দেখতে পারেন ভিন্ন ভিন্ন স্বাদের তিন সিনেমা

এ তিনটি সিনেমা দেখতে পারেন ঘরে বসে। ছবি: সংগৃহীত
এ তিনটি সিনেমা দেখতে পারেন ঘরে বসে। ছবি: সংগৃহীত

জিন সেবার্গের জন্ম যুক্তরাষ্ট্রে, কিন্তু বিখ্যাত হলেন ফ্রান্সে গিয়ে। আরও এক পা এগিয়ে বলা যায়, ফ্রান্সের কিংবদন্তি চিত্রনির্মাতা জাঁ লুক গদার বিশ্বচলচ্চিত্রে তাঁকে অমর করে রাখলেন। ব্রেথলেস ছবিতে তিনিই কিনা প্রধান নারী চরিত্রে। এই জিনকে নিয়েই ‘সেবার্গ’ নামে ছবি হয়ে গেল গত বছর।

কী এমন জীবন অভিনয়ে সমর্পিত এই নারীর? তখন ষাটের দশক। নিজেদের অধিকার আদায় করার জন্য কালো মানুষেরা নেমে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্রের রাস্তায়। সেই আন্দোলনে ব্ল্যাক প্যান্থার দলের নেতা হাকিম জামালের পাশে দাঁড়িয়ে সমর্থন দিলেন জিন। কালোদের প্রতি তাঁর সমর্থন পৌঁছালো অর্থায়নে। হাকিম জামালের সঙ্গে পরিচয় পৌঁছাল টানাপোড়েনে ভরা প্রণয়ে। আর গন্ধ শুঁকে শুঁকে এর মধ্যে ঢুকে পড়ল এফবিআই। মন ও জীবন ছিন্নবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ল জিনের।

এক ঐতিহাসিক সামাজিক আন্দোলনের পটে কয়েকটি সত্যিকারের চরিত্র নিয়ে এ ছবি বানিয়েছেন বেনেডিক্ট অ্যান্ড্রুজ। জিন সেবার্গের চরিত্রে ক্রিস্টেন স্টুয়ার্ট তাঁর অনুরাগীদের জন্য উপরি পাওনা। ২০১৯ সালের নানা নাম জানা ছবির আড়ালে পড়ে যাওয়া এ ছবির স্বাদ ছিল আলাদা।

রক্ত বলকিয়ে দেওয়া রুদ্ধশ্বাস থ্রিলারের দেখা নেই বলে যাঁরা মাথা কুটছেন, তাঁদের জন্য এবার আছেন লুক বেসোঁ। বক্স অফিসের বাক্স ফাটিয়ে দেওয়া এই পরিচালক এবার নিয়ে এসেছেন আনা নামে পারমাণবিক বোমার মতো মেয়েকে। যাঁরা এর আগে তাঁর লা ফাম নিকিতা বা লুসি দেখেছেন, তাঁরা জানেন লুক বেসোঁর নারী মানেই বিধ্বংসী ঘূর্ণিবাত্যা। দুর্বলা থেকে ক্রমশ প্রবলা।

‘সেবার্গ’ সিনেমার একটি দৃশ্য। ছবি: সংগৃহীত
‘সেবার্গ’ সিনেমার একটি দৃশ্য। ছবি: সংগৃহীত

আনা ছবির নিগৃহীতা মেয়েটির গল্পও তা–ই। ছেলেবন্ধুর নিগ্রহ থেকে কেজিবির নজরে। এরপর গোয়েন্দা কারবারে অপ্রতিরোধ্য খুনী। সেখান থেকে আবার সিআইয়ের খপ্পরে। কিন্তু শেষটা? সেটা ঘরে বসে দেখুন। এ গল্পের পর্বে পর্বে মোচড়। যা এখন মনে হচ্ছে নিতান্ত সরল, সময়ের আগুপিছুতে তা–ই হয়ে ওঠে কূটজালে ঢাকা। এবং শেষটাও হলিউডের চিরাচরিত ছকের কিছুটা বাইরে যাওয়ার চেষ্টা। ছবির মাঝখানে ওঠার ফুরসত পাবেন না। খাদ্য–পানীয় সঙ্গে নিয়ে বসুন।

কিন্তু সারা দুনিয়া মিলে গত বছরের সেরা ছবি কোনটা? কী, প্যারাসাইট? ঠিক আছে। তবু অনুরোধ করব, স্পেন থেকে বানানো চলচ্চিত্রকার পেদ্রো আলমোদোভারের পেইন অ্যান্ড গ্লোরি ছবিটি দেখুন। এরপর নিজের বিবেচনা নিজে করুন।

‘পেইন অ্যান্ড গ্লোরি’র একটি দৃশ্য। ছবি: সংগৃহীত
‘পেইন অ্যান্ড গ্লোরি’র একটি দৃশ্য। ছবি: সংগৃহীত

যাঁরা টাই মি আপ, টাই মি ডাউন, অল অ্যাবাউট মাই মাদার কিংবা টক টু হার দেখেছেন, তাঁরা জানেন পেদ্রো আলমোদোভার কীভাবে কাঁচা আবেগ পাকা বাঁধনে ছবিতে বাঁধতে পটু। ‘পেইন অ্যান্ড গ্লোরি’ যেন তাঁর আত্মগাথা। এ ছবিতে আছে তাঁর চিরকালের প্রিয় আন্তোরিও বান্দেরাস আর পেনেলোপে ক্রুজ। কিন্তু দিব্যি দিয়ে বলা যায়, এই আন্তোনিও বান্দেরাসকে আপনি চেনেন না। এ ছবির গল্প গর্বিত এক চলচ্চিত্রকারে বেদনাচ্ছন্ন জীবন। এই ব্যথা আক্রান্ত শরীরের, অতীতের ছিন্ন সম্পর্কের, সৃষ্টিশীল সংকটের। মন, শরীর ও সৃজনশীলতার ব্যথায় কাতর চিত্রনির্মাতার চরিত্রে অভিনেতা হিসেবে আন্তোনিও নিজেকে অপরিসীম যত্নে নিজেকে পুনর্নির্মাণ করেছেন। গত বছর সিনেমাবোদ্ধারা ধন্য ধন্য করেছেন তাঁকে। কানে সেরা অভিনেতার পুরস্কারটাও এ ছবির জন্য ন্যায্যভাবেই হাতে নিয়েছেন।
গত বছর মুক্তি পাওয়া আলাদা আলাদা স্বাদের ছবি তিনটি দেখুন। একা নয়, পরিবারের সদস্যদেরও সঙ্গে নিয়ে বসুন।