হলিউড নয়, 'টুমরো' বানিয়েছে বাংলাদেশ

টুমরো ছবির একটি দৃশ্য। ছবি: সংগৃহীত
টুমরো ছবির একটি দৃশ্য। ছবি: সংগৃহীত

আজ থেকে ১৭৭ বছর আগের ঘটনা। ব্রিটিশ লেখক চার্লস ডিকেন্স ১৮৪৩ সালে লিখেছিলেন ‘আ ক্রিসমাস ক্যারোল’। ডিকেন্স বিশ্বকে বিদায় বললেন ১৮৭০ সালে। তাঁর মৃত্যুরও ১০১ বছর পর এই উপন্যাস নিয়ে অ্যানিমেশনে শর্টফিল্ম বানালেন রিচার্ড উইলিয়ামস। ছবিটি অ্যানিমেশনে তৈরি সেরা স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র বিভাগে ১৯৭২ সালে জিতে নিল অস্কার। মূলত এই ছবিটি দেখেই ‘টুমরো’ বানানোর আইডিয়া মাথায় এল কাজী জিসান হাসানের। তিনি কে? তিনি এই ছবির প্রযোজক কাজী জাহিন হাসানের যমজ ভাই। মূলত এই দুই ভাইয়ের ইচ্ছাতেই নির্মিত হয় ‘টুমরো’।

যাঁদের মস্তিষ্কে, মনে, হাতে নির্মিত হলো ‘টুমরো’
২৫ মিনিট ৫১ সেকেন্ডের এই ছবিটির প্রযোজকের নাম তো আগেই বলা হলো। পরিচালনা করেছেন মো. শিহাব উদ্দিন। এর আগে তিনি ইউএনএফপিএর অ্যানিমেশন সিরিজ ‘শাহানা’ বানিয়েছেন। আর তারও আগে প্রোডাকশান ম্যানেজার হিসেবে ‘মীনা’ কার্টুনের চারটি এপিসোডের প্রোডাকশন ডিজাইনের সার্বিক দায়িত্বে ছিলেন। পুরো কাজটি দুই বছরের বেশি সময় ধরে বানানো হয়েছে সাইকোর স্টুডিওতে (পড়ুন ল্যাবরেটরিতে)। এই স্টুডিওর প্রতিষ্ঠাতা মুরাদ আবরার। তিনি ইউনিভার্সিটি অব ফ্লোরিডা থেকে দুনিয়ার তাবৎ বিষয় ফেলে অ্যানিমেশন নিয়ে পড়াশোনা করেন। তারপর পড়াশোনার পাট চুকিয়ে হলিউডে কিছুকাল কাজ করেন, একদিন বাক্স পেটরা গুছিয়ে দেশে ফিরে আসেন। বানান নিজের স্টুডিও, সাইকোর। সেখানেই গড়ে ১৫ জনের একটি দল দিন–রাত এক করে বাকি বিশ্ব ভুলে গিয়ে দাঁড় করিয়েছে ‘টুমরো’।

টুমরোর পরিচালক মো. শিহাব উদ্দিন। ছবি: দীপু মালাকার
টুমরোর পরিচালক মো. শিহাব উদ্দিন। ছবি: দীপু মালাকার

২০১৫ তে শুরু হলো
আরও স্পষ্টভাবে বললে ২০১৫ সালের নভেম্বর মাসের ২০ তারিখ। সেদিনই ‘টুমরো’র চিত্রনাট্যের প্রথম ড্রাফট হাতে পেলেন শিহাব। আর পড়েই চোখ ছানাবড়া। কারণ, এই সিনেমার বিষয় নয় রূপকথার গল্প, নয় প্রেম, নয় কেবলই শিশুতোষ অথবা কল্পনা। এর বিষয় এই মুহূর্তের গুরুত্বপূর্ণ বৈশ্বিক আলোচনা, জয়বায়ু পরিবর্তন। শুরু হলো চিত্রনাট্য ‘পলিশ’ করার কাজ। ২ বছর ধরে চলল চিত্রনাট্য দাঁড় করানোর কাজ। অনেক চরিত্র হাওয়ায় মিলিয়ে গেল পাণ্ডুলিপি থেকেই। অনেক চরিত্রের ব্যাপ্তি ছোট হলো। আরও স্পষ্ট হলো। কারণ, ভিত গভীর আর শক্ত না হলে তো দালান দাঁড়াবে না। তারপর ২০১৭ সালের এক শুভদিনে শুরু হলো চিত্রনাট্যকে ঘটিয়ে অ্যানিমেশন ফিল্মে রূপান্তরের কাজ। ২০১৭ সালের ২০ জুলাই থেকে ২০১৯ সালের ৩১ জুলাই পর্যন্ত চিত্রনাট্য থেকে নির্মিত হলো ‘টুমরো’।

লেটস ডু ইট
২০১৩ সালে থ্রিডিতে অ্যানিমেশন বানানোর লক্ষ্য নিয়ে যাত্রা শুরু করল সাইকোর। ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশের অ্যানিমেশন স্টুডিওগুলো মিলে একটি মেলা করল। নাম অ্যানিমেলা। সেখানে দেখানোর জন্য সাইকোর স্টুডিও ৩ দিন ২৪ ঘণ্টা করে একটানা ৭২ ঘণ্টা স্টুডিওতে কাজ করে ১ মিনিটের একটা শর্টফিল্ম বানায়। এই শর্টফিল্ম আর তার আগে তাদের আরেকটি কাজ ‘প্রোজেক্ট নেনোবট’–এর কাজ দেখেই পরিচালক শিহাব উদ্দিন তাদের সঙ্গে কাজ করার আগ্রহ দেখান।

এর আগে ‘টুমরো’ ফিল্মটি আসলে টুডিতে হওয়ার কথা ছিল আর সেভাবেই এগিয়ে যাচ্ছিল। একপর্যায়ে পরিচালকের মনে হলো, ছবিটি টুডিতে না করে থ্রিডিতে করলে কেমন হয়? কারণ এর আগে অনেকগুলো শর্টফিল্ম টুডিতে বানানো হয়েছে। তাই নতুন কিছু করার দরকার অনুভব করছিলেন পরিচালক। আর তখনই খুঁজে বের করলেন সাইকোর প্রতিষ্ঠাতা মুরাদ আবরারকে। বললেন, ‘টুমরো’র চিত্রনাট্যের কথা। সব শুনে চোখে ঝিলিক দিয়ে উঠল মুরাদের। কারণ, এর আগে বাংলাদেশে কেউ অ্যানিমেশনে এত বড় দৈর্ঘ্যের কনটেন্ট বানানোর কথা ভাবেইনি। আর বিষয় আবার পরিবেশ রক্ষা, যেটি এই মুহূর্তে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও বিশ্বআলাপের বিষয়। আর এ ধরনের কাজ করার সুযোগ অনেক বছরে একবার আসে। তিনি সাগ্রহে সম্মতি জানিয়ে বললেন, ‘এই চ্যালেঞ্জটা আমি, আমরা নিতে চাই। লেটস ডু ইট।’

টুমরো ছবির একটি দৃশ্য। ছবি: সংগৃহীত
টুমরো ছবির একটি দৃশ্য। ছবি: সংগৃহীত

২৫ মিনিট ৫১ সেকেন্ড
১৫ জনের দল। দলে মাত্র দুজন অ্যানিমেটর। ‘অভিনেতা’ মূলত ছিলেন একজন। আরেকজন সহকারী। তাঁরা মিলে বানিয়ে ফেলেছেন ছোট আকারের এই ‘ফিচার ফিল্ম লুকের’ শর্টফিল্ম। অ্যানিমেশনে প্রতি সেকেন্ডে ২৪ ফ্রেম লাগে। আর প্রতিটা ফ্রেম (বানাতে সময় লাগে ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা) রেন্ডার দিতে সময় লাগে ৩০ থেকে ৪০ মিনিট। সব মিলিয়ে কেবল কম্পিউটারের প্রসেসর চলেছে চার হাজার ঘণ্টা। (১৫ মাস লেগেছে কেবল) অনেক দিন সময় লেগেছে বরফ ভাঙার দৃশ্য করতে। ৩ সেকেন্ডের একটা শট। ভাঙা হলো, ভাঙলে স্বাভাবিক দেখায় না। শেষ ছয় মাসে শেষ হয়েছে অর্ধেকের বেশি কাজ। প্রায় সোয়া ১ বছর পর তৈরি হলো ১ মিনিট ৫২ সেকেন্ডের ট্রেইলার। (সুদূর মার্কিনমুলুক থেকে) তা দেখে প্রযোজক মুগ্ধ। বুঝলেন, কল্পনা ছাড়িয়ে গেছে তাঁদের বাস্তবতা। অ্যানিমেশন শিল্পীরা প্রথমবার নিজেদের কাজ দেখলেন। শিহরিত হলেন। নিশ্চিত হলেন, কিছু একটা হচ্ছে। এরপর কাজ এগিয়েছে বেশ দ্রুত। শেষ হয়েছে। নিরবচ্ছিন্ন ভালোবাসা পেয়েছেন দর্শকদের। পরিচালক শিহাব উদ্দিন অবশ্য মজা করে, কিছুটা আত্মতৃপ্তির সুরে বললেন, ‘আমার বয়স হয়েছে। বুড়ো হয়ে গেছি, কবে মরে যাব। একটা কাজ করে যেতে চেয়েছিলাম। মৃত্যুর পর যেটা দিয়ে মানুষ আমাকে বাকি জীবন মনে রাখবে।’ দীপ্ত টিভির মালিক ও প্রযোজক কাজী জাহিন হাসান বলেন, ‘আমরা তো অনেক কাজ করি। কিন্তু তাতে নিজেদের বা আশেপাশের জন্য কতটুকুই বা করতে পেরেছি...বলতে পারেন সামাজিক দায়বদ্ধতা আর ‘ভ্যালু’ যোগ করার জন্য থেকেই এই কাজটা করা।’

প্রথম আলো কার্যালয়ে টুমরো ছবির পরিচালক, প্রযোজক ও অ্যানিমেটর। ছবি: দীপু মালাকার
প্রথম আলো কার্যালয়ে টুমরো ছবির পরিচালক, প্রযোজক ও অ্যানিমেটর। ছবি: দীপু মালাকার

কত টাকা লাগল
প্রযোজকের কাছে প্রশ্নটা ছুড়ে দিলে বিরস উত্তর এল, ‘এই বিষয়ে কিছু বলতে চাই না।’ হাল ধরলেন পরিচালক। শিহাব বললেন, খুব ছোট একটা স্টুডিও চালানো হয়েছে ২ বছর ১০ দিন। ১ কোটি লেখা আছে বটে, খরচ সেটা ছাড়িয়ে গেছে।

ধন্যবাদ প্রাপ্য যাঁদের
‘টুমরো’ দল সকালে অফিসে এসে সারা দিন অফিস করে রাতে গিয়ে আর্টিস্টরা ভাবতেন। সমস্যা নিয়ে, চরিত্র নিয়ে, টেকনিক্যাল নানা ঝামেলা নিয়ে। শুধু তা–ই নয়, কোথাও আটকে গেলে দেশের বাইরের অ্যানিমেটরদের সঙ্গে যোগাযোগ করে পরামর্শ করে নিতেন তাঁরা, বিশেষ করে মুরাদ আবরার। মুরাদের ভাষায়, ‘আমরা এমন সব জায়গায় আটকে গিয়েছি যে ইউটিউবে ওই সমস্যা পর্যন্ত পৌঁছায়নি। তার অনেক আগেই শেষ হয়েছে টিউটোরিয়াল। অর্থ খরচ করে সাবস্ক্রাইব করা অনলাইন ক্লাসগুলোতেও নেই। পরে বাইরের আর্টিস্টদের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করি। সবারই তো কাজের কিছু টেকনিক, গোপনীয়তা থাকে। বলতে চান না। তবে অনেকে অনেক সাহায্য করেছেন, তাঁদের ধন্যবাদ। আর যে শিল্পীরা দিন–রাত খেটে সব পাইপলাইন বের করতে সাহায্য করেছেন, তাঁদের সবাইকে ধন্যবাদ। তাঁদের নিরন্তর লেগে থাকা, কঠোর পরিশ্রম ছাড়া ‘টুমরো’ সম্ভব হতো না।

প্রথম আলোর সঙ্গে আলাপনে মুরাদ আবরার, মো. শিহাব উদ্দিন, কাজী জাহিন হাসান। ছবি: দীপু মালাকার
প্রথম আলোর সঙ্গে আলাপনে মুরাদ আবরার, মো. শিহাব উদ্দিন, কাজী জাহিন হাসান। ছবি: দীপু মালাকার

সবচেয়ে বড় ৩ চ্যালেঞ্জ
১. সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো অ্যানিমেশনে চরিত্রের ইমোশন তৈরি। আর তাদের প্রধান দর্শক হলো বাচ্চারা। সব সময় একটা ভয় কাজ করত তাঁদের। এই ভেবে যে বাংলাদেশের বাচ্চাদের চোখ, মন ডিজনি, পিক্সার মুভি দেখে অভ্যস্ত। তাই এমন কন্টেন্ট দিতে হবে যেটা তারা খুব আগ্রহ নিয়ে দেখে। বাতিল না করে দেয়। কন্টেন্ট, লুক যদি ভালো না হয়, তাহলে আমাদের বাচ্চারা এটি দেখবে না।

‘আর না দেখলে আমাদের সব পরিশ্রমই বৃথা। চ্যালেঞ্জে হেরে গেলাম। সে জন্য প্রতিটি শট ধরে ধরে কাজ করা। যতটুকু সুন্দর সম্ভব, প্রায় ততটুকুই করা। যত দিন রিসার্চ করা প্রয়োজন, করেছি। কাজে ছাড় দিইনি একচুলও। সে জন্যই কাপড়, চুল সবকিছুতেই আমাদের নজর ছিল। কীভাবে বাতাসে উড়বে, হাঁটার বা দৌড়ানোর সময় কীভবে নড়াচড়া করবে, সবকিছু।’ বলছিলেন শিহাব। সিনেমাটি কল্পনায় দেখতে পাওয়া আর অ্যানিমেশনে সেটা বানানো, এই দুইয়ের মাঝে অনেক রাস্তা হাঁটতে হয়। যেমন প্রযোজক যোগ করলেন, ‘চিত্রনাট্যে লেখা, আন্দোলনের দৃশ্য। এটুকুই। এই দুই শব্দ বানাতে আমাদের সপ্তাহের পর সপ্তাহ লেগে গেল।’ মুরাদ আবার বললেন, পরিচালক নাকি এমনিতে চুপচাপ বসে থাকতেন, হঠাৎ এসে হয়তো তাঁকে বললেন, ‘এই দৃশ্যে আমার ৫০০ লোক লাগবে! আর আমাদের তো মাথায় হাত! আরে এত চেহারা কীভাবে বানাব, তাঁদের শরীরী ভাষা কেমন হবে?’

বাতাসের বুড়োর কথা শুনছে ছোট্ট রাতুল। ছবি: সংগৃহীত
বাতাসের বুড়োর কথা শুনছে ছোট্ট রাতুল। ছবি: সংগৃহীত

২. মুরাদের ভাষায়, ‘আমাদের আগে অ্যানিমেশনের ভালোর একটা নির্দিষ্ট মাপ ছিল। যে বাংলাদেশে তৈরি অ্যানিমেশন এ পর্যন্ত ভালো হতে পারে। আমরা সেটিকে অনেক ওপরে নিয়ে আসতে পেরেছি। নানা সীমাবদ্ধতা মেনে, উতরে, এখানে তুলে আনাটা একটা বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। এবার যাঁরা অ্যানিমেশনে ছবি বানাবেন, তাঁদের এখন এই উচ্চতার সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে হবে। বাংলাদেশে বসে, বাংলাদেশের তরুণদের দিয়ে এমন চেষ্টা করলে এ রকম একটা কিছু বানানো যায়, ‘টুমরো’ সেটাই প্রমাণ করল।’

৩. অ্যানিমেশনে কিন্তু দেখা যায় না, যে কী হচ্ছে বা কী দাঁড়াচ্ছে বিষয়টা। অ্যানিমেশনের কাজে অনেক অনেক ধাপ পার হয়ে এক একটা সিন তৈরি হয়। দিনের পর দিন ধরে সবাই কাপড় বানাচ্ছে, চরিত্র বানাচ্ছে, গাছ বানাচ্ছে, সেট বানাচ্ছে। কিন্তু কেউ কিছুই দেখতে পারছে না যে সবটা মিলে কী দাঁড়াল। দীর্ঘদিন ধরে কোনো আউটপুট ছাড়া কাজ চালিয়ে যাওয়া কিন্তু যথেষ্ট চ্যালেঞ্জিং। পরিচালক নাকি নিজেই হতাশ হয়ে পড়তেন মাঝে মাঝে। সেই সময়ে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল কাজটা শেষ করা। একসময় নাকি মনে হচ্ছিল, ‘টুমরো’ আর আসবে না, মানে শেষ হবে না এই কাজ। এত সময় ধরে সবাইকে উদ্বুদ্ধ রাখাই ছিল বড় চ্যালেঞ্জ।

বাচ্চারা এখন রাতুল হতে চায়

ইউটিউবে আজ পর্যন্ত ‘টুমরো’ দেখা হয়েছে ৬ লাখ ৮ হাজারবার। অবশ্য ‘পাইরেসি’ হয়ে অন্যান্য অসংখ্য অ্যাকাউন্ড থেকে আপলোড করা হয়েছে এই ভিডিও। সেগুলোরও ভিউ ছুঁয়েছে ছয় অঙ্ক। আর ইউটিউবে এই ভিডিওর নিচে জড়ো হওয়া প্রায় পাঁচ হাজার মন্তব্যে বেশির ভাগ দর্শক জানিয়েছেন, প্রাথমিকভাবে তাঁরা ভেবেছেন এটি হলিউডে বা নিদেনপক্ষে দেশের বাইরে তৈরি। ভাষান্তর করা হয়েছে মাত্র। ভুল ভাঙলে তাঁরা বিস্মিত হয়েছেন। অনেকে আবার ক্ষুব্ধ হয়ে লিখেছেন, এসব ভাইরাল হয় না। অন্যদিকে ভারতের মুম্বাইয়ের প্রায় ১ হাজার ৫০০ কর্মী সমৃদ্ধ একটা বড় স্টুডিও থেকে জানানো হয়, তাঁরা স্টুডিওর সবাই মিলে একসঙ্গে বসে দেখেছেন ‘টুমরো’। আর অভিনন্দন জানিয়ে বলেছেন, ‘আমরা এত বড় একটা স্টুডিও, আমরা এই ধরনের একটা কাজের কথা ভাবতে পারি না। তোমরা কীভাবে করলে?’ এই পরিচালক অবশ্য জানাননি যে তাঁরা মাত্র ১৫ জনে বানিয়ে ফেলেছেন ‘টুমরো’। দেশি–বিদেশি অনেক মন্তব্য পড়ছে। মানুষ লিখছেন তাঁদের কথা। শপথ করছে পরিবেশ বাঁচানোর। বাচ্চারা রাতুল হতে চাচ্ছে। এইটাই ‘টুমরো’র সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি।

পরিচালক শিহাব উদ্দিন, প্রযোজক কাজী জাহিন হাসান ও সাইকোরের প্রতিষ্ঠাতা, অ্যানিমেটর মুরাদ আবরার। ছবি: প্রথম আলো
পরিচালক শিহাব উদ্দিন, প্রযোজক কাজী জাহিন হাসান ও সাইকোরের প্রতিষ্ঠাতা, অ্যানিমেটর মুরাদ আবরার। ছবি: প্রথম আলো

দুটো সমালোচনা

এত প্রশংসার পুষ্পবৃষ্টির মাঝেও ‘টুমরো’ দল নিজেরাই সমালোচনা করল নিজেদের কাজের। প্রথমত, এই ছবিতে নেই কোনো নারী চরিত্র। ছিল, মূল প্রোটাগনিস্ট রাতুলের দাদি ছিল, ছিল বনবিবি। কিন্তু মূল গল্পের সঙ্গে এই চরিত্রগুলো তেমনভাবে জড়িত নয় বলে ছেঁটে ফেলা হলো। কেননা, অ্যানিমেশনে এক একটি চরিত্র তৈরি করা অত্যন্ত জটিল, সময় ও খরচসাপেক্ষ। বললাম, বাতাসের বুড়োকে তো বাতাসের বুড়িও বানিয়ে ফেলতে পারতেন? হাসির সঙ্গে উত্তর এল, তখন নাকি মাথায় আসেনি। এই গেল প্রথম সমালোচনা। আরেকটা হলো জলবায়ু পরিবর্তন রোধের ওপর নির্মিত এই ছবির শেষের দৃশ্যে দেখা গেল, আন্তর্জাতিক কনফারেন্স শেষ করে বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের উড়োজাহাজে চড়ে ম্যাগাজিন পড়তে পড়তে বাংলাদেশে ফিরল রাতুল। কিন্তু উড়োজাহাজ যে জীবাশ্ম জ্বালানিতে চলে! অথচ ছবিটা তো জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে বিশ্বকে রক্ষার আবেদনে তৈরি।

‘টুমরো’ বানিয়েছে বাংলাদেশ

বারবার ডিজনি বা হলিউডের সঙ্গে ‘টুমরো’র তুলনা চললেও মেরুদণ্ড সোজা রেখে পরিচালক বললেন, ‘আমরা ডিজনি বা বাইরের কোনো প্রোডাকশনের মতো বানাতে চাইনি ‘টুমরো’। সেটি সম্ভবও নয়। ডিজনি কত উচ্চতার, তা আমরা জানি। আমরা কেবল চেয়েছি, আমাদের হাজার সীমাবদ্ধতা নিয়ে একেবারে নিজস্ব একটা ফিল্ম তৈরি করতে। রাতুল যেন রাতুলের মতো হয়। বাংলাদেশের কাজ দেখে যেন বোঝা যায়, এটা বাংলাদেশের কাজ। সেখানে যেন আমাদের হাতের ছাপ থাকে। কাজ ভালো হোক, খারাপ হোক—কাজে যেন আমাদের নিজেদের ছাপ থাকে।’

সর্বশেষ আপডেট

এই ছবির বৈশ্বিক আবেদন দেখে এখন নানা ভাষায় ডাবিংয়ের পরিকল্পনা চলছে। ২৫টি ভাষায় সাব টাইটেল করা হবে। সম্প্রতি আটটি ভাষার সাব যোগ করা হয়েছে।