্রচেষ্টা ক্যামেরার চোখ এড়ানোর কথা নয়।’ অবশ্য ভালো কাজের পেছনে ‘ভালো বাজেট’কেও কিছুটা কৃতিত্ব দিতে ভুললেন না এই অভিনয়শিল্পী।

পরিচালক তানিম নূর ছোট্ট করে কেবল বললেন, ‘কাজটা করে আমাদের পুরো টিমের খুব ভালো লেগেছে। এখন দর্শকদের ভালো লাগলেই হয়।’ তিশা বললেন, শহরের প্রেক্ষাপটে পিরিয়ডিক্যাল কাজ করা অনেক বড় আয়োজন ও প্রচেষ্টার। এ ধরনের কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকা অভিজ্ঞতার ভান্ডারে ভালো সংযোজন।

একাত্তর ওয়েব সিরিজের দৃশ্যে তিশা। ছবি: ফেসবুক
একাত্তর ওয়েব সিরিজের দৃশ্যে তিশা। ছবি: ফেসবুক

তাঁরা ছাড়া পা‌কিস্তা‌নি সেনা ক্যা‌প্টেন সিরাজ চ‌রি‌ত্রে দেখা দেবেন মোস্তা‌ফিজুর নূর ইমরান আর পা‌কিস্তানি সাংবা‌দি‌ক রুহির চ‌রি‌ত্রে অভিনয় করেন মিথিলা। ওয়েব সিরিজটিতে দেখা যাবে, পশ্চিম পাকিস্তানি হয়েও একাত্তরের প্রকৃত সত্য তুলে ধরছেন তিনি। এই চরিত্রের জন্য উর্দুও শিখেছেন মিথিলা।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই সিরিজের প্রচারণা করছেন তিনি। চরিত্রের সাজে এক ভিডিওতে দর্শককে ছবিটি দেখতে বলেছেন। এই সিরিজে আরও আছেন তারিক আনাম খান, শতাব্দী ওয়াদুদ, দীপান্বিতা মার্টিনসহ অনেকে। ২৩ দিন ধরে পুরান ঢাকা, এফডিসিসহ বিভিন্ন লোকেশনে শুটিং হয় এই ওয়েব সিরিজের।