এশিয়ার যে তিন সিনেমা না দেখলেই নয়

‘রাইজ দ্য রেড ল্যানটার্ন’ সিনেমাকে অনেকেই গত শতকের নব্বইয়ের দশকের অন্যতম সেরা বলে মানেন। ছবি: সংগৃহীত
‘রাইজ দ্য রেড ল্যানটার্ন’ সিনেমাকে অনেকেই গত শতকের নব্বইয়ের দশকের অন্যতম সেরা বলে মানেন। ছবি: সংগৃহীত

করোনাভাইরাস চীন থেকে ছড়িয়েছে ঠিকই, এখন পর্যন্ত প্রতিরোধেও ভালো করেছে এই চীন। কেবল চীন নয়, বলা যায় এশিয়াই এ ক্ষেত্রে ইউরোপ-আমেরিকার চেয়ে অনেক এগিয়ে। আসলে এশিয়া এখন পাল্লা দিচ্ছে অর্থনীতি থেকে শুরু করে অনেক ক্ষেত্রেই। এমনকি পিছিয়ে নেই গান, সিনেমাসহ শিল্প-সংস্কৃতিতেও। আজ না হয় করোনাভাইরাস প্রতিরোধে মন ভালো করা এশিয়ার কয়েকটি দেশের সিনেমার গল্প করি।

ভালো ভালো সিনেমার তালিকা করা মোটেই সহজ নয়। কিন্তু যদি একটি দেশ থেকে একটি করে সিনেমা বেছে নিতে বলা হয়? এই চেষ্টাই করা যাক। একদমই ব্যক্তিগত পছন্দ থেকে এই তালিকা। ঘরে বসে দেখে ফেলেন, নতুন কিছুর স্বাদ পাবেন।

কিম কি দুকের ‘স্প্রিং, সামার, ফল, উইন্টার...অ্যান্ড স্প্রিং’–এর একটি দৃশ্য। ছবি: সংগৃহীত
কিম কি দুকের ‘স্প্রিং, সামার, ফল, উইন্টার...অ্যান্ড স্প্রিং’–এর একটি দৃশ্য। ছবি: সংগৃহীত

চীন দিয়েই শুরু হোক। অসংখ্য ভালো সিনেমা আছে চীনের। আছেন নামকরা অনেক পরিচালকও। তবে আমার কাছে সেরা ‘রাইজ দ্য রেড ল্যানটার্ন’। পরিচালক ঝ্যাং ইমুর এই সিনেমাকে অনেকেই গত শতকের নব্বইয়ের দশকের অন্যতম সেরা বলে মানেন। সিনেমার মূল চরিত্রে আছেন গং লি। একসময় ঝ্যাং ইমু-গং লি জুটি ছিলেন খুবই নামকরা। সিনেমায় যাঁরা রঙের অসাধারণ ব্যবহার দেখতে পছন্দ করেন, তাঁদের অবশ্যই দেখা উচিত। কাহিনি ১৯২০ সালের। অতিদরিদ্র সঙ্গলিয়ান, বয়স ১৯। এক অবস্থাপন্নের চতুর্থ স্ত্রী হয়ে যেতে হয় তাকে। এর পরের গল্প পারস্পরিক সম্পর্ক, ভালোবাসা, ঈর্ষা আর ষড়যন্ত্রের। কিছু সময়ের জন্য এই সিনেমা নিষিদ্ধ করেছিল চীনা কর্তৃপক্ষ।

অং কার ওয়াইকের ‘ইন দ্য মুড ফর লাভ’ ছবিটির নাম আলাদা করে না বললেই নয়। ছবি: সংগৃহীত
অং কার ওয়াইকের ‘ইন দ্য মুড ফর লাভ’ ছবিটির নাম আলাদা করে না বললেই নয়। ছবি: সংগৃহীত

হংকং আলাদা দেশ নয়, কিন্তু এখানকার একটি সিনেমার কথা বলতে লোভ সামলানোই যাচ্ছে না। অং কার ওয়াইকে এ সময়ের অন্যতম সেরা পরিচালক বলে মানা হয়। তাঁর পরিচালিত সব সিনেমাই তালিকা ধরে ধরে দেখা যায়। তবে ‘ইন দ্য মুড ফর লাভ’ ছবিটির নাম আলাদা করে না বললেই নয়। বলা যায়, বিশ্বে যে যেখান থেকেই হোক, সেরা সিনেমার তালিকায় এটি থাকবেই। এমন একটি সিনেমা দেখে মনে হবেই যে পরিচালক আসলে জাদু জানেন।

সময়টা ১৯৬২। দুই দম্পতি, পাশাপাশি ফ্ল্যাটে এসে উঠেছে। চো মো-ওয়ান সাংবাদিক আর সু লি-চেন একটি শিপিং কোম্পানিতে কাজ করে। চো-এর স্ত্রীও কাজ করে, নাইট শিফটে। আর লি-চেনের স্বামী প্রায়ই থাকে জাপানে। তারা দুজনই আবিষ্কার করে যে তারা প্রতারিত। যদিও সিনেমায় কখনোই মিসেস চো বা মি. চ্যানকে দেখানো হয়নি। সিনেমাটি মূলত দুই নিঃসঙ্গ মানুষের গল্প। তাদের কাটানো সন্ধ্যা, কাছের নুডলসের দোকান থেকে ফেরার সময় সরু গলিতে দেখা হওয়া, সম্পর্ক আরও গভীরতর হওয়া, আবার অনেক কিছুই না হওয়া। জটিল অন্তর্দহনের গল্প ‘ইন দ্য মুডস ফর লাভ’। এর থিম সং শুনেই তো পুরো একটা দিন কাটানো যায়।

এই সিনেমাগুলো না দেখলে জীবনের বেশ কয়েক আনাই কিন্তু মিছে। ছবি: সংগৃহীত
এই সিনেমাগুলো না দেখলে জীবনের বেশ কয়েক আনাই কিন্তু মিছে। ছবি: সংগৃহীত

কোরিয়ার সিনেমা নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই। বিশেষ করে এবারের অস্কারে ‘প্যারাসাইট’–এর জয়জয়কারের পর সারা বিশ্বই মেতে উঠেছিল কোরিয়ার সিনেমা নিয়ে। তবে ঘরে থাকার এই দিনগুলোতে আমার পছন্দ কিম কি দুকের ‘স্প্রিং, সামার, ফল, উইন্টার...অ্যান্ড স্প্রিং’। লেকের মধ্যে একটা বাসা। সেখানে থাকে একজন বয়স্ক বৌদ্ধভিক্ষু, আরেকটি ছোট ছেলে। সে–ও দীক্ষা নিচ্ছে। সরল অর্থে বলা যায়, ভিক্ষুদের জীবনের পাঁচ অধ্যায় দেখানো হয়েছে ছবিটিতে। আদতে কিন্তু তা মানুষেরই জীবনচক্র। আবার মানুষের খুশি, রাগ, প্রেম, দুঃখ ও আনন্দের একেকটি অধ্যায় সিনেমাজুড়ে। আর শেষ বিচারে মানসিক আশ্রয়ের খোঁজে থাকা মানুষেরই গল্প এই সিনেমা।
এই সিনেমাগুলো না দেখলে জীবনের বেশ কয়েক আনাই কিন্তু মিছে।