লক্ষণ দেখা দিলে ডাক্তারের কাছে চলে আসেন, পালিয়ে বেড়াবেন না

অভিনেতা ও চিকিৎসক এজাজুল ইসলাম। ছবি: প্রথম আলো
অভিনেতা ও চিকিৎসক এজাজুল ইসলাম। ছবি: প্রথম আলো
>

বিনোদন অঙ্গনে ডা. এজাজ নামে পরিচিত জনপ্রিয় অভিনেতা এজাজুল ইসলাম। দীর্ঘদিন চিকিৎসা সেবা দেওয়ার পর নিউক্লিয়ার মেডিসিনের বিশেষজ্ঞ এই চিকিৎসক এখন অবসরের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। গতকাল ন্যাশনাল ডক্টরস ডে উপলক্ষে করোনা-পরিস্থিতি নিয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিউক্লিয়ার মেডিসিন বিভাগের সদ্য সাবেক বিভাগীয়প্রধান এই চিকিৎসক।

কেমন আছেন? কীভাবে সময় কাটাচ্ছেন?
ভালো আছি। সারাক্ষণ টেলিভিশনের সামনে বসে থাকছি, খবর দেখছি। নাটক লেখার চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু দেশ ও বিশ্বের এই পরিস্থিতে সেটা সম্ভব হচ্ছে না। কী হবে সেই আতঙ্ক ও দুশ্চিন্তায় লেখা হয় না। গাড়িঘোড়া চলছে না বলে বের হতেও পারছি না।

আমরা কি করোনাকে জয় করতে পারব?
আশা রাখতে হবে। আমি আশা রাখি। আমি ডাক্তারীজীবন শুরু করেছিলাম মফস্বল থেকে। শেষের দিকে ঢাকা মেডিকেলে কাজ করেছি। ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই দেখে আসছি, আমাদের ডাক্তাররা ভীষণ নিবেদিতপ্রাণ। কিন্তু তাঁরা নিবেদিত হলেই চলবে না, রোগীদেরও সচেতন হতে হবে। ধরা যাক আমাদের দেশে ডায়রিয়া এক সময় ভয়াবহ রূপ নিয়েছিল। আমরা সেই পরিস্থিতি মোকাবিলা করেছি। করোনাও মোকাবিলা করতে পারব।

দীর্ঘদিন চিকিৎসা সেবা দেওয়ার পর নিউক্লিয়ার মেডিসিনের বিশেষজ্ঞ এই চিকিৎসক এখন অবসরের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ছবি: ফেসবুক থেকে
দীর্ঘদিন চিকিৎসা সেবা দেওয়ার পর নিউক্লিয়ার মেডিসিনের বিশেষজ্ঞ এই চিকিৎসক এখন অবসরের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ছবি: ফেসবুক থেকে


আপনার চাকরিজীবনে এ রকম পরিস্থিতি আর কখনো মোকাবিলা করেছিলেন?
অনেকগুলো ডায়রিয়ার মহামারি আমি ফেস করেছি। নৌকায় করে ঘুরে ঘুরে চিকিৎসা দিয়েছি। কলেরার স্যালাইন, ওরাল স্যালাইন নিয়ে ঘুরেছি, চিকিৎসা দিয়েছি। এমন দিনও গেছে সারা দিন খাবার পাইনি, রোগীদের জন্য যে স্যালাইন ছিল নিজেদের কাছে, সেগুলোই খেয়েছি। মনে পড়ে, প্রচণ্ড বৃষ্টির ভেতরে রোগী আছে রোগী আছে চিৎকার করছিল লোকে। আমরা নৌকা ভিড়িয়ে দেখি রোগীটা চলেই যাবে। তাঁদের চিকিৎসা দিয়েছি, পুরোপুরি সুস্থ না হলে বাড়িতে ফিরিনি। সেসব দৃশ্য চোখে না দেখলে কেউ বিশ্বাস করতে পারবে না।

সম্প্রতি বিদেশ থেকে ফিরে আসা প্রবাসীদের কী পরামর্শ দেবেন? তাদের ফেরার দিনটার কথা আপনার মনে আছে?
বিদেশ থেকে প্রবাসীরা যেদিন ফিরলেন, আমি তখন টেলিভিশনের সামনে বসা। বুকটা দুরুদুরু করছিল। মনে মনে ভাবছিলাম, তাঁদের ছেড়ে দিলেই সর্বনাশ হয়ে যাবে। তাঁরা এত রাগারাগি করছিলেন যে, কেউ সিদ্ধান্ত নিতে পারছিল না কী করা উচিত। আমার ছেলে-মেয়েরাও ডাক্তার। তাঁরাও আমার সঙ্গে বসে বিষয়টা দেখছিল। কিন্তু প্রবাসীদের যখনই ছেড়ে দেওয়া হলো, তখনই আমার বুকের ভেতরটা ধপাস করে উঠল। কারণ, তাঁরা যেখান থেকে ফিরেছেন, সেখানে এই রোগটা সম্পর্কে তাঁদের ধারণা দেওয়া হয়নি। দিক নির্দেশনা দেওয়া হয়নি যে, দেশে গিয়ে কীভাবে থাকবেন। দেশে আসার পর কোনো দিকনির্দেশনা দেওয়ার সময়ও তাঁরা দেননি। মন্ত্রী মহোদয়কে বলতে শুনেছি, তাঁরা মারমুখী হয়ে উঠেছিলেন। এটা কোনো দায়িত্বপূর্ণ আচরণ নয়। এখনো তাঁরা দায়িত্বপূর্ণ আচরণ করছেন না। তাঁদের উচিত ছিল বাড়ি ফিরে একা থাকা। এখন পুলিশ তাঁদের বাড়িতে যাচ্ছে সতর্ক করার জন্য, তাঁরা পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। অথচ আলাদা থাকলেই ভাইরাস ছড়াত না। আমার কথা হচ্ছে, আপনাদের রেমিট্যান্সের টাকায় দেশ উপকৃত হচ্ছে। আপনারা আমাদের জন্য অনেক কিছু করেন। এত উপকার করে শেষে পুরো জাতিকে খুন করবেন না।

বিনোদন অঙ্গনে ডা. এজাজ নামে পরিচিত জনপ্রিয় অভিনেতা এজাজুল ইসলাম। ছবি: ফেসবুক থেকে
বিনোদন অঙ্গনে ডা. এজাজ নামে পরিচিত জনপ্রিয় অভিনেতা এজাজুল ইসলাম। ছবি: ফেসবুক থেকে

এখন তাঁরা কী করবেন? আমরা সাধারণ মানুষেরা কী করতে পারি?
যাঁরা বিদেশ থেকে এসেছেন, তাঁদের উচিত নিজ দায়িত্বে আলাদা থাকা। আড্ডা দিতে বাইরে যাবেন না। এটা খুব কঠিন কিছু না, কেবল আবেগটা সামলাতে পারলেই সেটা সম্ভব। নয়তো পরিবার ও দেশের মানুষ আপনাদের কারণে মারা যাবে। লাখ লাখ মানুষকে খুঁজে খুঁজে বের করে পৃথক করে রাখা সম্ভব না। স্বাভাবিকভাবেই আমাদের হাতটা নাকেমুখে চলে যায়। শুরুতেই সেটা রোধ করতে একটু অসুবিধা হবে। একটু প্র্যাকটিস করলেই এটা রোধ করা সম্ভব। আর করোনারভাইরাসের লক্ষণ দেখা দিলে ডাক্তারের কাছে চলে আসেন। পালিয়ে বেড়াবেন না, ভয়ের কিছু নেই। নিজেকে অপরাধী ভাববেন না। করোনা ভাইরাসে প্রিভেনশনই প্রধান কাজ। দেশের সব মানুষের প্রতি পরামর্শ হচ্ছে কমপক্ষে ৩ ফুট দূরত্ব বজায় রাখেন। হাত ২০ সেকেন্ড ধরে সাবান দিয়ে ভালোভাবে ধুতে হবে বা অ্যালকোহলযুক্ত স্যানিটাইজার দিয়ে মুছতে হবে।

করোনার পর আমাদের অভ্যাস বদলাবে?
অবশ্যই। এই ধাক্কার পর আমরা পরিচর্যার বিষয়ে সচেতন হব। এ রকম এক একটা ধাক্কা থেকেই মানুষ শেখে। বারান্দায় দাঁড়ালেই দেখি মানুষ মাস্ক পরে ঘুরছে। মানুষ এখন হাত পরিষ্কার রাখছে। এই অভ্যাসটা আমাদের থেকে যাবে। ডায়রিয়া হলে ওরস্যালাইন খাওয়ার কথা এখন আর কাউকে বলে দিতে হয় না। একজন রিকশাচালকও ডায়রিয়া হলে চট করে স্যালাইন খেয়ে নেন। আমাদের দেশের মানুষকে স্যালাইনকে খাওয়ানো শেখাতে আমাদের অনেক সময় লেগেছে।

প্রথম আলোর ক্যাফে লাইভ অনুষ্ঠানে এজাজুল ইসলাম। ছবি: প্রথম আলো
প্রথম আলোর ক্যাফে লাইভ অনুষ্ঠানে এজাজুল ইসলাম। ছবি: প্রথম আলো

অবসরে গেলে কী করবেন?
আগে অফিস, চেম্বার ও অভিনয় করতাম। অবসরের পর সকালে চেম্বার, বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত শুটিং করব ঠিক করেছি। প্রয়োজন হলে চেম্বারে বেশি সময় দেব, শুটিংয়ে কম সময় দেব।