ভবঘুরে, তোমার জন্য খোলা কানের দরজা

কান চলচ্চিত্র উৎসবের ভেন্যু প্রস্তুত করা হয়েছে ভবঘুরেদের জন্য। ছবি: রয়টার্স
কান চলচ্চিত্র উৎসবের ভেন্যু প্রস্তুত করা হয়েছে ভবঘুরেদের জন্য। ছবি: রয়টার্স

প্রস্তুত ছিল ফ্রান্সের কান শহরের সমুদ্রসৈকত। পালে দো ফেস্তিভাল প্রস্তুত ছিল বিশ্বের ঝলমলে তারকাদের বরণ করে নিতে। কিন্তু আচমকা হাওয়া লন্ডভন্ড করে দিয়েছে পুরো বিশ্বকে। সে আঁচ লেগেছে কান চলচ্চিত্র উৎসবেও। আগামী মে মাসে হতে যাওয়া উৎসবটি আপাতত হচ্ছে না ঠিক সময়ে। যেখানে হওয়ার কথা ছিল চলচ্চিত্র প্রদর্শনী, সেটি খুলে দেওয়া হলো ভবঘুরেদের জন্য। লকডাউনের এই সময়ে ফ্রান্সের এই উৎসবস্থল হয়ে গেল ভাবঘুরেদের জন্য অস্থায়ী আবাস।

গত শুক্রবার থেকে কান চলচ্চিত্র উৎসবস্থল খুলে দেওয়া হলো ভবঘুরে, নিঃস্বদের জন্য—খবর রয়টার্সের। কান টাউন হলের একজন কর্মকর্তা বলেন, প্রতি রাতেই ৫০ থেকে ৭০ জন লোক এখানে থাকছে।

এর আগে ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ বলেছিলেন, ফ্রান্সে ৬ কোটি ৭০ লাখ (৬৭ মিলিয়ন) মানুষ ঘরে আছে এই মহামারি থেকে বাঁচতে। কিন্তু একটা বড় সমস্যা হলো, প্রায় ১২ হাজার ভবঘুরে আছেন, যাঁরা রাস্তায় থাকেন, তাঁদের নিয়ে।

২০১৯ সালের কান চলচ্চিত্র উৎসবের পোস্টার। ছবি: সংগৃহীত
২০১৯ সালের কান চলচ্চিত্র উৎসবের পোস্টার। ছবি: সংগৃহীত

যাঁরা বাড়িতে থাকছেন, তাঁদের নিয়ে দুর্ভাবনা কম। কিন্তু যাঁরা ভবঘুরে, রাস্তায় থাকেন, তাঁরা ঠিকঠাক পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা মেনে চলেন না। তাঁদের মাধ্যমে এই ভাইরাস আরও মারাত্মক ক্ষতি করে বসতে পারে। তাই এই ভবঘুরেদের নিয়ে চিন্তাটা একটু বেশি। এবার তাঁদের জন্যই কান কর্তৃপক্ষ খুলে দিয়েছে নিজেদের দরজা।

কান চলচ্চিত্র উৎসবের থাকার এই জায়গাগুলোর প্রবেশপথে দেখা গেল একজন শ্রমিককে মুখোশ পরা অবস্থায় শরীরের তাপমাত্রা মাপতে। প্রত্যেককেই প্রবেশের আগে তাপমাত্রা পরিমাপ করতে হবে। ভেতরে করা হয়েছে খাবার জায়গা, গোসল করার জায়গা এবং টেলিভিশন দেখা ও ইনডোর খেলাধুলার আলাদা স্থান। তিনটি লাইন করে আলাদা শোবার জায়গা করা হয়েছে।

৭৩ বছরের ইতিহাসে এবারই প্রথম ফ্রান্সের কান শহরের পালে দো ফেস্তিভালে পূর্বনির্ধারিত সময় অনুসারে বসবে না জমকালো, মর্যাদাপূর্ণ এই চলচ্চিত্র উৎসব। আয়োজকেরা নিশ্চিত করেছেন, কোভিড-১৯ নামের এক ভাইরাস বিশ্বে যেভাবে তোলপাড় সৃষ্টি করেছে, এমতাবস্থায় উৎসব করা মোটেই বুদ্ধিমানের কাজ হবে না। তাই ১২ মে থেকে শুরু হওয়া ‘কান চলচ্চিত্র উৎসব ২০২০’ আপাতত স্থগিত। কান চলচ্চিত্র উৎসবের প্রেস রিলিজ থেকে এটি নিশ্চিত হওয়া গেছে।

২০১৮ সালের কান চলচ্চিত্র উৎসবের পোস্টার। ছবি: সংগৃহীত
২০১৮ সালের কান চলচ্চিত্র উৎসবের পোস্টার। ছবি: সংগৃহীত

আয়োজকেরা ধারণা করছেন, জুনের শেষ বা জুলাইয়ের শুরুতে নিয়ে যাওয়া যেতে পারে কানকে। ১৬ এপ্রিল বিশ্বের এই মর্যাদাপূর্ণ চলচ্চিত্র উৎসবের ছবি, পরিকল্পনা ও সময়সূচি নিয়ে যে আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনের কথা ছিল, সেটিও আপাতত হচ্ছে না। কান চলচ্চিত্র উৎসবের দিন, তারিখ ও অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতার পরিকল্পনা হওয়ার পর জানানো হবে সংবাদ সম্মেলনের তারিখ।

ফেস্টিভ্যালের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়ে বলা হয়, ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য এখন মারাত্মক ঝুঁকির মুখে। যাঁরা করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছেন, আমরা তাঁদের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করছি। এই বিশ্ব ও ফ্রান্স সত্যিকারের দুঃসময়ের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে।’

তা ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের ঘোষণা অনুসারে আপাতত ইউরোপের সব ভিসা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ। তাই হলিউডের প্রথম শ্রেণির তারকা, নির্মাতা ও কলাকুশলীরা যদি ভূমধ্যসাগরের তীরে ফ্রান্সের অপরূপ সমুদ্রতট ঘেঁষে পা না রাখেন কানের লালগালিচায়, তবে কানও জৌলুশ হারাবে।

১৯৪৬ সাল থেকে প্রতিবছর অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে কান চলচ্চিত্র উৎসব। কেবল ১৯৬৮ সালে ফ্রেঞ্চ নিউ ওয়েভের ফ্রাঁসোয়া ত্রুঁফো, জঁ লুক গদারদের আন্দোলনের ফলে বাতিল হয়েছিল কান। সেই একবারই। আর এবার হলো স্থগিত।