'সব ক্ষেত্রে ভালোবাসার ফলাফল বেশি পাওয়া যায়'

জাকিয়া বারী মম। ছবি-সংগৃহীত
জাকিয়া বারী মম। ছবি-সংগৃহীত

২৬ মার্চ চ্যানেল আইয়ে প্রচারিত হয়েছে তাঁর অভিনীত ‘আঁধারে আভা’। ৯ দিন ধরে ঢাকার উত্তরার বাড়িতে কোয়ারেন্টিনে আছেন জাকিয়া বারী মম। গৃহবন্দী মমকে গতকাল সন্ধ্যায় ফোন করে জানা গেল কী করছেন, কী ভাবছেন।

কোয়ারেন্টিনের এই সময়ে কী করছেন?
নানা রকম কার্যক্রম তো চলছে। টুকটাক ঘরের কাজ যেমন করছি, তেমনি ঘুম, খাওয়াদাওয়া, বই পড়ছি আর হাবিজাবি লেখালেখি। সিনেমা দেখছি, বিশ্ববিদ্যালয়-বন্ধুদের সঙ্গে ফেসবুক গ্রুপে আড্ডা দিচ্ছি।
কোন বিষয় নিয়ে লিখছেন?
নানা কিছু মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। যা মনে আসছে, তা-ই লিখে রাখছি। লিখতে গিয়ে দেখলাম, হাতের লেখা খারাপ হয়ে গেছে। নতুন করে লেখার কারণে প্র্যাকটিসও হচ্ছে।

করোনার এই সময়ে ঘরে থেকে কোনো উপলব্ধি কি হচ্ছে?
করোনাভাইরাসের এখন পর্যন্ত তো কোনো প্রতিকার নেই। সারা পৃথিবীতে এটা ভয়ংকর একটা ব্যাপার হয়ে গেছে, যা কখনোই কেউ ভাবতে পারেনি। আমার কাছে মনে হয়, করোনা একটা শিক্ষা দিয়ে যাচ্ছে। কেন জানি মনে হচ্ছে, করোনার কারণে মানুষের প্রাকৃতিক জীবনযাপনে ফিরে আসার ঘটনা ঘটবে। ফেসবুকে দেখছি, কক্সবাজারে ডলফিনের দেখা মিলেছে, দিনাজপুরে উটপাখি আসছে। এই তো একটু আগে দেখলাম দিল্লির রাস্তায় হরিণ হাঁটছে। মনে হচ্ছে, করোনায় প্রকৃতি তার রূপে ফিরে আসছে। মানুষ স্বার্থপর, তাদের শুধু চাই, চাই, আরও চাই। এই চাওয়া শব্দটার লাগাম দিচ্ছে। মানুষের জীবনে এত চাওয়ার কি আসলেই দরকার আছে, করোনা এসব নতুন করে আমাকে ভাবাচ্ছে, নতুন একটা পথের ইঙ্গিত দিচ্ছে।

জাকিয়া বারী মম। ছবি-সংগৃহীত
জাকিয়া বারী মম। ছবি-সংগৃহীত

কেন এমনটা মনে হচ্ছে?

আমার কথা যদি বলি, খুব ব্যস্ত, কত বড় স্টার। বাংলাদেশের মানুষ আমাকে চেনে, খুব ভাব আমার, তাই না—অথচ নিজের সঙ্গে কথা বলার সময় নেই আমাদের কারোরই। নিজেদের সঙ্গে কথা বলার জন্য, নিজেদের জানার জন্য ওই সময়টা প্রকৃতিই আমাদের করে দিয়েছে। প্রকৃতি বলছে, নিজের সঙ্গে নিজেকে কথা বলতে, নিজের ভুলগুলো সংশোধনের সুযোগ করে দিয়েছে। ঘরের মধ্যে প্রকৃতি আমাদের বদ্ধ করে দিয়েছে আর যেন বলছে—মম, নিজেকে এত বড় ভেবো না, এসব ছাড়ো, প্রাকৃতিক জীবনযাপনে ফিরে আসো। ভালো কাজ করো। ভালো পথে আসো। ভালো চিন্তা করো। মানুষের আসলে কোনো কিছুই নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা নেই। মানুষ বরাবরই সবকিছু দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়েছে। কিছু মানুষ প্রযুক্তির উদ্ভাবন করছে, আর বেশির ভাগ মানুষ সেই প্রযুক্তি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়েছে এবং হচ্ছে। কিন্তু মানুষ যদি প্রযুক্তি মানবকল্যাণের জন্য নিয়ন্ত্রণ করত, সেটা কিন্তু অন্য রকম হতে পারত। নগরায়ণ, শিল্পায়ন আমাদের দরকার—অস্বীকার করছি না, প্রয়োজন নেই, তা বলছি না, কিন্তু বাড়াবাড়ি বেশি হয়ে গিয়েছিল বলে মনে হয়। এই যে ঢাকা শহর এখন জ্যামমুক্ত। ঢাকার রাস্তারা কী খুশি (হাসি)! ওদের ওপর দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার, লাখ লাখ গাড়ি চলছিল। কী পরিমাণ টর্চার! রাস্তা যদি কথা বলতে পারত, তাহলে বলত, আমরা আজ খুশি। আকাশ খুশি, বাতাসও খুশি। পাখি খুশি। আমরা দেখছি প্রকৃতি খুশি। প্রকৃতির প্রতি আমরা অবিচার করছি অনেক। করোনা আমাদের জীবনের নতুন একটা পথের দিশা দিচ্ছে।

করোনা নিয়ে ভারতীয় গায়ক নচিকেতাও কবিতায় এমনই কিছু বলার চেষ্টা করেছেন।
আমি দেখেছি। শেয়ারও করেছি। তবে আমি নচিকেতার সঙ্গে একটু ভিন্নমত পোষণ করি। ভয় নয়, করোনা সবার মধ্যে যে ভালোবাসা ছড়িয়ে দিয়েছে, তা থেকে যাক। ভয় থেকে হয়তো আমরা অনেক কিছু করতে পারি, কিন্তু ভালোবাসা থেকে যা করব, সেটা হবে অনেক বেশি কল্যাণকর। বাস্তবতায় হয়তো সবাই ভয় থেকে ঘরে ঢুকেছে, এটাকে ভয় না করে যদি ভালোবাসায় রূপান্তর করতে পারি, তবেই সুন্দর পৃথিবী পাব। সব ক্ষেত্রে ভালোবাসার ফলাফলটা বেশি পাওয়া যায়। আমার তো এ-ও মনে হয়...

জাকিয়া বারী মম। ছবি-সংগৃহীত
জাকিয়া বারী মম। ছবি-সংগৃহীত

কী মনে হয়?
করোনা নিয়ে প্রত্যেকের অনেক ভয় দেখছি। আমার না আল্লাহ তাআলার প্রতি শুকরিয়া বেড়ে গেছে। পৃথিবীতে অনেক কিছু অনুধাবন করতে পারার মতো সময়-সুযোগ সবকিছু আমাদের লোপ পেয়ে গিয়েছিল, এসব আবার ফিরে এসেছে। আমরা কাজপাগল হয়ে গিয়েছিলাম। আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। উন্নতি করতে হবে। দৌড়াও আর দৌড়াও, কত কী...। আমার তো মনে হয়েছে, সারা বিশ্বের অভিনয়শিল্পের প্রেক্ষাপটে আমি কি আদৌ কোনো ম্যাটার করি! কোথাও কি আমার অবস্থান আছে? সারা পৃথিবীতে বাংলাদেশ একটি ছোট্ট দেশ। সেই ছোট্ট দেশের ছোট্ট ইন্ডাস্ট্রিতে আমি অনেক বড় না, এটা হয় না কখনো। আমি ছোট জায়গায় বড় না হয়ে বড় জায়গায় ছোট হতে চাই। আমি প্রকৃতির ছোট্ট একটা উপাদান হতে চাই, কৃতজ্ঞ সত্তা হতে চাই।

করোনা-পরবর্তী সময়ে কেমন বাংলাদেশ আর পৃথিবীর প্রত্যাশা করেন?
মানবিক গুণাবলিসম্পন্ন মানুষের আবাসস্থল হবে পৃথিবী ও বাংলাদেশ। কোনো ধরনের কোনো অস্থিরতা দেখব না। এই যে এখন সবাই ভালোবাসার পৃথিবী, সহমর্মিতার পৃথিবীর দৃষ্টান্ত স্থাপনের চেষ্টা করছে, এমনটাই যেন থাকে। পুরো পৃথিবীর মানুষ এসব থেকে অনেক দূরে চলে গিয়েছিল। আমরা সবাই যেন বন্ধু, আত্মীয়স্বজন, পরিবার, শুভাকাঙ্ক্ষীসহ পৃথিবীর যেকোনো মানুষের আনন্দে আনন্দিত হতে পারি, দুঃখে পাশে থাকতে পারি, এমন পৃথিবীর প্রত্যাশা করি।

করোনার দিনে ঘরে থেকে বই পড়ার কথাও বলছিলেন।
হুমায়ূন আহমেদের ‘মিসির আলী সমগ্র’ চলছে। এর বাইরে ভিক্টর ফ্রাংকলের ‘ম্যান সার্চ ফর মিনিং’, হাসান আবদুল কাইয়ুমের ‘মজলুম জননেতা মাওলানা ভাসানী’, সিগমুন্ড ফ্রয়েডের ‘মনঃসমীক্ষা’।

জাকিয়া বারী মম। ছবি-সংগৃহীত
জাকিয়া বারী মম। ছবি-সংগৃহীত

কী কী ছবি দেখলেন?
সময় যেহেতু অফুরন্ত, নতুন করে পুরোনো ছবিও দেখছি। ‘দ্য টাউন’, ‘মাশিয়াহ’, ‘শি’, ‘লুচি’, ‘মানি হেইস্ট’, ‘ইউ’, ‘বেবি বস’। ‘প্ল্যাটফর্ম’ দেখা শুরু করেছি।

নাটকের মানুষ শেষ কবে নাটকের কাজ করেছিলেন?
এ মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে। ২৬ মার্চ সন্ধ্যায় চ্যানেল আইয়ে এটি দেখানো হয়। বহুদিন পর টেলিভিশনে নাটকটি দেখলাম। এখন তো ইউটিউবে নাটক দেখা হয়। নিজের অভিনয় দেখার পর বসে বসে ভাবলাম। নিজেকে জাজ করলাম। মনে মনে নিজেকে ১০-এ ৫ দিলাম। এ-ও মনে করলাম, সামনে আরও আগাতে হবে।

কারও অভিনয় দেখে ১০-এ ১০ দিয়েছেন কি?
আছে তো। টম হ্যাংকসের অভিনয় দেখে সব সময় ১০-এ ১০ দিই। নারী অভিনয়শিল্পীর মধ্যে এখনকার সময়ে আলিয়া ভাটকে খুবই ন্যাচারাল মনে হয়। মনে হয় চরিত্রের সঙ্গে মানিয়ে যায়।

জাকিয়া বারী মম। ছবি-সংগৃহীত
জাকিয়া বারী মম। ছবি-সংগৃহীত

দেশে এমন কেউ কি আছেন?

আমি মোশাররফ করিমের অভিনয়ের ভক্ত। নারীদের মধ্যে পছন্দের অভিনয়শিল্পী রুনা খান। কাছাকাছি সময়ে মেহ্‌জাবীনকে অনেক সিনসিয়ার মনে হয়।

কারও অভিনয় দেখে ঈর্ষাকাতর হন?
আমি টম হ্যাংকসকে ঈর্ষা করি। তাঁকে এতটা আমি ভেতরে লালন করি, করোনায় আক্রান্তের খবরে সেদিনই ঘরে ঢুকে যাই।