ছোট পর্দায় প্রতিদিন ক্ষতি ৭০ লাখ টাকার বেশি

জমজমাট এক শুটিং মুহূর্তে সহশিল্পীর সঙ্গে মোশাররফ করিম। ফাইল ছবি
জমজমাট এক শুটিং মুহূর্তে সহশিল্পীর সঙ্গে মোশাররফ করিম। ফাইল ছবি

করোনাভাইরাস সতর্কে ছোট পর্দার শুটিং ২২ মার্চ থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত বন্ধ। এ কারণে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন ছোট পর্দার সঙ্গে জড়িত মানুষেরা। শিল্পী থেকে শুরু করে নির্মাতা, প্রযোজক, ক্যামেরার পেছনের মানুষগুলোকে বেকার করে দিয়েছে এই করোনা। ছোট পর্দাসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতিদিন এই ক্ষতির পরিমাণ ৭০ লাখ টাকার বেশি। শুধু নাটকের শুটিং বন্ধ থাকায় এই আর্থিক অঙ্কের ক্ষতি হচ্ছে।

এখন ঈদের মৌসুম চলছে। আছে পয়লা বৈশাখের কাজ। এ দুই বিষয় উল্লেখ করে ডিরেক্টরস গিল্ডের সভাপতি সালাউদ্দিন লাভলু জানান, এ সময় বছরের সবচেয়ে বেশি কাজ হয়। অনেক নির্মাতা সারা বছর কাজ না করলেও ঈদে নাটক নির্মাণ করেন। সচরাচর এই সময় থেকে ঈদের আগের দিন পর্যন্ত টানা কাজ চলে। নির্মাতা, শিল্পী, প্রযোজকসহ কলাকুশলীদের এই সময়ে কাজের ব্যস্ততায় দম ফেলার সময় থাকে না। প্রতি মাসে ছোট পর্দায় ৪০ থেকে ৫০ কোটি টাকা বিনিয়োগ হলে এই সময়ে বিনিয়োগের পরিমাণ আরও অনেক বেড়ে যায়। শুটিং বন্ধ ঘোষণার পরদিন কত টাকার ক্ষতি হচ্ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এই মুহূর্তে প্রতিদিন আমাদের ৪০ থেকে ৫০টির বেশি একক, ধারাবাহিক নাটকের শুটিং হওয়ার কথা। কিন্তু সেগুলো করোনা–পরিস্থিতির কারণে বন্ধ আছে। আমাদের সবার নির্মাতা, আর্টিস্ট, প্রযোজক, ক্যামেরাম্যানসহ অন্য সবার ব্যয় এর মধ্যে প্রতিদিন দিন ৬০ থেকে ৭০ লাখের বেশি টাকার ক্ষতি হচ্ছে’।

শুটিং বন্ধ থাকলে সব মিলে প্রতিদিন ৭০ লাখ টাকা ক্ষতি হয়। ছবি: সংগৃহীত
শুটিং বন্ধ থাকলে সব মিলে প্রতিদিন ৭০ লাখ টাকা ক্ষতি হয়। ছবি: সংগৃহীত

ছোট পর্দার প্রযোজকদের সংগঠন বাংলাদেশ প্রডিউসারস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ইরেশ যাকেরও একই মত দিলেন। তিনি বলেন, ‘এক মাস শুটিং হলে সব মিলে নাটকের বাজেট থাকে, সেটা সর্বনিম্ন ৫০ কোটি টাকা। এই মুহূর্তে আমাদের নাটকের ব্যস্ততা বেশি। সে হিসাবে এখন আমাদের প্রতিদিন ৭০ লাখ টাকার বেশি ক্ষতি হচ্ছে। এখন আমরা যারা চলতে পারছি, তারা এই ইন্ডাস্ট্রির অসচ্ছলদের কথা ভাবছি। কারণ, দীর্ঘদিন শুটিং বন্ধ থাকলে ছোট পর্দার সঙ্গে জড়িত নিম্ন এবং নিম্ন–মধ্যম আয়ের এসব মানুষেরা অনেকেই আর্থিকভাবে চরম ক্ষতির সম্মুখীন হবেন।’

একটি নাটকের শুটিংয়ে তিশা ও অন্য শিল্পীরা। ছবি: সংগৃহীত
একটি নাটকের শুটিংয়ে তিশা ও অন্য শিল্পীরা। ছবি: সংগৃহীত

এই সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সাজু মুনতাসির বলেন, ‘কমপক্ষে প্রতিদিন ৩০ থেকে ৪০টি নাটকের শুটিং বন্ধ হয়ে আছে। সে হিসাবে আমাদের আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ প্রতিদিন ৬০ থেকে ৭০ লাখ টাকা। এর সঙ্গে জড়িত স্বল্প আয়ের কয়েক হাজার মানুষ। যাদের বেশির ভাগ দৈনিক আয় দিয়ে চলে। তারা চরম বেকায়দায় পরে যাবে। দিন দিন এই ক্ষতি আমাদের বাড়তে থাকবে। কারণ, করোনা–পরিস্থিতির কারণে শুটিং আরও বেশ কিছুদিন বন্ধ রাখতে হবে। এত বড় একটা ক্ষতি সামাল দেওয়া সরকারের সহযোগিতা ছাড়া সম্ভব নয়।’

শুটিংবাড়ি মালিকদের সংগঠনের সভাপতি মিজানুর রহমান খান বলেন, ‘আমরা খুব বিপদে আছি ভাই। আমাদের শুটিং হাউসগুলোর প্রতিদিন দুই লাখের বেশি টাকা লোকসান হচ্ছে।’ তিনি আরও জানান, ‘ঢাকায় ২০ থেকে ২২টি শুটিংবাড়িতে শুটিং বন্ধ আছে। এসব বাড়িতে প্রতিদিন ১০ থেকে ১৮ হাজার টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে। আমাদের বাড়িগুলো মূলত ভাড়া নেওয়া। কীভাবে ভাড়া দেব বুঝতে পারছি না।’

একটি নাটকের শুটিংয়ে মেহ্‌জাবীন ও আফরান নিশো। ছবি: সংগৃহীত
একটি নাটকের শুটিংয়ে মেহ্‌জাবীন ও আফরান নিশো। ছবি: সংগৃহীত

করোনাভাইরাস সতর্কে ছোট পর্দাসংশ্লিষ্ট সব শুটিং ২২ থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত বন্ধ। ১৯ মার্চ বন্ধ রাখার ঘোষণা দেয় ছোট পর্দার ১৪টি সংগঠন। এই সংগঠনের বেশ কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, করোনা–পরিস্থিতির জন্য এই বন্ধ ঘোষণা আরও বড় সময়ের জন্য করার সিদ্ধান্ত নেওয়া লাগতে পারে।