মনের দুঃখে করোনা নিয়ে গাইলেন আনন্দ

আনন্দ খালেদ। ছবি সংগৃহীত
আনন্দ খালেদ। ছবি সংগৃহীত

করোনা–সচেতনতা নিয়ে গান গাইলেন অভিনেতা আনন্দ খালেদ। তাঁর গানের মধ্যে দিয়ে তিনি তুলে ধরেছেন করোনায় করণীয় ও লকডাউনের কথা। ‘করোনা নিয়ে মানুষের মধ্যে যে অসতর্কতা, সেটা আমাকে কষ্ট দেয়। এই কষ্টটা আমি সহ্য করতে না পেরে মনের দুঃখ থেকে করোনা নিয়ে গান গেয়েছি,’ বললেন এই অভিনেতা।

এই সময়ে মানুষের ঘরে থাকা দরকার, এ জন্য সরকার ছুটি ঘোষণা করেছিল। কিন্তু উল্টো ঢাকার মানুষ এখন সারা দেশে ছড়িয়ে গেল। এখন পুরো দেশ আরও বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হবে আশঙ্কা করে আনন্দ খালেদ বলেন, ‘করোনা–সতর্কতায় সবার নিরাপত্তা বিবেচনা করে সরকার ছুটি দিল। অথচ মানুষ ঈদের ছুটির মতো বাড়ি যাচ্ছে। যেখানে বলা হচ্ছে, ঘর থেকে বের না হতে, প্রয়োজনে বের হলেও নির্দিষ্ট দূরত্বের বাইরে না যেতে, জনসমাগম এড়িয়ে চলতে, সেখানে হাজার হাজার মানুষ ট্রেনের টিকিটের জন্য ভিড় করছে, লঞ্চে ভিড় করছে। কতটা অসতর্ক হলে মানুষ এই সময় দেশের বাড়ি যেতে পারে। সবাই শুধু নিজের কথা ভাবছে। এক স্বার্থপরতার পৃথিবীতে আমরা বসবাস করছি। সারা বিশ্বে করোনাভাইরাস মহামারি আকার ধারণ করছে, অথচ আমরা এটাকে সিরিয়াস হিসেবে নিচ্ছি না। এটা আমাকে ব্যথিত করেছে। মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব হয়ে কেন এই ধরনের জ্ঞানহীনের মতো কাজ করবে। এটাই আমাকে গানটি গাইতে তাড়িত করেছে।’

এই অভিনেতা তাঁর চার লাইনের গানে বলেন, ‘করোনা থেকে বাঁচতে চাইলে ঘর থেকে বের হওয়া যাবে না। লকডাউন চাই আমরা।’ এই প্রসঙ্গে আনন্দ খালেদ বলেন, ‘এই মুহূর্তে সবাইকে ঘরে আইসোলেশন বা কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে। যেখানে অনেক মানুষ পরিবার–পরিজন নিয়ে বাড়িতে যাচ্ছেন। যাঁরা বাড়িতে গিয়ে যা খুশি করবেন—দাওয়াত খাবেন, নদীর পারে ঘুরতে যাবেন, বাজারে আড্ডা দেবেন; তাঁরা কি একবারও ভাববেন না ভাইরাসটি তাঁদের মাধ্যমে গ্রামের অনেক বৃদ্ধ, শিশুদের মধ্যে ছড়িয়ে যেতে পারে। তখন কী হবে? যাঁরা নিয়ম না মেনে ঘর থেকে বের হয়ে গ্রামে যাচ্ছেন, তাঁরা বাড়িতে গিয়ে কতটা সচেতন থাকবেন? এ জন্য দেশটা লকডাউন হওয়া জরুরি।’

একটি নাটকের দৃশ্যে তাহসানের সঙ্গে আনন্দ খালেদ। ছবি সংগৃহীত
একটি নাটকের দৃশ্যে তাহসানের সঙ্গে আনন্দ খালেদ। ছবি সংগৃহীত

সামান্য একটু সচেতনতাই আমাদের বাকি জীবন স্বাভাবিক রাখতে পারে। এ প্রসঙ্গে এই অভিনেতা বলেন, ‘এখন ঢাকা থেকে যিনি এই ভাইরাস বহন করে গ্রামের নিয়ে যাচ্ছেন। তাঁর থেকে যদি পরিবারের অন্যদের মধ্যে ছড়িয়ে যায়, তা হলে যাঁর মাধ্যমে ভাইরাসটি ছড়াল, তিনি কি বাকি জীবন স্বাভাবিক থাকতে পারবেন? নিজেকে ক্ষমা করতে পারবেন? অথচ এই করোনাভাইরাসকে আমরা পাত্তাই দিচ্ছি না!’

শিক্ষিত কিছু তরুণদের কথা উল্লেখ করে খালেদ বলেন, ‘শিক্ষিত একশ্রেণির তরুণেরা করোনাকে অবহেলা করছেন। তাঁরা ভাবছেন, “আমরা মরব না।” কিন্তু তাঁরা ভাবছেন না, তাঁরা না মরলেও এই ভাইরাস তাঁদের মধ্যে দিয়ে অন্য মানুষের শরীরে চলে যেতে পারে। ৫০ বছরের বেশি বয়স্ক মানুষের জন্য এটা প্রাণঘাতী ভাইরাস, এটা সবার ভাবা উচিত। তা ছাড়া এ ভাইরাসে তরুণেরা মারা যাচ্ছেন না, এমন নয়। সবাইকে সচেতন হতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘আজ যদি করোনায় লক্ষাধিক মানুষ আক্রান্ত হয়, তা হলে আমাদের দেশের অর্থনীতি কোথায় দাঁড়াবে। অথচ আমরা একটু সতর্ক হলে সমগ্র দেশকে বাঁচাতে পারি।’

অনেক কষ্ট থেকেই গান করেন আনন্দ খালেদ। এর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি মেয়ে ধর্ষণের শিকার হলে তখনো তিনি মানুষের নষ্ট মানবতার জন্য কষ্ট পান। নিজেই গান লিখে, গান গেয়ে প্রতিবাদ করতে কখনো হাতে তুলে নেন হারমোনিয়াম, কখনো গিটার। এই সম্পর্কে আনন্দ খালেদ জানান, ‘যখন মানুষের আচরণে খুব কষ্ট হয়, দুঃখ হয়, তখন আমি গান করি।’