করোনা-আতঙ্কে এবার বাবার কবরের সামনে যাওয়া হয়নি

প্রতীক ও প্রীতম এবার বাবার সমাধিতে যেতে পারেননি। ছবি: সংগৃহীত
প্রতীক ও প্রীতম এবার বাবার সমাধিতে যেতে পারেননি। ছবি: সংগৃহীত

‘যে প্রেম স্বর্গ থেকে এসে জীবনে অমর হয়ে রয়’। প্রতীক হাসানের মুঠোফোনে কল করলে রিংটোন হিসেবে বেজে ওঠে গানটি। সঙ্গে সঙ্গে মনে পড়ে যায় নব্বই দশকের সোনালি দিনগুলোর কথা। খালিদ হাসান মিলুর কণ্ঠে একের পর এক গান তখন হৃদয় ছুঁয়ে যাচ্ছে শ্রোতাদের। প্লেব্যাকে অতুলনীয় জায়গা করে নিয়েছিলেন মিলু। কিন্তু সেই জায়গায় বেশি দিন থাকতে পারেননি। ২০০৫ সালের ২৯ মার্চ তাঁকে সাড়া দিতে হয় ওপারের ডাকে। মিলু চলে গেলেও রেখে গেছেন অসংখ্য শ্রুতিমধুর গান। আর রেখে গেছেন দুই কণ্ঠশিল্পী পুত্র। একজন প্রতীক হাসান, আরেকজন প্রীতম হাসান।

গতকাল মিলুর মৃত্যুদিনটি কীভাবে কাটল শিল্পী পরিবারের? মিলুর বড় ছেলে প্রতীক হাসান জানালেন, প্রতিবছরই এতিমখানায় প্রায় ২০০ লোককে খাওয়ানো হয় তাঁদের পরিবারের পক্ষ থেকে। সেখানে পবিত্র কোরআন খতম দেওয়ানো হয়। এ বছর করোনা পরিস্থিতির কারণে এতিমখানায় যাওয়া তাঁদের পক্ষে সম্ভব হয়নি। বাড়িতেই বাবার জন্য দোয়া করেছেন দুই ভাই ও তাঁদের মা। প্রতিবার মীরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে বাবাকে দেখতে যান তাঁরা। এ বছর করোনার কারণে বাবার কবরের সামনে গিয়ে দোয়া করার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হলেন প্রতীক ও প্রীতম।

প্রতিবছরই খালিদ হাসান মিলুর মৃত্যুদিনে ঘনিষ্ঠ বন্ধুরা ফোনে খোঁজখবর নেন। যাঁদের মধ্যে হানিফ সংকেত, অ্যান্ড্রু কিশোর, কুমার বিশ্বজিতের কথা বললেন প্রতীক। তাঁরাই ছিলেন প্রয়াত শিল্পীর ঘনিষ্ঠজন।

একই রকম অনিশ্চয়তায় দিন কাটছে কণ্ঠশিল্পী প্রতীকেরও। করোনার কারণে ১০টির মতো স্টেজ শো বাতিল হয়েছে তাঁর।

মুজিব বর্ষ ও স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে একাধিক শো ছিল তাঁর। সেগুলো বাতিল হয়ে যাওয়ায় শো করতে পারেননি। অস্ট্রেলিয়ায় শোয়ের কথা ছিল ১১ এপ্রিল। সেই শো বাতিল হয়ে গেছে। মেলবোর্ন ও সিডনি—এই দুটি শহরে গান গাওয়ার কথা ছিল। মাইক্রোফোন হাতে নেওয়ার সুযোগই হলো না প্রতীকের। আগামী মাসের ২৮ ও ২৯ তারিখ শোর শিডিউল ছিল জাপানে। মাসখানেক বাকি থাকতেই সেই শো বাতিল হয়ে গেছে। জাপানে আর যাওয়া হচ্ছে না তাঁর।

এভাবে রমজানের আগে পর্যন্ত প্রচুর শো ছিল তাঁর। সেগুলো বাতিল হয়ে গেছে। বছরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শো হয়ে থাকে পয়লা বৈশাখে। এবার সেই শো পুরোপুরি অনিশ্চিত। সব মিলিয়ে এলোমেলো হয়ে গেছে শিল্পীর জীবনযাত্রা। আগে নিজের হোম স্টুডিওতে চুটিয়ে কাজ করতেন। বাইরে প্রোগ্রাম না থাকলে ঘরে থেকেও সৃষ্টিশীল কাজে ব্যস্ত থাকতে পারতেন। নতুন কোনো সুর বাঁধতে পারতেন। এখন এমনকি হোম স্টুডিওতে কাজ করতে পারছেন না দুশ্চিন্তায়।

‘দিনে দিনে অবস্থা খারাপ হচ্ছে। কোথায় এর শেষ কেউ জানি না। এ অবস্থায় গান তৈরি করা যায় না। ১৫ তারিখ থেকে হোম কোয়ারেন্টিনে আছি। আমরা পুরো পরিবার বাসা থেকে বের হচ্ছি না। প্রচুর শো বাতিল হয়ে গেছে। সেসব নিয়ে চিন্তাও করছি না। চিন্তা শুধু করোনা পরিস্থিতি কবে ঠিক হবে। অথচ কেউ জানে না কবে এ অবস্থার শেষ হবে। কখনোই বড় বিপদে আল্লাহ বাংলাদেশকে ফেলেননি। দোয়া করি, এবারও আমরা এ বিপদ থেকে যেন পরিত্রাণ পাই’—প্রতীকের আকুতি।