'জীবনে ভুল সিদ্ধান্ত বেশি নিয়েছি'

শাকিব খান। ছবি–সংগৃহীত
শাকিব খান। ছবি–সংগৃহীত
>দুই দশক ধরে পর্দা মাতিয়ে চলছেন চিত্রনায়ক শাকিব খান। দেশের সীমানা পেরিয়ে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের সিনেমাজগতেও নিজের ছাপ ফেলেছেন। বর্তমানে চলচ্চিত্রে একক রাজত্ব করা এই নায়কের পথচলা মসৃণ ছিল না। সংগ্রাম করে চলছেন, আলোচনা-সমালোচনার মুখোমুখি হচ্ছেন, পেরোচ্ছেন প্রতিকূলতা। আজ ২৮ মার্চ দেশের সিনেমার জনপ্রিয় এই নায়কের জন্মদিন। নতুন আরেকটি বছরে পা রাখলেন তিনি। অন্যান্যবার জন্মদিনে শাকিব খানকে ঘিরে যে আনন্দ আর উন্মাদনা থাকে, এবার তেমন আয়োজন নেই। করোনাভাইরাস যেন সবকিছু থামিয়ে দিয়েছে। তারপরও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই নায়ককে জন্মদিনের শুভেচ্ছা ও শুভকামনা জানাতে ভোলেননি তাঁর সহকর্মী, শুভাকাঙ্ক্ষী, বন্ধু-পরিজন ও ভক্তরা। জন্মদিনের প্রথম প্রহরটা কেমন ছিল, তা–ই জানালেন শুক্রবার রাতে

শুভ জন্মদিন।
ধন্যবাদ। কিন্তু দেশ ও পৃথিবীর এমন অবস্থায় জন্মদিন নিয়ে ভাবতে ইচ্ছে করছে না। আমার দেশ ও দেশের বাইরে সবাইকে নিয়ে ভীষণ চিন্তা হচ্ছে। সৃষ্টিকর্তা সবাইকে ভালো রাখুক, এটাই মন থেকে চাইছি।

করোনাভাইরাসের এই সময়ে জন্মদিন নিশ্চয় অনেক দিন মনে থাকবে?
এমন জন্মদিন সত্যিই স্মরণীয় একটা ব্যাপার। যত দিন বেঁচে থাকব, মনে থাকবেই। পুরো পৃথিবীতে এখন দুর্যোগের সময় পার করছে, পুরো পৃথিবী আতঙ্কিত—যা আমার ছোট্ট জীবনে দেখিনি কিংবা শুনিনি। আমরা এক দেশের সঙ্গে আরেক দেশের যুদ্ধের খবর শুনেছি, দেখেছি। টেলিভিশন আর পত্রপত্রিকার খবরে নানান সময় নানান দেশের মানুষের দুর্দশার কথা শুনেছি। কিন্তু পুরো পৃথিবীর এমন ভয়ংকর চিত্র এর আগে কেউ দেখেনি। করোনাভাইরাস সংক্রমণে কাবা শরিফ তাওয়াফ করা বন্ধ হয়ে গেছে। মসজিদে নববিতে যাওয়া বন্ধ হয়ে গেছে। পৃথিবী যেন থমকে গেছে। পৃথিবীর এমন একটা ভয়ংকর সময়ের কথা যাঁরা বেঁচে থাকবেন, সবার মনে থাকবে। আমরা যেমন মুরব্বিদের ১৯৭১ সালের যুদ্ধের কথা বলতে শুনি, বেঁচে থাকলে আমরাও আমাদের পরের প্রজন্মকে করোনাভাইরাস সময়ের গল্প করব।

করোনাভাইরাসের এই সময়টায়ও ফেসবুকে আপনাকে ভালোবাসা জানাচ্ছেন অনেকে। এসব কি আপনার নজরে এসেছে?
আমি একটা ভিডিও দেখলাম, যেখানে গাজী মাজহারুল আনোয়ার, ফারুক সাহেবদের মতো বরেণ্য ব্যক্তিরা কথা বলছেন। এর বাইরেও চলচ্চিত্রের অনেক সিনিয়র, সমসাময়িক বন্ধু, অনুজদের শুভেচ্ছাও পাচ্ছি। এসব অনেক বড় দোয়া। যখন একটু ঝিমিয়ে পড়ি, এসব ভালোবাসা আমাকে শক্তি দেয়। এগিয়ে যেতে অনেক বেশি অনুপ্রাণিত করে। আমার ব্যক্তিগত জীবনে সঠিক সিদ্ধান্তের চেয়ে ভুল সিদ্ধান্ত অনেক বেশি নিয়েছি। এসবের কারণে মানসিকভাবে ডিস্টার্বডও ছিলাম। দেশের বাইরের অনেক কাজও করতে পারিনি। অবশ্য আমার সুস্থ মস্তিষ্ক এসব সিদ্ধান্ত নেয়নি। আর এই সুযোগটাই অনেকে নিয়েছে।

শাকিব খান। ছবি-প্রথম আলো
শাকিব খান। ছবি-প্রথম আলো

এসব ভুলের জন্য অনুশোচনা হয় কি?

এসব ভুলের জন্য অনুশোচনা তো অবশ্যই হয়। একটা ভুল আরেকটা ভুলের জন্ম দেয়। মানুষ চলার পথে যদি ভুল মানুষের দেখা পায়, আরও ভুল করে। আমার ক্ষেত্রে তা–ই ঘটেছে। তারপরও পৃথিবীর সংকটময় সময়ে এত এত মানুষের ভালোবাসা আমাকে বলছে, যত সমস্যাই আসুক, কাজ করে যাও।

এবারের জন্মদিনে আপনার চাওয়া কী?
বিশ্বে এখন যা ঘটছে, এমন কিছুর জন্য আমরা আসলে কেউ প্রস্তুত ছিলাম না। কেউ ভাবতেও পারিনি এমন কোনো দুর্যোগ আমাদের জীবনে আসতে পারে। করোনাভাইরাস সংক্রমণের এই সময়টায় অনেক অসচ্ছল মানুষ কষ্টে আছেন। এই সময়টায় আশপাশে থাকা অসচ্ছল মানুষের কথা ভাবতে হবে। আমি আমার মতো কাজ করে যাচ্ছি। জন্মদিনে চাই, সবাই যার যার জায়গা থেকে তার গরিব আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব, পাশের মানুষের পাশে যেন থাকে। অনেককে দেখা যায়, লোক দেখানো কিছু করছে, অথচ নিজের ঘরের কাজে সহযোগিতা করছে যে মানুষটি, তার খোঁজ নেওয়ার সময়টুকুও নেই। কিংবা নিজের অফিস স্টাফের খবরও নিচ্ছে না। সোজা কথা, তার ওপর যাদের হক, তাদের দিকে তাকাচ্ছে না। আরেকটা কথা, সহযোগিতা করার বিষয়টি কেনই–বা মানুষকে জানাতে হবে! আমাদের ধর্মেই আছে, এক হাতে কিছু দিলে আরেক হাতও যেন না জানে। যা–ই হোক, প্রত্যেকে প্রত্যেকের সমস্যায় যেন এগিয়ে আসে। লোক দেখানোর কোনো কিছু করার দরকার নেই। আমরা তো সৃষ্টিকর্তার সন্তুষ্টির জন্য করছি। এর বাইরে আরেকটা বিষয় চাই।

কী সেই চাওয়া?
আমার দেশটা যেন কোনো সংকটে না পড়ে। আমার দেশটা খুব গরিব, অত উন্নত দেশ না। অনেক কষ্টে দেশটা সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। সৃষ্টিকর্তা আমার দেশের মানুষকে মহামারি থেকে বাঁচাক। পৃথিবীটাও রক্ষা করুক। বড় বড় অনেক দেশ হয়তো নিজেদের সমস্যা কাটিয়ে উঠবে। আমার দেশে দিন আনে দিন খাওয়া লোকের সংখ্যা বেশি। আমার দেশের মানুষের চাহিদাও অল্প। ডাল-ভাতে খুশি তারা। সবাই মিলে যেন এই দেশের সংকট কাটিয়ে উঠতে পারি।

করোনাভাইরাস সংক্রমণের এই দিনে আপনি হোম কোয়ারেন্টিনে আছেন। সময় কাটছে কীভাবে?
এত লম্বা অবসর কখনোই পাইনি। এই সময়টায় পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলছি। কয়েকটি চিত্রনাট্য পড়ে ছিল, পড়ছি। এর মধ্যেও অনেকে চিত্রনাট্য পাঠিয়েছেন, ওসব পড়ছি। করোনা–পরবর্তী সময়ে আবার তো কাজে নেমে পড়তে হবে। তবে একটা কথা মনে হচ্ছে, পৃথিবীর মানুষকে শুধরে যাওয়ার সুযোগ দিলেন সৃষ্টিকর্তা। আমি মনে করি, সব খারাপের পরও ভালো সময় আসে। বাড়ির দোতলায় আমার নিজের একটা জিমও আছে, সেখানে সময় পার করছি। শারীরিক সুস্থতার পাশাপাশি আমাদের মানসিক সুস্থতাও দরকার। ব্যায়াম করলে মানসিক প্রশান্তিও আসে। তবে আমার বিশ্বাস, দ্রুতই সব ঠিক হয়ে যাবে। আমরা আবার কাজে ফিরব। আরও দ্বিগুণ উদ্যমে নতুন এক পৃথিবীর জন্য সবাই কাজে নেমে পড়ব।

সম্প্রতি মুক্তি পাওয়া বীর ছবিতে শাকিব খান। ছবি-সংগৃহীত
সম্প্রতি মুক্তি পাওয়া বীর ছবিতে শাকিব খান। ছবি-সংগৃহীত

করোনাভাইরাস–পরবর্তী সময়টায় আপনার প্রত্যাশা কী?

পুরো পৃথিবী মিলে এখন একটা শত্রুর মোকাবিলা করছে, যে শত্রুর নাম করোনাভাইরাস। এই একতা, প্রকৃতির প্রতি অবিচারের উপলব্ধি যেন সব সময় সবার মধ্যে থাকে। করোনা সবার মধ্যে ভয় এনে দিয়েছে, ঐক্যের মালা গেঁথে দিয়েছে, ভালোবাসার বীজ বপন করেছে—এসব যেন করোনা–পরবর্তীকালে মানুষের মনে বজায় থাকে। তবেই আমরা একটা সুন্দর পৃথিবী পাব। সুন্দর ও সুস্থ পৃথিবী গড়তে হবে। তা না হলে এমন দুর্যোগ আরও আসবে, সবকিছু লন্ডভন্ড করে দিয়ে যাবে। অসুস্থ প্রতিযোগিতা বাদ দিতে হবে।

ঈদের ছবির শুটিং করবেন বলেছিলেন, সেটি তো বন্ধ।
এখন তো ঘরে থাকার সময়। তবে কাজের মানুষ তো কাজ করবেই। নতুন পরিকল্পনা করতে হচ্ছে। পুরো পরিস্থিতি স্বাভাবিক হোক। তারপর কাজকর্ম নিয়ে ভাবা যাবে।

চলচ্চিত্রের মানুষ আপনি, আপনার কাছ থেকে চলচ্চিত্র নিয়ে স্বপ্নের কথা শুনতে চাই।
চলচ্চিত্রজীবনের শুরুতে ভাবনায় ছিল, আমাকে একটা অবস্থানে যেতে হবে। কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। অবশেষে দেশে ও দেশের বাইরে মানুষের কাছ থেকে ভালো সাড়া পেয়েছি, তারকাখ্যাতি তৈরি হয়েছে। এখন মনে হয় আন্তর্জাতিকভাবেও একটা বড় জায়গায় যাওয়া উচিত। মানুষ যাতে বলতে পারে, শাকিব খান কিছু করে তো গেছে।